আজ সোমবার | ১১ আগস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৬ সফর ১৪৪৭ | দুপুর ২:৫৭

রুশনারা আলী ও টিউলিপের পদত‍্যাগ নিয়ে কিছু কথা

ডান্ডিবার্তা | ১১ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
মন্ত্রী থেকে পদত‍্যাগ করেছেন রুশনারা আলী। খবরটি বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো মনে হয়েছে। টিউলিপ যখন পদত‍্যাগ করেন তখনও কষ্ট লেগেছে। তবে বাংলাদেশি রাজনীতিবিদরা খুশী হয়েছেন। এমনকি লন্ডনের বাইরে থেকে সাংবাদিক, ইউটিউবার, ফেসবুকাররা মনের মাধুরী মিশিয়ে ভিডিও তৈরি করে বাজারে ছেড়েছেন। কতগুলো অর্ধশিক্ষিত লোক আছে এই সমাজে ব্রিটিশ রাজনীতি বুঝে না সেও টিউলিপকে নিয়ে কথা বলেছে। কারণ সে প্রতিহিংসায় ভুগে।
একজন ব্রিটিশ এমপি হওয়া কম কথা নয়। আমি নব্বইয়ের দশকে যখন লন্ডনে আসি তখন রুশনারা আলী, আনোয়ারা আলী (আমার স্ত্রী) হাসনা মতূর্জা, শিল্পি, সলিসিটর, জুলি বেগম,  লন্ডনের একটি কলেজের লেকচারার, ব‍্যারিস্টার জোসনা মিয়াসহ আরো অনেক মেয়ে ছিল তরুণী। তাদের গ্রুপের এবং সমসাময়িক  প্রত‍্যকটি মেয়েই ছিল জিনিয়াস। আমিও তখন টগবগে তরুণ। সদ‍্য বাংলাদেশ থেকে এসেছি। যারা লন্ডনে নতুন আসে তাদেরকে বলা হয় ফ্রেসী। আমার চালচলন, স্টেপ কাট চুল, কানে দুল, ছেড়া টাউজার দেখে অনেকের ধারণা ছিল আমি লন্ডনে জন্ম ও বেড়ে উঠা এক নষ্ট তরুণ। আমার অবস্থা দেখে বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করতেন এর এই অবস্থা কেন?  আমাকে জিজ্ঞেস করতেন তোমার এই অবস্থার কারণ কি? বাবাকে বলতাম বাবা এটি তো এ যুগের স্টাইল বা ফ‍্যাশন। বাবা বলতেন ছেড়া প্যান্ট পরা ফ‍্যাশন? বাবা ভাবতেন আমার আর পাগল হতে বেশি বাকি নেই। সে যাক, সেই সময়ে তখন পূর্ব লন্ডনের ডেভেনেন্ট সেন্টারে আমরা দেশ বিকাশের বাংলাদেশ মেলার আয়োজন করতাম, সেই মেলায় অনেক মেয়েরা আসতো। লন্ডনে বড় হওয়া ছেলে মেয়েদের বাংলাদেশি সংস্কৃতির প্রতি ছিল প্রচ- রকমের টান। অনেক ছেলেমেয়ের সাথে মেলাতেই পরিচয়। কথা বলতাম। তারপর ইটিশপিটিশ। লক্ষ্য করতাম ওদের চোখে মুখে পড়া-লেখার স্বপ্ন। রুশনারা আলী অক্সফোর্ডে, আনোয়ারা আলী ক‍্যামব্রিজে পড়াশোনার জন‍্য চলে যায়। আমি লন্ডন শহরের ব‍্যস্ততার মধ্যেও তাদের খুঁজি, কিন্তু পাই না। আমার খোঁজার কারণ ছিল অন‍্যটি। লাইন মারা অর্থাৎ প্রেম করা। ওরা যে ওদের ক‍্যারিয়ার গড়তে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেছে সে খবর আমার কাছে ছিল না। মাঝে মধে‍্য দেখা হতো। সে যাক, রুশনারা আলীকে এক সময় আবিস্কার করলাম সাবেক এমপি উনা কিং এর সাথে। উনা কিং এমপি থেকে বিদায় নেয়ার পর ইস্ট লন্ডনের স্টেপনীও বেথনালগ্রীন এলাকায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন এমপি হওয়ার সুযোগ আসে। সে সুযোগে আমার স্ত্রী আনোয়ারা আলী তখন এমপি প্রার্থী-রেইসে। দলের ইন্টারনাল ভয়াবহ পরিস্থিতিতে হঠাৎ রেইস থেকে থেমে যায়, সে রেইসে আজকের রুপা হক এমপিও ছিলেন। সে অনেক লম্বা কাহিনি। রুশনারা আলীর এমপি হওয়ার পথ অনেকটাই উজ্জ্বল হয়ে উঠে।  রুশ এমপি হলেন। মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা সাক্ষাৎ হয়। কমিউনিটির বিভিন্ন সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলি। রুশ এমপি হওয়ার পর কনজারভেটিব দল টানা ১৫ বছর ক্ষমতায়, বৃটেনে তখন কনজারভেটিব দলের জয় জয়কার। লেবার পার্টি ক্ষমতায় যেতে পারছে না। অবশেষে বরিস জনসনের ভুমিধ্বস বিজয়ের পর সরকার গঠন এবং করোনার সময় বৃটিশ জাতির সাথে বরিস জনসের মিথ‍্যাচার, প্রধানমন্ত্রী থেকে পদ‍ত‍্যাগ। অল্পদিনের জন‍্য লিজ ট্রাসের প্রধানমন্ত্রী হওয়া। পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাকের প্রধানমন্ত্রী হওয়া বৃটিশ জাতি কনজারভেটিব দলের উপর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠে। যার ফলে লেবার পার্টি কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে ভুমিধ্বস বিজয় অর্জন করে সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের মাত্র এক দুই মাসের মাথায় এন্ট্রি করাপশন মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকী করাপশনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত‍্যাগ করেন। বাকি ছিলেন রুশনারা আলী। আমার একটি উচু ধারণা ছিল রুশকে দিয়ে। কারণ রুশ কম কথা বলেন, অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেছেন। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সবই আছে। কিন্ত শেষ পযর্ন্ত পচা শামুকে পা কাটবেন তা ছিল আমার কল্পনার বাইরে। আমার বাবা আমাকে বলেছিলেন তুমি যদি বৃটেনে পলিটিক‍্যাল সেলেব্রেটি হতে চাও তাহলে কয়েকটি  বিষয় তোমার মধে‍্য থাকতে হবে। এক, অর্থনৈতিক সততা। দুই, নারী ঘটিত সততা। তুমি বৃটিশ মন্ত্রী এমপি, যত্রতত্র  প্রেমপ্রীতি করতে পারবা না। তাছাড়া  বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মতো অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি করতে পারবে না। তুমি মন্ত্রী-তুমি এমপি মিথ‍্যা কথা বলতে পারবা না। মিথ‍্যা কথা বলবা ধরা খাবা, জিন্দেগী শেষ। সাবেক ফরেন সেক্রেটারি রবিন কুক তার সেক্রেটারির সাথে প্রেম প্রীতি শুরু করে দিলেন। অনেকটা প্রভাব কাটিয়ে প্রেম করেছেন বিয়েও করেছেন। কাউকে প্রেমের জন‍্য আপনি জোর করতে পারেন না। আপনার ক্ষমতা দিয়ে ঐ যে সাবেক আওয়ামী লীগের প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার মুরাদের মতো র‍্যাব পাঠিয়ে হোটেলে আনার হুমকি দিতে পারেন না। প্রেম সবাই কম বেশি করে আমিও এই জীবনে প্রেম করেছি। কিন্তু  আজ পযর্ন্ত কোনো মহিলাকে গিয়ে বলিনি নিজ থেকে আপনাকে আমি ভালোবাসি। কাউকে জোর করিনি। মহিলারা আমাকে বলেছেন। অতএব আমার এ ক্ষেত্রে কোনো দোষ নেই। দ্বিতীয়ত অর্থনৈতিক সততা শত অভাবের মধে‍্যও ধরে রেখেছি। কারো একটি টাকা মারিনি। মারার চিন্তাও করিনি। লন্ডনে আমারও বাড়ি আছে। অর্থাৎ আমার বলতে আমার স্ত্রীর। দেখাশোনা করতে হয়। একটি বাড়িতে এজেন্ট আমাদেরকে ঠকিয়েছে। ১৫/২০ বছর ভাড়া খুবই কম দিয়েছে। কিন্ত মিথ‍্যা কথা বলে বাড়ি থেকে বের করতে পারিনি। এক বিবেকের তাড়না, দুই যেহেতু স্ত্রী বৃটিশ রাজনীতির সাথে জড়িত এবং পেশায় ডাক্তার অতএব কোনো রকমের অন‍্যায় কাজ করা যাবে না। সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। মাঝে মধ্যে ফ্রাস্টেশনে ভুগি। দেখি যারা দুনম্বরি করে তারাইতো ভালো আছে।  শেষ কথা: টিউলিপকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম- টিউলিপ বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী না হতে পারলে লন্ডনের মেয়র হওয়া কোনো বিষয় না, কিন্তু মা খালাদের ভ্রষ্ট রাজনীতি টিউলিপকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রুশনারা আলীর রাজনৈতিক ক‍্যারিয়ারেরও ইতি টানতে হলো সামান‍্য কিছু টাকার লোভে। অথচ রুশনারা আলী রাষ্ট্রের কোনো টাকা মারেননি বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ অথবা আমলাদের মত। তিনি তার বাড়ি থেকে ভাড়াটিয়া বিদায় করেছেন মিথ‍্যা বলে এবং ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন, এটাই তার অপরাধ। সেই অপরাধকে স্বীকার করে নিয়ে তিনি বিদায় নিলেন। তার পদত‍্যাগপত্র গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি আশা করেন রুশ ব্যাক বেঞ্চে অর্থাৎ পার্লামেন্টের পিছনের সারিতে বসে সরকারকে সহযোগিতা করবেন। সান্ত¡নার বানী-আর কি। ভালো থেকো প্রিয় রুশনারা আলী। তোমার পদত্যাগ আমাকে খুবই কষ্ট দিয়েছে। রাত ১১/ ১২ টায় কমিউনিটির বিভিন্ন ইস‍্যু নিয়ে কথা বলে জ্বালাতন করেছি। রুশনারা আলীর একটি গুন আছে তিনি ফোন ধরেন। না ধরলে ফোন ব্যাক করেন।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা