আজ শুক্রবার | ২২ আগস্ট ২০২৫ | ৭ ভাদ্র ১৪৩২ | ২৭ সফর ১৪৪৭ | বিকাল ৪:৫২
শিরোনাম:
বাসভাড়া বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ না’গঞ্জবাসী    ♦     নির্বাচনের ব্যাপারে প্রফেসর ইউনূস সিরিয়াস    ♦     বাংলাদেশে এক ধরনের উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে    ♦     নতুন বাংলাদেশে আমরা শেখ মুজিবকে কীভাবে দেখব    ♦     ব্যক্তিগত অর্থায়নে একের পর এক রাস্তা সংস্কার করেই যাচ্ছেন মাকসুদ হোসেন    ♦     আইনজীবীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় মাঠে বিদ্রোহী প্যানেল    ♦     আদালতপাড়ায় জামায়াতপন্থী আইনজীবী প্যানেলের গণসংযোগ    ♦     সিদ্ধিরগঞ্জে জাতীয় যুব ফোরামের উদ্যোগে হাই স্কুলে ক্রীড়া সরঞ্জাম বিতরণ    ♦     সিদ্ধিরগঞ্জে মসজিদের নির্মাণ কাজে বিএনপি নেতার বাঁধা    ♦     ফতুল্লায় বিএনপির ৩ নেতাকে অব্যাহতি    ♦    

বাসভাড়া বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ না’গঞ্জবাসী

ডান্ডিবার্তা | ২২ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
আন্দোলনের মুখে বাসভাড়া কমানোর সিদ্ধান্তের এক বছর না যেতেই আবারও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে নন-এসি বাসের ভাড়া পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করেছেন জেলা প্রশাসন। গত বুধবার বিকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির সভায় রাজনৈতিক ও নাগরিক নেতাদের বিরোধিতার পরও বাসভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ পথে বর্ধিত বাসভাড়া কার্যকর হয়েছে।” পরিবহন মালিক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে আগে কয়েকটি পরিবহনের বাস চলাচল করলেও বর্তমানে সিটি বন্ধন পরিবহন ও উৎসব ট্রান্সপোর্টের শতাধিক বাস চলাচল করে। এ পথে ৪৫ টাকায় নন-এসি বাসগুলোতে যাত্রী পরিবহন করলেও কোভিডের সময়ে বাসভাড়া একলাফে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়। পরে তা পাঁচ টাকা কমিয়ে ৫৫ টাকা করা হয়। গত বছর গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জে বাসভাড়া কমানোর দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম। তারা আধাবেলা হরতালেরও ঘোষণা দেন। পরে হরতালের একদিন আগে ১৬ নভেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বাস-মালিক ও যাত্রী অধিকার ফোরামের সঙ্গে বৈঠক করে বাসভাড়া কমিয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণ করেন। এই সিদ্ধান্তের নয় মাসের মাথায় বাসভাড়া পুনরায় বাড়ানো হয়েছে। যদিও নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা পথে বিআরটিসির যেসব বাস চলে সেগুলোর ভাড়া ৪৫ টাকা। বাসভাড়া ঘোষণায় ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক, নাগরিক, ছাত্র ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। তারা বলছেন, জ্বালানির মূল্য কিংবা দূরত্ব বৃদ্ধি না পেলেও হঠাৎ করে বাসভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে অন্যায়ের শামিল। গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন বলেন, “কোনো ধরনের পর্যালোচনা না করেই বাস-মালিকদের অন্যায্য দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে তড়িঘড়ি করে এক সভার মধ্য দিয়ে বাসভাড়া বৃদ্ধি করেছে প্রশাসন। যাত্রী সাধারণের কোনো বিষয়কেই এখানে বিবেচনায় আনা হয়নি। এই সিদ্ধান্ত সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে সরাসরি অন্যায়। “গণঅভ্যুত্থানের পর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে, বিশেষ করে পরিবহন খাতের যে চাঁদাবাজি আগে ছিল, সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে তৎকালীন ডিসি বাসভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু এবার বাসভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কেবল মালিকদের কথাই বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এদিকে, বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামার কথা জানিয়েছেন যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, “এটা অন্যায় এবং অযৌক্তিক, এটি আমরা প্রত্যাখ্যান করছি এবং নিন্দা জানাচ্ছি। তেল ও ডিজেলের দাম এখন কমতির দিকে, এমনকি বাসভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারি কোনো প্রজ্ঞাপনও নেই। আগে ওসমান পরিবার পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি করতো। গণঅভ্যুত্থানের পর এ খাতে নতুন করে সিন্ডিকেট গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন জেলা প্রশাসক। “বিগত সময়ে জেলা প্রশাসকরা ভাড়া কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন কিন্তু এই একমাত্র জেলা প্রশাসক, যাকে দেখলাম বাসভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে তৎপর ছিলেন। এই তড়িঘড়ি করে বাসভাড়া বৃদ্ধি করার কারণে আমরা উনার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই।” তিনি আরও বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে ফোরামে আলোচনার পর কর্মসূচি ঘোষণা দেব।” তবে, বাসভাড়া বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস-মিনিবাস কেন্দ্রীয় মালিক সমিতির সভাপতি রওশন আলী বলেন, “কেবল উৎসব ও বন্ধন বাসের ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ আমরা যাত্রীদের বসার সুবিধার্থে বাসগুলোকে ৫২ সিট থেকে কমিয়ে ৪৫ সিটে এনেছি। হিসাব করলে বাসভাড়া আরও বেশি হওয়ার কথা, তারপরও জেলা প্রশাসক ৫৫ টাকা করেছেন, এবং আমরা মেনে নিয়েছি। যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা মোবাইল ফোনে বলেন, “বাস-মালিকরা একমাস যাবৎ বাসভাড়া না বাড়ালে বাস চালানো বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলছিলেন। সে কারণে সবাইকে নিয়ে বসা হয়েছিল। আলোচনায় দূরত্ব ও ইউনিট প্রাইস নিয়ে কারও কোনো আপত্তি ছিল না। আর বাস-মালিকরা ৫২ সিট থেকে ৪৫ সিটে নিয়ে এসেছেন বাসগুলো। এক্ষেত্রে, মালিক সমিতির হিসাবে বাসভাড়া ৬১ টাকা এবং বিআরটিএর হিসেবে ৫৭ টাকা ভাড়া হয়। সবকিছু বিবেচনায় রেখে বাসভাড়া ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের তো নীতিমালার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।” ওই সভায় শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে সাত দিনই অর্ধেক ভাড়া নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান জেলা প্রশাসক। এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে ‘নারায়ণগঞ্জের ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে বাসভাড়া কমিয়ে আনার দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, ভাড়া কমানো না হলে শহরে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে যাত্রী অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, “জেলা প্রশাসকের যেই ভূমিকা তা আমরা ন্যাক্কারজনক মনে করি। আমরা কয়েক মাস আগে জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছিলাম এসি বাসের ভাড়া কমানোর জন্য, যখন ভাড়া ৭০ থেকে ৮০ করল তখন। সে এটাকে কোনও গুরুত্ব দিল না, আর বাস মালিকরা যখন পরশুদিন তাঁকে চিঠি দিয়ে বললো ভাড়া বাড়াতে হবে, তিনি জরুরি ভিত্তিতে সবাইকে ডেকে নিয়ে ৫ টাকা ভাড়া বাড়ায় দিলো। এই ভূমিকটা জনবিরোধী এবং বাস মালিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য। এ সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।” এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, “বাস ভাড়া বৃদ্ধি নারায়ণগঞ্জের মানুষকে হতাশ করেছে। এই অনৈতিক ভাড়া বৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।” ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস ভাড়া ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫ টাকা করার সিদ্ধান্তকে গণস্বার্থবিরোধী ও অযৌক্তিক বলে দাবি করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, ক্রীড়া অনুরাগী ও ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, “গত এক বছরে জ্বালানির দামও বাড়েনি। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, “কোন কারন ছাড়াই ৫ টাকা বাস ভাড়া বৃদ্ধি মেনে নেয়ার কোন সুযোগ নেই।” ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক দাবি করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলন। দলটির জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন এক বিৃবতিতে বলেন, “বাস মালিকদের অন্যায্য দাবির প্রতি প্রশাসনের নতি শিকার এবং যাত্রী সাধারণের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে বলে আমি মনে করি। ওয়ার্কিং ফর বেটার নারায়ণগঞ্জের সমন্বয়ক ও নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, “জ্বালানি মূল্যের স্থিতিশীলতা থাকা সত্ত্বেও বাস ভাড়া অযথা বৃদ্ধি করা হলে নি¤œ ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হবে। ইসলামী আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, “আমরা গতকাল (বুধবার) মিটিং চলাকালীনও বাসভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে বিরোধীতা করেছি। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বাস ভাড়া সরল অংক। ন্যায্য ভাড়া ৫০ টাকা, চাঁদাবাজের ৫ টাকা, সমান ৫৫ টাকা। ৫ আগস্টের চাঁদাবাজ না থাকায় ভাড়া ছিল ৫০ টাকা। নতুন চাঁদাবাজের কারণে ভাড়া আবার ৫৫ টাকা। প্রকৃতি শূণ্যস্থান পছন্দ করেন না।” বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের জেলা সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা বলেন, “এটা একটি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত, আমরা এটি প্রত্যাখ্যান করছি। কোনো খচর বৃদ্ধি ছাড়াই ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাস মালিকরা বলছে, যাত্রী সুবিধার্থে বাসকে ৫২ থেকে ৪৫ সিটে নিয়ে আসায় তাদের লোকসান হচ্ছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের মহানগর সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান বলেন, “ওসমান পরিবারের চাঁদাবাজির বলয় থেকে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন মুক্ত হওয়ার পর আমরা রাস্তায় নেমেছিলাম বাস ভাড়া কমানোর দাবিতে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা