আজ শনিবার | ১৬ আগস্ট ২০২৫ | ১ ভাদ্র ১৪৩২ | ২১ সফর ১৪৪৭ | সকাল ৮:৫৫

ফতুল্লার রাজনীতি আদুভাইদের হাতে!

ডান্ডিবার্তা | ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১২:৩৭ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত। আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপি বা অন্যান্য ছোটবড় রাজনৈতিক দলগুলো কোনভাবেই পিছিয়ে থাকতে নারাজ এ নারায়ণগঞ্জে। বিএনপি বিভিন্ন সময়ে পুরাতন কমিটি বাতিল করে নতুনভাবে কমিটি দিয়ে তারা দলকে চাঙ্গা রাখার মনোভাব নিয়ে চললেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ তাতে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে ফতুল্লায় আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতি এখন অনেকটা স্বস্তিহীনতার মধ্যেই রয়েছে। ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, স্বেচ্ছাসেবকলীগের বাতিল কমিটি আর যুবলীগ চলছে জেলা আওয়ামীলীগের পদবী পাওয়া নেতার নেতৃত্বে। এ যেন যেমন খুশি তেমন সাজোর মেলা চলছে ফতুল্লায় এ তিন দলের মধ্যে যা অনেকটা অভিভাবকহীন। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগে ফতুল্লা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অঞ্চল। জেলার বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সরকারী দল বা বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দও এই থানার নেতাকর্মীদের গুরুত্বের সাথেই দেখে থাকে। ইতিহাস স্বাক্ষী রেষ দলই বিরোধী অবস্থানে থাকুকনা কোনো,নারায়ণগঞ্জের রাজপথে অতীতে বিভিন্ন সময় ফতুল্লা থেকেই আন্দোলন সংগ্রামের ডাক দেয়া হয়েছিলো। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এই থানায় এক সময় আওয়ামীলীগের শক্ত ঘাঁটি ছিলো। আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে থাকাবস্থায় অল্প সংখ্যক নেতাকর্মী রাজপথে নামলে পুরো শহরই কেঁপে উঠতো। বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ এই থানা এলাকায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অঙ্গদল যুবলীগ আর আগের জৌলুসে নেই। অনেকটা মান্দাতার আমলের কমিটি দিয়েই চলছে যুবলীগ। অপরদিকে ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক পদ পেয়েছেন। তাই তিনি ফতুল্লা থানা যুবলীগে তেমন একটা সময় দিতে পারেন না। থানা এলাকার ৫টি ইউনিয়নে উল্লেখযোগ্য যুবলীগ কর্মী থাকলেও এখন অনেকেই দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এর কারন হিসেবে যুবলীগের নতুন কমিটি না হওয়াকে দায়ী করেছেন অনেকে। অপরদিকে ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের অবস্থাও নাজুক। এই অঙ্গদলের সভাপতি ফরিদ আহম্মেদ লিটন ফতুল্লার রাজনীতিতে সরব ছিলেন। গত বছওে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পুর্বে স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি বিলুপ্ত করেছে হাইকমান্ড। যার ফলে তিনি বর্তমানে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনিও প্রায় দুই যুগ ধরে স্বেচ্ছাসেবকলীগের ফতুল্লা থানা কমিটির সভাপতি পদে বহাল রয়েছেন। কোনো কমিটি না হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবকলীগেও দৈন্যদশা চলছে। লিটন মূল দলে পদ পাওয়াতে স্বেচ্ছাসেবকলীগেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা । সব কিছু মিলিয়ে ফতুল্লা থানা যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ এখন পালবিহীন নৌকার মতোই চলছে। ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সহযোগি সংগঠনগুলো প্রতিটি ওয়ার্ডে ভবিষ্যত আওয়ামীলীগ নেতৃত্ব শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। ২০০২ সালে ফতুল্লা থানা যুবলীগের আহ্বায়ক করা হয় মীর সোহেল আলীকে। এরপর তিনি সভাপতির দায়িত্ব পান। সাধারণ সম্পাদক করা হয় ফাইজুলকে। দীর্ঘ সময়ে ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে মীর সোহেল আলীকেই মানুষ চেনেন। তবে অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে সাধারণ সম্পাদক ফাইজুলসহ অন্য নেতাকর্মীদের নাম। যুবলীগের মূল কমিটির অন্য কোনো নেতাদের ফতুল্লাবাসী তেমনভাবে চেনেন না। অভিযোগ রয়েছে ঐসব নেতাদেরন লাইম টাইটে আনা হয়নি। ফতুল্লা থানা যুবলীগের মূল কমিটি মীর সোহেলের হাতেই থমকে আছে। এদিকে প্রতিটি ওয়ার্ডে যারা নিজেদের যুবলীগ কর্মী হিসেবে দাবী করেন, তারাও এখন চুপসে গেছেন। কারন মীর সোহেল আলীর সাথে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে থানা আওয়ামীলীগের সদস্যও হতে পারেনি অনেকে। মীর সোহেল আলী ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের কোনো পদে নেই রয়েছে জেলা কমিটিতে। বর্তমানে তাও সাবেক কমিটি।  তাই তাঁর অনুসারী যারা ছিলেন তারা বর্তমান থানা কমিটিতে কোনো পদও পায়নি। ফতুল্লা থানা যুবলীগের মতো একই অবস্থা বিরাজ করছে স্বেচ্ছাসেবকলীগে। এই দলে সভাপতি হিসেবে ফরিদ আহম্মেদ লিটন সর্ব মহলে পরিচিত। বাকি নেতাদেরও যুবলীগের মতো কেউ তেসন চেননা বা তাদের সামনে আসার সুযোগ দেয়া হয়নি। ১৯৯৮ সালে ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক হয়েছিলেন লিটন। সেই থেকে অদ্যাবধি তিনি একই পদে বহাল আছেন। ফতুল্লায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ কমিটির অন্য কোনো নেতাদের নাম অনেকেই জানেনা। দীর্ঘ সময়ে রাজনৈতিক দৈন্য দশার কারনেই ফতুল্লায় যুবলীগ ওস্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের অনেক নেতাই মনোকষ্টে দল থেকে দূরে রয়েছেন বলেও একাধিক সূত্রের দাবি। ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের রাজনীতি। ছাত্রত্ব নেই তবুও তারা সর্বক্ষেত্রে পরিচিত ছাত্র নেতা হিসেবে। লেখা-পড়ার পাট কবে নাগাদ চুটিয়েছে সে বিষয়টিও হয়তো তারা ভুলে গেছে। বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। এ সকল ছাত্রনেতাদের ছেলে মেয়েদের কেউ কেউ প্রাথমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। তবু ও তারা ছাত্র নেতা। প্রায় দেড় দশকের ও বেশি সময় ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি  দিয়ে চলছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের রাজনীতি। নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতৃত্বে আসতে পারছেনা চলমান ছাত্র নেতারা। অনেকের মতে বয়সের ভারে কমিটির নেতৃবৃন্দ একদিকে যেমন ভোতা দাঁয়ে পরিণত হয়েছে, তেমনি নতুন নেতৃত্বের সুযোগ না হওয়ায় তরুণ প্রজন্মের অনেকে এ সংগঠনের রাজনীতির সাথে যুক্ত হতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছাত্রলীগের ইতিহাস অনস্বীকার্য। আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড বলা হয় এই ছাত্র সংগঠনটিকে। স্বাধীনতা সংগ্রামেও এই সংগঠনের অবদান ইতিহাসের পাতায় এখনও ঝলঝলে। আবার ছাত্রলীগের রাজনীতিতে থাকা অনেকেই আজ জাতীয় রাজনীতিক। অথচ সেই ইতিহাসের ধারক বাহক ছাত্রলীগের কমিটি এই অঞ্চলে নেই! এতে করে সৃষ্টি হচ্ছে না নতুন নেতৃত্ব। তথ্য মতে, সর্বশেষ ২০০৬ সালে আবু শরিফুল হক কে সভাপতি ও আব্দুল মান্নান’কে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিলো। বছরের পর বছর পাড় হয়ে গেলেও ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের কমিটির পুনর্গঠন না হওয়ায় স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। ছাত্র থেকে যুবক অত:পর বৃদ্ধা হওয়ার পথে এমন ব্যক্তিরা ছাত্রলীগের পদ দখল করে রেখেছেন। এতে করে ফতুল্লা থানা এলাকায় ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। ফতুল্লা মডেল থানার অন্তভূক্ত প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির  নেতৃত্বেও রয়েছে আদুভাইয়েরা । আর তাদের কর্মকান্ডে বিতর্কিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বলেন পুরনো মানুষগুলো যখন একই পদে বহাল থাকে তখন সেশন জটের মতো অবস্থা হয়। আর এই জটের কারনেই ফতুল্লায় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এখন। ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলে অঙ্গদলগুলোর কিছু সংখ্যাক কর্মী রয়েছে। রাজপথে নামার মতো মানুষ নেই বল্লেই চলে। ভাড়া করা লোক দিয়ে সভা সেমিনার ভরে রাখা যায়। কিন্তু রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম ভাড়া করা লোক দিয়ে হয় না। আন্দোলন সংগ্রামে নিজস্ব লোক লাগে। বর্তমানে ফতুল্লায় যে অবস্থা চলছে তা খুবই দুঃখজনক। যদি কোনো দলে কর্মী না থাকে তাহলে সেই দলের নেতার অবস্থান বাইরে থেকে যদিও ভালো মনে হয় কিন্তু ভিতরে অন্তঃসার শুন্যের মতোই। তিনি আরো বলেন, ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ফরিদ আহম্মেদ লিটন ও ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোহাম্মদ শরীফুল হককে যদি ফিল্ড তৈরী করে দেয়া যেতো, তাহলে ফতুল্লায় আওয়ামীলীগের রাজনীতি যে শক্তি লাভ করতো তা কেউ কল্পনাও করতে পারতো না। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন একই পদে বহাল থেকে নতুনভাবে কমিটি গঠনে তাগিদ না দেয়ার ফলে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে ফতুল্লায় আওয়ামীলীগের অঙ্গদলের রাজনীতিকে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা