আজ শুক্রবার | ৮ আগস্ট ২০২৫ | ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৩ সফর ১৪৪৭ | রাত ৯:৫০

বিএনপির অস্থিরতা এবং বাস্তবতা

ডান্ডিবার্তা | ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৮:২৪ পূর্বাহ্ণ

হাবিবুর রহমান বাদল
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চার মেয়াদে দমনপীড়ন করার প্রধান টার্গেট ছিল বিএনপি। ঐ সময় অনেক দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করেছে বিএনপি। এর মধ্যে প্রধান ছিল তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি এবং চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি। কিন্তু তৎকালিন সরকারের নিয়ন্ত্রণে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিললেও আর কোনো দাবিই রাখেনি আওয়ামীলীগ। বরং নানামুখী চাপে কোনঠাসা অবস্থা হয়েছিল বিএনপির। গত বছর ২৮ অক্টোবর ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিএনপি ও সমমনা দলগুলি মাঠে নামলে আওয়ামী সরকারের পেটোয়া বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীরা বিএনপিকে আর মাঠে নামতে দেয়নি। হামলা-মামলা আর গুমের রাজনীতিতে দিশেহারা নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে কোটা আন্দোলনকে সামনে রেখে ছাত্ররা মাঠে নামলে আবা সাঈদসহ বেশ কিছু ছাত্র বুকে বুলেট নিয়ে আন্দোলনকে বেগবান করে তুলে। ছাত্রদের এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পেশাজীবী সংগঠনগুলি মাঠে নামলে প্রায় ২ হাজার তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বৈারাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যায়। পতন ঘটে আওয়ামী সরকারের। সাধারণ মানুষ নতুন ভাবে স্বাধীনতার স্বাধ লাভ করে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যে কারণে মাঠে নেমে ছিল গত ছয় মাসেও সেই আকাঙ্খা বাস্তবায়ন হয়নি। বিএনপি ‘মুক্ত স্বাধীন’ হয়েছে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের একদফার টার্নিং পয়েন্টে। এ আন্দোলনে ঝরেছে অজস্র প্রান। সমর্থন থাকলেও এই আন্দোলনে বিএনপির অর্থবহ অংশগ্রহণ কতটা ছিল, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। যদিও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতের পরই প্রধান বেনিফিশিয়ারি বিএনপি। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে আওয়ামী লীগমুক্ত বিএনপিকে যে তৎপরতায় জনগণ দেখেছে এবং দেখছে, সেটি অনেকের কাছে সুখকর নয়। কারও কারও মতে, ৫ আগস্ট থেকে বিএনপিকে দেখা গেছে সেই আওয়ামী প্রবণতায়, যা দেখে অনেকেই বলেছেন, ‘এ কী দেখছি? এ পরিস্থিতি দেখার জন্য লাখো ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে হাজারো প্রাণ বিষর্যন দেয়নি। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপিকে প্রতিষ্ঠা করা নয়, বিপুল ত্যাগের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য যাই থাক না কেন, ঘোষিত লক্ষ্য হচ্ছে, রাষ্ট্র হিসেবে একটি সঠিক অবস্থানে টেনে নেয়া। এ ক্ষেত্রে পুরোনো তলিকায় যেনতেন ধরনের একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান মোটেই সহায়ক হওয়ার কথা নয়। এরপরও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচনই চূড়ান্ত কথা। পতিত সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে গেছে। শুধু তাই নয় রাষ্ট্রের সবকল সেক্টরে অরাজকতা রয়ে গেছে। ফলে বর্তমান সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হতে অবশ্যই বেশ সময় লাগবে। বিশেষ করে অর্থনীতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে অবস্থায় বিরাজমান, তা মোটেই স্বস্তির নয়। পুলিশ বাহিনীকে এখনো পুরো কার্যকর করা যায়নি। এদিকে বৈধ-অবৈধ অস্ত্রে ঝনঝনানিতে অনেকেই উদ্বিগ্ন। যদিও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করার একটি কাগুজে উদ্যোগ হিসেবে বাতিল করা হয়েছে। যা আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দেওয়া অস্ত্রের সব লাইসেন্স। এ অস্ত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু জমা দেবে কে? সবাই তো পলাতক। আর লাইসেন্স ছাড়া কি আর কোনো অস্ত্র নেই আওয়ামী লীগের লোকজনের কাছে? আছে! আর অস্ত্র কি শুধু আওয়ামী লীগের কাছেই থাকে! অনেকের কাছেই অস্ত্র আছে। এসব অস্ত্রের কী হবে! থানা ও পুলিশের কাছ থেকে যে অস্ত্র লুট হয়েছে, সেগুলো কি উদ্ধার করা গেছে? অনেকেই মনে করেন, চলমান বাস্তবতায় নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির অস্থিরতা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে বেমানান। বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারি সব সংস্থা গত ১৫ বছর নিয়ন্ত্রণ করেছেন পতিত আওয়ামী ঘরানার কর্মচারী-কর্মকর্তারা। এখন অধিকতর আগ্রাসীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বিএনপির আলখেল্লা পরে। এ ধারা কি সংস্কার করা প্রয়োজন নয়? ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কি এ ধারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে? মামলা-মোকদ্দমার পরও সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জেও বিএনপির নেতাকর্মীরা সক্রিয় ছিলেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি প্রচÐ ক্ষোভও ছিল। কিন্তু বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোটের আন্দোলন চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। তাদের আন্দোলন ও ভোট বর্জনের মুখেও ৭ জানুয়ারি কাগুজে সংসদ নির্বাচন করতে পেরেছে সরকার। এরপর বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা আবার নতুন করে জেঁকে বসে। আর বিএনপির ইউনিয়নকর্মী থেকে শুরু করে মহাসচিব পর্যন্ত এমন কোনো নেতা নেই, যার বিরুদ্ধে মামলার খড়গ চালায়নি পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। মামলা-হামলার চাপে বিএনপি যখন নাজেহাল, তখন এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের ঢেউ। এ ঢেউয়ের তোড়ে আওয়ামী লীগ সরকার ভেসে গেছে। আর ডুবো চরের মতো জেগে উঠেছে বিএনপি। কিন্তু এ জাগরণের পর দলটি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে দখলবাণিজ্য নির্বাচন প্রশ্নে অস্থিরতা। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, নিজের স্বার্থেই রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে জমাটবাঁধা আবর্জনা বর্তমান সরকারকে দিয়ে পরিষ্কার করানো বিএনপির জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এজন্য নিশ্চয়ই সরকারকে সময় দিতে হবে। আর এ সময়টায় জামায়াতকে অনুসরণ করে বিএনপি রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে পারে। এ দলটির বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, বিএনপির প্রতি বিশাল জনসমর্থনের বড় অংশই কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষোভ থেকে উৎসারিত। পাশাপাশি বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থাও কিন্তু তেমন মজবুত নয়। ছাত্ররা ৩৬ দিনে যা পেরেছে, তা কিন্তু ১৫ বছরেও পারেনি বিএনপি। সঙ্গে গভীরের আরও অনেক বাস্তবতা আছে, যা বিএনপিকে বিবেচনায় রাখতে হবে। এখন বিএনপির ভেতর-বাইরে বড় প্রশ্ন হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে, তারেক রহমান দেশে আসবেন কবে? বিরাজমান বাস্তবতায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি বড় ফ্যাক্টর। এদিকে অনেকেই মনে করেন, নির্বাচন নিয়ে অস্থির না হয়ে আওয়ামী লীগের পরিণতি এবং জামায়াতের সা¤প্রতিক কৌশল থেকেও বিএনপির শেখার আছে অনেক কিছু! ৫ আগস্টের পর জামায়াত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছে। পুরোপুরি নজর দিয়েছে জনসংযোগের ওপর।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা