আজ সোমবার | ১২ মে ২০২৫ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ | ১৩ জিলকদ ১৪৪৬ | ভোর ৫:৫৬

আজ বিশ্ব মা দিবস

ডান্ডিবার্তা | ১১ মে, ২০২৫ | ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ

জাহাঙ্গীর ডালিম
‘মা’ পৃথিবীর সবচেয়ে আপন ও প্রাণের একটি শব্দ। এ শব্দতেই লুকিয়ে থাকে গভীর ভালোবাসা আর মমত্ববোধের আকুলতা। মমতাময়ী ‘মা’ এর কাছেই সন্তানদের হাজারো বায়না, গল্প কত কি! মনের সব লুকোনো কথাগুলোও কেমন করে এই মা জেনে যায়। সব সুখ দুঃখের এক মাত্র প্রিয় বন্ধু হয় মা। এই ‘মা’ নিয়ে অনেকেই লিখে গেছেন তাঁদের নিজেদের মতো করে-
হূমায়ুন আজাদ লিখেছেন-
“আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি বাবাকে আপনি।
আমাদের মা গরিব প্রজার মতো দাঁড়াতো বাবার সামনে
কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ ক’রে উঠতে পারতো না
আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাতো যে
মাকে আপনি বলার কথা আমাদের কোনোদিন মনেই হয় নি।
আমাদের মা আমাদের থেকে বড়ো ছিলো, কিন্তু ছিল আমাদের সমান,
আমাদের মা ছিলো আমাদের শ্রেণির, আমাদের বর্ণের, আমাদের গোত্রের।”
কিংবা কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘মা’ কবিতায় লিখেছেন –
“যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!

হেরিলে মায়ের মুখ
দূরে যায় সব দুখ,
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে
সকল যাতনা ভোলে
কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।”
আর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ভাষায় –
“আমি যদি দুষ্টুমি করে
চাঁপার গাছে চাঁপা হয়ে ফুটি,
ভোরের বেলা, মা গো, ডালের ’পরে
কচি পাতায় করি লুটোপুটি-
তবে তুমি আমার কাছে হারো-
তখন কি, মা, চিনতে আমায় পারো?
তুমি ডাকো ‘খোকা কোথায় ওরে’,
আমি শুধু হাসি চুপটি করে।”
মা’কে ভালোবাসার জন্য প্রয়োজন নেই কোনো বিশেষ দিন, প্রতিদিনই ভালোবাসা যায় এ মানুষটিকে। তবুও সারা বিশ্বের মানুষ কয়েক যুগ ধরে পালন করছে বিশ্ব মা দিবস। প্রতিবছর মে মাসের ২য় রবিবার বিশ্বব্যাপী এ দিনটি পালিত হয়। দেশ ও অঞ্চলভেদে কোথাও কোথাও অবশ্য মা দিবসের তারিখ ভিন্ন হয়ে থাকে।
মা দিবসের সূত্রপাত ও ইতিহাস
১৯১৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ওই দিনটিকে মা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তিনি এ দিনকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্টের এ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির পেছনে আছে মা দিসব নিয়ে মার্কিন এক নারীর দীর্ঘ ইতিহাসের গল্প। যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের প্রচলন শুরু হয় আমেরিকান সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড হোই নামে এক নারীর হাত ধরে। ১৮৭০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পৈচাশিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে শান্তির প্রত্যাশায় জুলিয়া মাদার’স ডে প্রোক্লেমেশন নামে একটি ঘোষণাপত্র লেখেন। এ ঘোষণার মধ্যে জুলিয়া রাজনৈতিক স্তরে সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য রাখেন। এরপর যুদ্ধ শেষে পরিবারহীন অনাথদের সেবায় ও একত্রীকরণে নিয়োজিত হন মার্কিন সমাজকর্মী আনা রিভিজ জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস। ১৯০৫ সালের ৫ মে মারা যান আনা মেরি জার্ভিসের মা। তার একবছর পর ১৯০৮ সালের ১০ মে সকালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফিটন শহরে অবস্থিত আন্দ্রেউজ মেথডিস্ট এপিসকোপাল চার্চে ১ম বারের মতো দিনটি উদযাপন করেন আনা। যেখানে তার আনা মেরি জার্ভিসের মা প্রতি রবিবারে পড়াতেন। চার্চটি বর্তমানে ওহঃবৎহধঃরড়হধষ গড়ঃযবৎ’ং উধু ঝযৎরহব নামে পরিচিত। মায়ের মৃত্যুর পর আনা মেরি জার্ভিস ১৯১২ সালে স্থাপন করেন মাদার’স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন। এসময় জার্ভিস মা দিবসকে ছুটির দিন করার লক্ষ্যে ও দিনটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে প্রচারণা চালান। তার এই প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকার প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যে। তারপর ১৯১৪ সালে তার প্রচেষ্টা সফল হয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস ও জাতীয় ছুটির দিন দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৬২ সালে এই দিবসটি আন্তর্জাতিক দিবসের স্বীকৃতি পায়। দিবসটিকে স্বীকৃতির জন্য নিজের মায়ের একটি কথাকে সবসময়েই স্মরণে রেখেছেন আনা। তার মা বলতেন, মানবতার জন্য তার বিভিন্ন কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ কেউ না কেউ কোন একদিন মা দিবসকে স্বীকৃতি দেবে। আর মা দিবসের অফিসিয়াল প্রতীক হিসেবে তার মায়ের পছন্দের ফুল সাদা কার্নেশানকেই (সুগন্ধি পুষ্পবিশেষ) বাছাই করেন তিনি। শিশুদের প্রতি আনা জার্ভিসের অনুরোধ, এদিন প্রত্যেকেই যেন মায়ের সাথে সাক্ষাৎ করে কিংবা অন্তত মায়ের কাছে চিঠি লেখে। আনার বয়স যখন ৪০, তখন কন্যার চোখে মায়ের মাতৃত্ব দেখেছেন অ্যান জার্ভিস। তখনই তিনি দিসবটি কীভাবে পালন করা যায়, তা নিয়ে ভেবেছেন। তার ভাবনায় এলো, সন্তানকেন্দ্রিক উদযাপন। মানে এদিন তাদের সন্তানদের কাছ থেকে ভালোবাসা পাবেন মায়েরা। এটা কোন মাতালের উদযাপন নয়; এটা একটা বাস্তব, সময়োপযোগী এবং সামাজিক জীবনে মায়েরা যে আমাদের কত বড় আশীর্বাদ, তারই স্বীকৃতি। মায়েদের প্রতি আমাদের অবজ্ঞাকে স্মরণ করিয়ে দিতেই দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য আন্দোলন করেছিলেন তিনি। কিন্তু মা দিবসের ব্যাপক বাণিজ্যিকীকরণে ক্ষুদ্ধও হয়েছেন আনা নিজেই। মা দিবসে ফুল বিক্রি ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে দিনটি এতটাই বাণিজ্যিক হয়ে ওঠে। দিনটির এমন অবমাননার প্রতিবাদে আনা মেরি জার্ভিস নিজের সমস্ত সম্পত্তি ব্যয় করেন। এরপরেই তিনি ঘোর বিরোধিতার অভিযোগে গ্রেফতার হন। আবার অন্য ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, মা দিবসের প্রচলন শুরু হয় ১ম প্রাচীন গ্রীসে। সেখানে প্রতি বসন্তকালে একটি দিন দেবতাদের মা ‘রিয়া’ যিনি ক্রোনাসের সহধর্মিনী তার উদ্দেশ্য উদযাপন করা হতো। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় ‘মা দিবস’ পালিত হতো বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। রোমানরা পালন করতেন ১৫ মার্চ থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে, তারা দিনটিকে উৎসর্গ করেছিলেন ‘জুনো’র প্রতি। ১৬শ শতাব্দী থেকে এই দিনটি যুক্তরাজ্যেও উদযাপন করা হয় ‘মাদারিং সানডে’ হিসেবে। ইস্টার সানডের ঠিক ৩ সপ্তাহ আগের রবিবারে এটি পালন করেন তারা। নরওয়েতে ফেব্রæয়ারির ২য় রবিবারে, সৌদি আরব, বাহরাইন, মিশর, লেবাননে বসন্তের ১ম দিন অর্থাৎ ২১শে মার্চে এই দিনটি উদযাপিত করা হয়ে থাকে। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে এই যে বনার্ঢ্য ‘মা দিবস’ উদযাপন, এটি আসে মূলত আমেরিকানদের থেকে এবং আনা মেরি জার্ভিসকেই মা দিবসের আসল প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়। ‘মা দিবস’ এর এই দিনে বিশ্বের সকল মমতাময়ী মায়েদের জন্য রইলো আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা