আজ রবিবার | ১০ আগস্ট ২০২৫ | ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৫ সফর ১৪৪৭ | সকাল ৮:৫৮

শেখ হাসিনার পলায়নে অস্তিত্ব সংকটে আ’লীগ

ডান্ডিবার্তা | ০৯ আগস্ট, ২০২৪ | ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতাকর্মী চলে গেছেন আত্মগোপনে। আওয়ামী লীগের নেতা, এমপি, সদ্য পদত্যাগী সরকারের মন্ত্রী যারা ছিলেন তাদের কে কোথায় কিভাবে আছে তা দলেরও কেউ জানেন না। কারো সঙ্গে কারো কোনো যোগাযোগ নেই। এক জনের খবর আরেক জন জানেন না। কারো সঙ্গে কারো যোগাযোগ হলেও তৃতীয় কেউ জানে না। যে যার মতো করে আত্মগোপনে রয়েছেন। প্রায় সবার মোবাইল ফোনও বন্ধ। আওয়ামী লীগের কর্মীদেরও একই অবস্থা। কেউ কারো খবর রাখতে পারছেন না। কেউ আর এখন দল নিয়ে ভাবছেন না। দলের ভবিষ্যৎ কি হবে, আওয়ামী লীগ অস্তিত্বে ফিরবে কি না সেটাও কেউ জানেন না। গত দুই দিনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে এ চিত্রই ধরা পড়েছে। গত সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর দলের নেতা, কর্মী, এমপি, মন্ত্রী পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ভয়ে, আতঙ্কে আত্মরক্ষার জন্য যে যার মতো করে গাঁ ঢাকা দেন। নারায়ণগঞ্জে এতদিন যারা দাপদের সাথে শহর চষে বেড়াতেন তাদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না। বিক্ষুব্ধ জনতার ক্ষোভের আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যেখানে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এসেছে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক বাড়ি যেটি বঙ্গবন্ধু যাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত ছিলো। এছাড়া জনতার ক্ষোভের আগুনে পোড়ে তেজগাঁওয়ে স¤প্রতি নির্মাণ করা ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ দলটির থানা, ওয়ার্ড, আঞ্চলিক কার্যালয় ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাসভবন সুদা সদন ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিভিন্ন নেতার বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সারা দেশেই আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আক্রান্ত, ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর যে সব ভাস্কর্য, মোড়াল ছিলো সেগুলো। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের দুই একজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তারা দল নিয়ে কোনো কথা বলছেন না। তারা দল নিয়ে ভাবার মতো সুযোগ বা অবস্থায় তারা নেই এমন মনোভাবই উঠে আসে। আওয়ামী লীগের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এতো বড় বিপর্যয় আর আসেনি বলে তারা মনে করছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরও আওয়ামী লীগ এতো বড় বির্যয়ের মুখে পড়েনি বর্তমান পরিস্থিতিকে এভাবেও কেউ কেউ ভাবছেন। গত সোমবার দুপুর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে কোথাও কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি। দলের নেতাকর্মীদের সান্ত¡না, আশ্বাস বা দেশের মানুষের উদ্দেশ্যেও কোনো আহŸান জানায়নি। তবে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর পরই বিদেশে অবস্থানরত তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। জয় বলেন, আমার মনে হয় এখানেই শেষ। আমার পরিবার এবং আমি – আমাদের যথেষ্ট হয়েছে। তিনি (শেখ হাসিনা) এতোটাই অসন্তুষ্ট যে দেশের উন্নয়নের জন্য এতো কঠোর পরিশ্রম করেছেন যেটাকে সবাই মিরাকল বলে। এরপরও একটা ছোট্ট অংশ তার বিরুদ্ধে গিয়েছে, এমন বিক্ষোভ করলো…। আমি মনে করি তিনি আর এসবে নেই। আমার পরিবার ও আমিও নেই, যথেষ্ট হয়েছে। হতাশ, ভয়, আতঙ্কের মধ্যে জয়ের এই বক্তব্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। এর কারণ হিসেবে মনে করা হতে পারে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেই রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে কেন্দ্র করে বর্তমান আওয়ামী লীগ আবর্তিত। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু পরবর্তী আওয়ামী লীগের গত প্রায় ৪৫(১৯৮১ থেকে) বছর ধরে সভাপতির দায়িত্বে আছেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা। এক পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে পরিপূরক হিসেবে মনে করেন। দলে একছত্র আধিপত্য শেখ হাসিনারই। দল তারই উপর নির্ভরশীল। এমনকি নেতাকর্মীদের অনেকের মধ্যেই ধারণা তৈরি হয় আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার দল, অনেককে বলতেও শোনা যেতো ”নেত্রীর দল। তাছাড়া দলে এই সময় তুলনামূলক ভাবে শেখ হাসিনার সমকক্ষ কোনো নেতাও নেই যিনি বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত নেতাকর্মীর সামনে দাঁড়াবেন। সেই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার পরিবার থেকে এ ধরনের বক্তব্য যেটা ভেতর থেকেও আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠলো। এর ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব পুনরুদ্ধারে নতুন করে ভাবতে হবে। যদিও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকেই সামনে রেখে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। তবে সেই দাঁড়ানো সফল হলেও আওয়ামী লীগকে দীর্ঘ সময় অস্তিত্ব সর্বস্ব হয়ে থাকতে হতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের এই মুহূর্তের ধারণা।
ই-৬ পি-৪ কলাম-২ (ছবি-৬ কলাম-১)




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা