আজ মঙ্গলবার | ১২ আগস্ট ২০২৫ | ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৭ সফর ১৪৪৭ | দুপুর ২:৩৭

রাজনৈতিক অস্থিরতায় বেড়েছে কারাবন্দি

ডান্ডিবার্তা | ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ | ৩:০৭ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে নির্বাচনের। বলছি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে শেষ মুহূর্তে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আটঘাট বেঁধে নির্বাচনে যাওয়ার কথা ভাবলেও বিরোধীরা এখনও দোলাচলে। তারা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এখনও রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী এখন কারাবন্দি। সরকারবিরোধীদের অভিযোগ, সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। খোদ পুলিশের তথ্য বলছে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা এবং পরবর্তীতে হরতাল-অবরোধের জেরে বাসে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় সারাদেশে প্রায় ৯ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর এসব অভিযোগের মামলায় তাদের পাঠানো হচ্ছে কারাগারে। ফলে কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার তুলনায় বন্দির সংখ্যা এখন অনেক বেশি। এই অবস্থায় কারাবন্দিদের মানবাধিকার রক্ষা করা হচ্ছে কতটুকু- এমন প্রশ্ন অনেকের। প্রতিদিনই নানা অপরাধে আসামিদের গ্রেফতার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনা ঘটছে অহরহ। দেশে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে কারাগারগুলোতে আগে থেকেই বন্দির সংখ্যা ধারণক্ষমতার বেশি। তবে রাজনৈতিক সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযানে গ্রেফতারের কারণে কারাগারগুলো এখন বন্দিতে ঠাসা। অনেকে বলছেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরুর পর থেকে সারাদেশেই বন্দির সংখ্যা আরও বাড়ছে। কারা সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬৮টি কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা প্রায় ৪৩ হাজার হলেও ১২ নভেম্বর পর্যন্ত কারাবন্দি ছিলেন প্রায় ৮৯ হাজার। যেখানে গত ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নিজেই জানিয়েছিলেন কারাগারে বন্দি ৭৭ হাজারের কিছু বেশি। দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় ও ৫৫টি জেলা কারাগারসহ মোট ৬৮টি কারাগার চালু রয়েছে। এসব কারাগারে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত বন্দি সংখ্যা ৮৮ হাজার ৭৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৫ হাজার ৬৭৭ জন এবং নারী ৩ হাজার ৬৫জন। অথচ কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬৬ জনের। পুরুষ কারাবন্দির ধারণ ক্ষমতা ৪০ হাজার ৯৩৭ জন এবং নারী এক হাজার ৯২৯ জন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) বন্দি ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বন্দির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে অনেককে গাজীপুরের কাশিমপুরে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারপরও সেখানে ৯ হাজারের বেশি কারাবন্দি রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক মামলার আসামি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, গত ২৮ অক্টোরব থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে এক হাজার ৯৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী যে সংখ্যক বন্দি থাকার কথা তার চেয়ে বেশি রয়েছে। তবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েকদিন আগে যে চাপ ছিল তার তুলনায় বন্দির সংখ্যা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। আমাদের অতিরিক্ত যে বন্দি ছিল তাদের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখন বন্দি কমই আছে।’ কারা সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৬৮টি কারাগারের জন্য কারা অধিদপ্তরের চিকিৎসক পদ ১৪১টি। অথচ কারা অধিদপ্তরের অধীনে নিজস্ব মাত্র তিনজন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি সব কারাগারে চিকিৎসা চলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সংযুক্ত চিকিৎসকদের মাধ্যমে। এতে বন্দিদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। কারাগারগুলোতে কারাবন্দিরা থাকা, খাওয়া, ঘুম, চলাফেরাসহ নানা সমস্যায়ও পড়েন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস, চুলকানি, জ্বর, কাশি, কিডনি, লিভারজনিত সমস্যাসহ নানা রোগে ভোগেন কেউ কেউ। কারাগার সংশোধনাগার না হয়ে যেন সংকটস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘কারাগারে যারা থাকেন তাদেরও মানবাধিকার আছে। তাদের থাকা, খাওয়া সবকিছু নিশ্চিত করতে হবে কারাগার সংশ্লিষ্টদের অর্থাৎ সরকারের। এখন এক জায়গায় যদি ৫ জন থাকার ব্যবস্থা থাকে সেখানে ১০ জনকে রাখা হয়, তাহলে ১০ জনেরই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। কারাবন্দির অধিকার নিশ্চিত করেই ধারণক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়। ২০ জনের একটি টয়লেটে যদি আরও ২০ জন যোগ হয় তাহলে তারা কতক্ষণে টয়লেটে যাবেন। এতে তাদের স্বাস্থের ওপরই প্রভাব পড়বে। জায়গার অভাবে হয়তো ঘুমাতে পারছে না, এমন আরও অনেক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু গ্রেফতার তো সরকার কমাচ্ছে না। বিষয়গুলো সরকারের বিবেচনা করা দরকার। গ্রেফতার করে যদি লোক বেশিও রাখতে চায় তাহলে তাদের জায়গার ব্যবস্থা করা উচিত।’ আইনের শাসনের দুর্বলতার কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক নেতাদের যেসব অপরাধে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে তারা সবাই সেসব অপরাধে জড়িত নাকি রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে- সে প্রশ্ন রয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে বিরোধী মতকে দমন করা হয়। অতীতে যারাই ক্ষমতায় থেকেছে তাদের সময়েও একই রকম হয়েছে। এখন যেসব মামলায় কারাগারে পাঠাচ্ছে সেগুলো আইনের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মামলাগুলো কীভাবে হয়েছে তা নিয়ে নানান আলোচনা রয়েছে। মামলাগুলোর পেছনে রাজনৈতিক প্রভাবের যে অভিযোগ তা তো রয়েছেই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দল নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। বিরোধীপক্ষ থেকে পরিস্থিতি অস্থির করা আর সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা- এমনটাই চলে আসছে। আমাদের গণতন্ত্র পড়ে গেছে এই দুটো প্রক্রিয়ার মাঝখানে। সে কারণে আমাদের এত অসুবিধা। সামনের দিনে কারাগারে বন্দির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আর এই গ্রেফতার দিয়ে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।’




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা