না’গঞ্জে ছাত্র-জনতা হত্যার মূল হোতারা এখনো ধরাছোয়ার বাইরে

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
গত বছর জুলাই আন্দোলনের সময় আওয়ামীলীগের গুলিতে নিহত হয় আবুল হাসান স্বজন। সে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি ছিলেন। ওই দিন তার ছোট ভাই আবুল বাশার অনিকও ছিলেন ঘটনার পাশে অবস্থানে। স্বজন হত্যার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় প্রথম মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত দেড় থেকে দুইশ জনকে আসামি করা হয়। নিহতের ভাই আবুল বাশার অনিক বাদি হয়ে মামলা দায়ের নিশ্চিত করেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৎকালীন আব্দুস সাত্তার টিটু। এ পর্যন্ত এক বছরে ব্যবসায়ী নেতা লিটন সাহা ও এস এম রানা ছাড়া কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান, অয়ন ওসমান, আজমেরী ওসমান, শাহ নিজাম, নাসির উদ্দিন, এহসানুল হক নিপু, হাবিবুর রহমান রিয়াদ, তানভীর আহমেদ টিটু, কামরুল হাসান মুন্না, আব্দুল করিম বাবু, বান্টি, রাফেল, মতিউর রহমান মতি, রুহুল আমিন, ফজর আলী, খান মাসুদ, বিটু, দেলোয়ার প্রধান, লিটন সাহা, কোরবান, আলী রেজা উজ্জ্বল, মনির হোসেন, সুজিত সাহা, সাইফুল্লাহ বাদল, শওকত আলী, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মোঃ রিফাত, নাছির, শ্যামল, অহিদুজ্জামান অহিদ, শুভ, এহসান উদ্দিন আহমেদ, ফয়সাল, নির্জন দাস, টিপু সুলতান, রামু সাহা, এডভোকেট মহসিন, মিনহাজুল বিকি, বাপ্পি সহ অজ্ঞাত দেড় থেকে ২শ জন। মামলায় বাদী অনিক উল্লেখ করেন ৩ আগষ্ট বিকেলে শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রীদের নির্দেশে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দেশীয় অস্ত্র ও আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শহরে মহড়া দিতে থাকেন ও ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকেন। এসময় মিশনপাড়া এলাকায় ছাত্র জনতার অবস্থানকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। এসময় অয়ন ওসমানের গুলিতে আহত হন স্বজনসহ অনেকে। আহত অবস্থায় স্বজনকে ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয় তাকে। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ আগষ্ট মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতের স্বজনের দায়ের করা হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি সুতা ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের তৎকালীন সভাপতি লিটন সাহাকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গত বছর ৩রা নভেম্বর ভোররাতে রাজধানী ঢাকার বেইলি রোড থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তারেক আল মেহেদী। তিনি বলেন, জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশের এক অভিযানে ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতের স্বজনের দায়ের করা হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ওই হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। লিটন সাহা ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে ওসমান পরিবারের এক কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে টাকা বিলি করে তিনি সমালোচিত হন। নারায়ণগঞ্জ শহরের টানবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে লিটন সাহা ছিলেন অঘোষিত গডফাদার। তার বিরুদ্ধে হুন্ডি, চাঁদাবাজিসহ অবৈধভাবে বন্ড সূতার সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগ আছে। বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের হুমকি দেয়ারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাদার প্রিন্টের কর্ণধার ও নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি এসএম রানাকে আটক করে পুলিশ। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি বিদেশ যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে আটক করা হয়। এসএম রানাকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্বজন হত্যা মামলায় ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে নারায়ণগঞ্জ আদালত। ৩ মার্চ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুদ্দিন কাদিরের আদালতে শুনানী শেষে এ রায় ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান জানান, ‘সদর থানার আবুল হাসান স্বজন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে এসএম রানাকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে এ মামলায় মূল হোতারা এখনো গ্রেফতার হয়নি।