মামলা আর গ্রেফতারে তছনছ বিএনপি

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট বাংলাদেশের সবচাইতে বড় বিরোধী দল জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি বর্তমানে কঠোর আন্দোলনমুখী হয়ে উঠেছে। বর্তমানে হরতাল-অবরোধের মধ্য দিয়েই বিএনপির রাজনীতি পরিচালনা হচ্ছে। এমনকি অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাংচুর আর ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে নিয়মিতই বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে নারায়ণগঞ্জের আওতাধীন প্রত্যেকটি থানায় মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আড়াইহাজার-রূপগঞ্জে চলছে দফায় দফায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ঘর-বাড়িতে হামলা-ভাংচুর-লুটপাটের মতো ঘটনা আর বিএনপির নেতাকর্মীরা এই হামলার অভিযোগ তুলেছে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের উপর। তা ছাড়া ও ইতিমধ্যে হরতাল অবরোধকে ঘিরে প্রায় শতাধিকের উপরে বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও হয়েছে বলে জানা গেছে। এই মামলা-হামলা-গ্রেফতারকে ঘিরেই নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন অনেকটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত ২৮ তারিখ ঢাকায় বিএনপির মহা-সমাবেশ পশু হয়ে যাওয়ার পর থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা দফায় দফায় হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ও অবরোধের প্রথম দিনে নারায়ণগঞ্জ শহর একটু ঠান্ডা থাকলে ও পুরোদমে গরম ছিলো আড়াইহাজার। সেখানে সকলেই কয়েক দফা ত্রিমুখী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় দিনে ছিলো নারায়ণগঞ্জ ঠান্ডা এমনকি পুরো জেলা ও কিন্তু তৃতীয় দিনে রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ শহরের পিকেটিংয়ের দেখা মিলেছে আর দফায় দফায় পুরো নারায়ণগঞ্জ বলা চলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিলো। এই ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথমে আড়াইহাজার বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম আজাদের বাড়ি-ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে পরবর্তীতে পরের দিন রূপগঞ্জ উপজেলা যুবদল নেতা আবু মাসুমের বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। আর অবরোধের সর্বশেষ দিন রূপগঞ্জ ছাত্রদল নেতা সারোয়ার হোসেন সাজুসহ আরো কয়েকটি থানায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে হরতাল-অবরোধ সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাতটি থানায় দফায় দফায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে ১৪টি নাশকতার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। যাকে ঘিরে বর্তমানে ঘর ছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা যানা গেছে সাত থানায় চৌদ্দটি মামলায় আসামী করা হয়েছে বিএনপির আট শতাধিক নেতাকর্মীকে আর গ্রেফতার হয়েছে শতাধিকের ও বেশি নেতাকর্মী। যাকে উপেক্ষা করেই আন্দোলণ চলমান রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মামলা-হামলা ও গ্রেফতারকে ঘিরেই আতঙ্কে বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপিসহ সকল বিরোধী দলগুলো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কঠোর আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’ শুরু করেছে। বর্তমানে কঠোর আন্দোলন হরতাল ও অবরোধের মাধ্যমে সরকারকে পতন করাতে চায় বিএনপি। সেই পরিপেক্ষিতেই গত ২৯ অক্টোবর থেকেই হরতাল পরবতীতে ৩১ তারিখ থেকে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ০২ তারিখ পর্যন্ত পালন করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিএনপির ডাকা তিন দিনের কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তপ্ত ছিলো নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন। প্রথমদিন থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শহরেসহ মহাসড়কগুলো দখল করে দেখেছিলেন যার কারণে বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীই সকাল সকাল বের হয়ে তাদের কর্মসূচি পালন করে আবার বাসায় চলে যেতেন। যার কারণে আওয়ামী লীগ শোডাউন দিয়ে কাউকেই শহরে দেখতেন না। কিন্তু প্রথম দিন আড়াইহাজার ও শেষ দিন রূপগঞ্জে, সোনারগাঁয়ে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জানা গেছে অবরোধের শেষ দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদলের দুইকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৮ নেতাকর্মীকে। গত দুইদিনের চেয়ে বৃহস্পতিবার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের তৎপরতা ছিল বেশি। গত বৃহস্পতিবারও সিদ্ধিরগঞ্জে শিমরাইল ও সাইনবোর্ডে অর্ধশতাধিক দুরপাল্লার বাসের কাউন্টার বন্ধ ছিল। এসব কাউন্টার থেকে দুর পাল্লার বাসের কোন টিকিট বিক্রি হয়নি। জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের ডাচবাংলা ব্যাংক ও মাদানি নগর এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মামুন মাহমুদের অনুসারী নেতাকর্মীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ সময় পুলিশ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক টিএইচ তোফাসহ ৪ জনকে আটক করে। একই সময় সিদ্ধিরগঞ্জের সাজেদা হাসপাতালের সামনে জেলা কৃষকদলের নেতাকর্মীরা ৩টি বাস ভাঙচুর ও টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে। এবং ১০-১৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এছাড়া ও সকাল ৬টার দিকে ফতুল্লায় থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোঃ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের দাপা বালুর ঘাট এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে পোস্ট অফিস বাসস্ট্যান্ড ঘুরে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। অপরদিকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি জনাব আজহারুল ইসলাম মান্নানের নির্দেশনায় সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা নদীতে নৌপথ অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে নেতাকর্মীরা। সকালে সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদীর বৈদ্দ্যেরবাজার, আনন্দবাজার, নুনেরটেক এলাকায় সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি, শ্রমিক দল, জাসাস, মৎস্যজীবী দলের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ নৌপথ অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করেন। সকাল সোয়া ৬টার দিকে ছাত্রদল নেতা মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা রূপগঞ্জের কুসাবো এলাকার এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা একটি গাছ ভর্তি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান গতিরোধ করে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে গাড়িতে আগুন ছড়িয়ে যায়। পরে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে দিতে বিক্ষুব্ধরা সামনে এগুতে থাকে। পরে পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া করে এবং শট গানের গুলি ছুড়ে। ঘটনাস্থল থেকে ওই ৪জনকে আটক করে। আটকদের মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়। দুপুরে রূপগঞ্জে ঢাকা বাইপাস মহাসড়কে অবরোধের সমর্থনে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অগ্নিসংযোগ করেছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। জেলা স্বেচ্চাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম ও সদস্য সচিব সালাহউদ্দিন সালুর নেতৃত্বে এ মিছিল হয়। এ সময় অবরোধের সমর্থনে নানা স্লোগান দিয়ে দীর্ঘক্ষন মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে নেতাকর্মীরা। আবার দুপুরে শহরের কালিবাজার এলাকায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউছুফ খান টিপুর নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় তারা সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। পরে তারা একটি বাস ভাংচুর করে এর পাশাপশি প্রথম দিনের আড়াইহারের রণক্ষেত্রের ঘটনায় আড়াইহাজারের গ্রেপ্তার ১০ নেতা। এ নিয়ে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের ৭ থানায় দফায় দফায় মামলা করেছে পুলিশ জানা গেছে, প্রায় আঠশো নেতাকর্মী এই ভাংচুর ও হামলায় আসামী হয়েছে। আর ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে শতাধিক নেতাকর্মীরা ও বেশি। সব মিলিয়ে হামলা ও মামলা-গ্রেফতারে নেতাকর্মীরা ছন্নছাড়া বিএনপির অধিকাংশ নেতাই। এদিকে আজকে থেকে ৫/৬ তারিখ ৪৮ ঘন্টার অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি তাকে ঘিরে নেতাকর্মীরা সর্বদা প্রস্তুত এমনটাই শোনা যাচ্ছে। এখন নেতাকর্মীদের আশঙ্কা এবার আরো মামলা বৃদ্ধি হবে ও গ্রেফতারের সংখ্যা ও আরো ভাবার আশঙ্কা রয়েছে।