নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি জাতীয় পার্টির
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নানা টালবাহানা করে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়টা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় জাতীয় পার্টি যে কোনও কাÐ করতে পারে এমন আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের কাছে ৫০টি আসনে ছাড় চেয়েছে। জাতীয় পার্টির শর্ত দিয়েছে যে, আসনগুলোতে নৌকার কোনো প্রতীক থাকতে পারবে না। নৌকা প্রতীকের বদলে জাতীয় পার্টি তার লাঙ্গল প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করবে। এরকম একটি শর্ত নিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সরকারের আলোচনা হচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পঞ্চাশটি আসন দেওয়া তাদেরকে অসম্ভব। বরং, সরকার সর্বোচ্চ ২০টি আসন তাদেরকে ছেড়ে দিতে পারে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যারা নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন, যাদের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে, এ ধরনের প্রার্থীদেরকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। শুধুমাত্র সমঝোতার খাতিরে অযোগ্য এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্কহীন প্রার্থীদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনী এলাকায় যে জরিপ করেছে, সেই জরিপে জাতীয় পার্টির অবস্থান এবং আওয়ামী লীগের অবস্থান তুলনামূলক বিচার করছে এবং তার পরেই এই সমঝোতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। তবে কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতার আসন ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ একমত। ঐ নেতা জনপ্রিয় হোক না হোক, মহাজোটের স্বার্থে সেই আসনগুলো ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু জাতীয় পার্টির সমস্যা অন্য জায়গায়। আসন ভাগাভাগিতে হয়তো শেষ পর্যন্ত একটি দফারফা হবে। ৫০টি আসন না পাওয়া হোক জাতীয় পার্টি ২৫-৩০টি আসন পাবে, সেটি তাদের বড় সমস্যা নয়। জাতীয় পার্টির কাছে এখন মূল সমস্যা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যে সমস্ত জাতীয় পার্টির আসনে নৌকা প্রতীক ছেড়ে দেওয়া হবে, সেই সমস্ত আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকেও বসে যেতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছে যে, এটি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কোনও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসানোর দ্বায়-দায়িত্ব আওয়ামী লীগ নিতে পারে না। দ্বিতীয় যে সমস্যাটি দেখা দিয়েছে তাহলো- জাতীয় পার্টি ওই আসনগুলোতে অর্থাৎ যে আসনগুলোতে নৌকা প্রতীক থাকবে না, শুধু জাতীয় পার্টি থাকবে, সেই আসনগুলোতে নিশ্চিত জয়ের গ্যারান্টি চায়। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে খুশি করতে পারছে না। কারণ, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাউকেই জয়ী করার দায়িত্ব নেবে না। এই বার্তাটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে। কাজেই যারা প্রার্থী হবেন তাদেরকে বিজয়ের কোন গ্যারান্টি দেওয়ার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের নেই। আওয়ামী লীগ কৌশলগত কারণে প্রতিটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখতে চায়। শুধুমাত্র যদি জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকে এবং সেখানে যদি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী বা অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকে তাহলে সেই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হবে এবং ভোটাররা ভোটদানে উৎসাহিত থাকবেন না। ফলশ্রæতিতে যে ঘটনাটা ঘটবে, তাহলো এখানে ভোট হবে নিরুত্তাপ এবং ১০ শতাংশ বা তার কমের ভোট গ্রহণ হবে, যা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না, বিতর্কিত হবে। কিন্তু যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী বা বিদ্রোহী প্রার্থীরা থাকেন সেক্ষেত্রে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে জনগণ উৎসাহিত হবে এবং ভোট দেবে। কিন্তু জাতীয় পার্টির কাছে এ ব্যাপারে খবর আছে যে, স্বতন্ত্র প্রার্থী যখন দাঁড়াবেন এবং তারা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত এবং সেখানে যদি নৌকা প্রতীক না থাকে তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাজ করবেন, জাতীয় পার্টির পক্ষে কাজ করবেন না। এরকম পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির জয় অনেক আসনেই কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে এবং প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। এই অবস্থায় অনেকগুলো আসনে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর এই কারণেই জাতীয় পার্টির হুমকি দিয়েছে যে, তাদের যদি সম্মানজনক সমঝোতা না হয় তাহলে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে।তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় আছে। এই সময় পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনের মাঠে রাখার জন্য আওয়ামী লীগ সাধ্যমতো সবকিছুই করবে।