আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৎপর
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আগামী জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ বিএনপির রাজনীতির মাঠ এখন টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। তৃতীয় বারের মত অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। কিন্তু বিপরীতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ অবরোধকে প্রতিরোধ করার জন্য রাজপথে থেকে শান্তি মিছিল করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দল বিভিন্ন নির্বাচনের প্রচারনা করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের এমপিরা রাজধানী ঢাকার কর্মসূচি থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ে সভা সমাবেশ সহ নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। এমপিদের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের-৫টি আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা রাজপথে নেমে সক্রিয় রয়েছে। সেই সাথে দলীয় নমিনেশন পেতে দৌঁড়ঝাপ করে যাচ্ছে। এদিকে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়ার দাবী জানিয়ে আসছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। কেননা নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মাঝে ৩টিতে নৌকার সংসদ সদস্য রয়েছে। বাকি দুটি আসন জাতীয় পার্টির দখলে রয়েছে। রূপগঞ্জ আসনে রয়েছে নৌকা মনোনীত সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর। একই সাথে তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। টানা তিনবারের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচতি হয়ে মন্ত্রী গাজী জনপ্রতিনিধি হিসেবে এখানে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তবে এবার রূপগঞ্জ আসন থেকে পরিবর্তনের দাবী জানিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুঁইয়া নৌকার মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছে। তিনিও নৌকা পেতে দৌঁড়ঝাপ করছেন। তবে মন্ত্রী গাজী ছাড় দিতে নারাজ। আড়াইহাজার আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু। ২০০৮ সন থেকে টানা তিনবারের মত ক্ষমতাসীন দলের নৌকা মনোনয়ন পেয়ে এখানে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এছাড়া তিনি আড়াউ হাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তবে আগামী নির্বাচনে এমপি বাবুর জায়গায় সাবেক সচিব মমতাজ উদ্দিন এবারও নৌকা পেতে মাঠে আলোচনায় রয়েছেন। তবে উড়ে এসে জুড়ে বসে প্রার্থী হতে চান আড়াইহাজার এলাকার বাসিন্দা কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান মোল্লা। স্থানীয়দের মতে, এলাকায় তেমন একটা পরিচিত নেই। তবে দলের মাঝে আলোচনা হচ্ছে এবার মমতাজ উদ্দিন কিংবা চতুর্থবারের মত নজরুল ইসলাম ছাড় না দিয়ে দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন। আর এজন্য তিনি এবার আগে থেকে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল পারভেজও সক্রিয় ভাবে মাঠে রয়েছেন। তিনি নৌকার মনোনয়ন চাইবেন। জানা যায়, সোনারগাঁ আসনটি টানা দুইবারের মত জাতীয় পার্র্টির দখলে রয়েছে। ২০১৪ সনে এই আসনে জাতীয়পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তবে আগামী নির্বাচনে এই আসনটি কোন ভাবেই ছাড় দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। এখানে নৌকার মনোনয়ন পেতে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ কায়সার হাসনাত নৌকা পেতে পুরোদমে মাঠে রয়েছেন। তার সাথে পাল্লা দিয়ে কোন অংশে পিছিয়ে নেই এই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। এছাড়া সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া নৌকার মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষনা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। তাছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী নৌকার প্রার্থী হবেন বলে জানান দিয়েছে। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান পুরোদমে মাঠে রয়েছেন। ইতোমধ্যে বিশাল মিছিল দলীয় সভানেত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের নজর কেরেছেন। যদিও তিনি নৌকার নমিনেশন না পেতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। তবে গত ৮ নভেম্বর সাংসদ শামীম ওসমান মাঠে নামার ঘোষনা দিয়েছেন। সেই সাথে এলাকার মানুষের সাথে কথা বলার জন্য প্রতটি এলাকায় যাবেন বলে জানান। তবে এই আসনে শামীম ওসমানের বিকল্প আওয়ামী লীগ হতে শক্তিশালী তেমন প্রার্থী নেই। যদিও এখানে কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাউসার আহম্মেদ পলাশ মাঠে রয়েছে। তবে সাংসদ শামীম ওসমান এখানে প্রার্থী না হলে তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন আলোচনায় রয়েছেন। তারও ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি দীর্ঘ দিন জাতীয় পার্টির দখলে থাকায় এই আসনটি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের ক্ষোভ রয়েছে। তাই তারা আগামী নির্বাচনে এই আসনটিতে নৌকার প্রার্থী পেতে জোড়ালো ভাবে দাবী জানিয়ে আসছেন। ২০০৮ সনে সদর-বন্দর আসনটিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের শরীক দল জাতীয় পার্টি থেকে প্রয়াত নাসিম ওসমান সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। পরে তিনি ২০১৪ সনে মারা গেলে তার আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনীত হয়ে সেলিম ওসমান সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৮ সনেও একই ভাবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম ওসমানই এখানে এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু আগামী নির্বাচনে সদর-বন্দর আসনে মনোনয়ন পেতে মাঠে সক্রিয় ভাবে নৌকার দাবী জানিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু। তিনি জোরালো ভাবে এখানে নৌকার প্রার্থী দেয়ার জন্য নেত্রীর কাছে দীর্ঘদিন যাবৎ দাবী জানিয়ে আসছেন। সেই সাথে বিএনপির অবরোধ বিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভাবে মাঠে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তার সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আলোচনায় রযেছেন। তাছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. আবুু হাসনাত মো. শহিদ বাদলও এখানে নৌকার মনোনয়ন চাইবেন। সেই সাথে তিনি এখানে নৌকা প্রার্থী দেয়ার দাবী তুলেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে, আগামী নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান এমপি থেকে শুরু করে দলীয় নেতৃবৃন্দ নৌকার মনোনয়ন পেতে মাঠে সক্রিয় ভাবে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সেই সাথে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সখ্যতা রেখে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে জানান দিচ্ছে। তবে আর কয়েক দিন পরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা হতে পারে। আর এজন্য শেষ মুহুর্তে এসে তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে দৌড়ঝাঁপ বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে কে মনোনয়ন পাবে তা একমাত্র নেত্রীই সিদ্ধান্ত দিবেন। নির্বাচন কমিশন সুত্র মতে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরে ওই সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধানের ১২৩ (৩) (ক) অনুযায়ী মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই হিসেবে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।