আজ বুধবার | ২৩ জুলাই ২০২৫ | ৮ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২৭ মহর্‌রম ১৪৪৭ | সন্ধ্যা ৭:১১

আত্মোৎসর্গে বাঁচালেন অনেক মায়ের কোল

ডান্ডিবার্তা | ২৩ জুলাই, ২০২৫ | ১১:২০ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
দুপুর ১টার একটু পর। রাজধানীর উত্তরা তখনো স্বাভাবিক ছন্দে চলছিল। কিন্তু হঠাৎ দিয়াবাড়ি এলাকায় বিকট শব্দে কেঁপে উঠল চারপাশ। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ‘হায়দার আলী’ ভবনের ওপর আছড়ে পড়ল বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান। মুহূর্তেই পুরো ভবনটিতে ছড়িয়ে পড়ে আগুন, ধোঁয়া আর মৃত্যু। কক্ষের ভেতর ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তখন প্রাণভয়ে ছুটোছুটি করছে। সেই ভয়ংকর মুহূর্তে অনেকেই হয়তো জীবন বাঁচাতে দৌড়েছিলেন। কিন্তু একজন শিক্ষিকা ছিলেন, যিনি পালাননি থেমে গিয়েছিলেন অন্যদের জীবন বাঁচাতে। তিনি মাহেরীন চৌধুরী, স্কুলটির একটি শাখার কো-অর্ডিনেটর। আগুনের লেলিহান শিখার মাঝখানে দাঁড়িয়ে তিনি চেষ্টা করছিলেন তার শিক্ষার্থীদের বের করে আনতে। নিজের জীবন দিয়ে যেন অনেক মায়ের কোল রক্ষা করে গেলেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মাহেরীন চাইলে আগেই বেরিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শিক্ষার্থীদের বের করার চেষ্টায় সময়ক্ষেপণ হয় তার। সেই সময়েই ধোঁয়া ও আগুনে আক্রান্ত হন তিনি। তার ভাই মুনাফ মুজিব চৌধুরী বলছিলেন, ‘উনার মানসিক জোর ছিল অদ্ভুত রকমের। বার্ন ইউনিটে পৌঁছেও আমরা তাকে জীবিত পেয়েছিলাম। কথা বলছিলেন। কিন্তু অবস্থাটা খুবই খারাপ ছিল। পরে চিকিৎসকেরা জানান, তার শ্বাসনালি পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছে।’ চিকিৎসকরা জানান, মাহেরীনের শরীরের প্রায় ১০০ শতাংশই দগ্ধ হয়েছিল। তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়, কিন্তু সোমবার রাত ৯টার কিছু আগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগমুহূর্তে স্বামী মনসুর হেলালের সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য কথা হয় তার। তিনি বলেন, ‘স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের নিয়ে বের হচ্ছিলেন মাহেরীন। সেই সময়েই গেটের সামনেই বিমানটা বিধ্বস্ত হয়। তখনও সে চেষ্টা করেছে বাচ্চাদের বাঁচাতে। নিজে দগ্ধ হয়েও।’ মাহেরীনের সংসারে রয়েছে দুটি সন্তান—একজন নবম শ্রেণিতে পড়ছে, বয়স ১৪; অন্যজন ও লেভেলের শিক্ষার্থী, বয়স ১৫ বা ১৬। স্কুলগামী সেই দুই শিশুর জীবন থেকে মাত্র এক ঝলকেই হারিয়ে গেল তাদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়—তাদের মা। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে মাহেরীনের প্রথম জানাজা হয় উত্তরার গাউছুল আজম জামে মসজিদে। পরে নীলফামারীর জলঢাকার বগুলাগাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়। দুর্ঘটনার পর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এফ-৭ বিজিআই মডেলের ওই যুদ্ধবিমানে যান্ত্রিক ত্রæটি দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সেই ত্রæটির প্রকৃতি, এবং একটি জনবহুল এলাকার ওপর দিয়ে প্রশিক্ষণ ফ্লাইট চালানোর যৌক্তিকতা—এমন প্রশ্ন এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে লাখো মানুষের মনে। এই এক দুর্ঘটনায় ৩১ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন ১৬৫ জনের বেশি। রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে শোক, কিন্তু ক্ষতগুলো থেকে যাবে আরও অনেক দিন। মাহেরীন চৌধুরীর আত্মত্যাগ কেবল এক ব্যক্তির মৃত্যু নয় এটা হয়ে রইল সাহস, দায়িত্ববোধ এবং ভালোবাসার অনন্য এক উদাহরণ। তিনি বাঁচাতে চেয়েছিলেন তার শিক্ষার্থীদের, আর তাই নিজের জীবনটা অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। আজ সেই মা, শিক্ষক, সংগ্রামী নারীকে গভীর শ্রদ্ধা।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা