আ’লীগের সামনে নির্বাচনী পরীক্ষা!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট ২০১৮ সালে আওয়ামীলীগের সাথে থাকা জাতীয়পার্টিই এবার দ্বাদশ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামীলীগের পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে। গত নির্বাচনে যেখানে আওয়ামীলীগের পক্ষে কাজ করেছে জাপা, আবার জাপার পক্ষে কাজ করেছিল আওয়ামীলীগ। এখন পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসার কোন ইঙ্গিত না দিলেও এবার আলাদা ৩০০ আসনেই জাতীয়পার্টি প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত ২০ নভেম্বর থেকে জাতীয়পার্টি তাদের মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে মনোনয়নপত্র বিক্রি। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের দুটিতে সোনারগাঁ ও সদর-বন্দর আসনে জাতীয় পার্টির এমপি রয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সাথে জাতীয় পার্টির আসন ভাগাভাগিতে সোনারগাঁ আসনে লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি নির্বাচিত হন। এবং সদর-বন্দর আসনে সেলিম ওসমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দুটি আসনেই প্রার্থী দেয়নি আওয়ামীলীগ। তবে এবার আলাদাভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই জাতীয়পার্টি প্রার্থী দিচ্ছে। ইতিমধ্যে সোনারগাঁ আসনে জাতীয়পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, অতিরিক্ত মহাসচিব (ঢাকা বিভাগ) লিয়াকত হোসেন খোকা এবং সদর-বন্দর আসনে জাতীয়পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম ওসমান এবং ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন খোকা মোল্লা মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এছাড়া রূপগঞ্জ আসনে মনোনয়নপত্র কিনেছেন দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। এছাড়া আড়াইহাজার থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন জাতীয়পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর শিকদার লোটন, আড়াইহাজার উপজেলা জাতীয়পার্টির সভাপতি এম.এ হান্নান এবং জাপা নেতা হেলাল উদ্দিন। আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমানের আসনে জাপার মনোনয়নপত্র কেনা জাতীয়পার্টির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন খোকা মোল্লা বলেন, আমি গতবারও মনোনয়পত্র কিনেছিলাম। কিন্তু মহাজোটের কারণে দলীয় সিদ্ধান্তে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। এবার জাতীয়পার্টি আগের চাইতেও ভালোভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছে, নির্বাচনে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। তবে শামীম ওসমানের আসনে জাতীয়পার্টি থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন আশির দশকের সরকারী তোলারাম কলেজের ছাত্র নেতা ও সদর উপজেলা জাতীয়পার্টি সচিব কাজী দেলোয়ার হোসেন। সোনারগাঁ আসনে আওয়ামলীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন ১৬ জন। তার বিপক্ষে জাতীয়পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা জয়ের ব্যাপারে অনেক আশাবাদী। তার কর্মী সমর্থকদের ভাষ্য গত ১০ বছরে যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছেন খোকা তা দেখেই এখানকার মানুষ তাকে জয়ী করবে। সদর-বন্দর আসনে আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির সাথে সখ্যতা থাকা ওসমান পরিবারের সেলিম ওসমান দুই মেয়াদের সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন। এবার এই আসনে আওয়ামীলীগ নেতৃবন্দ তাকে ছাড় না দেয়ার ঘোষণা অনেক আগেই দিয়েছেন। ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপুসহ আরো বেশ কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতা সেলিম ওসমানকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রুখে দেয়ার জন্য মাঠে নেমেছেন। অবশ্য সেলিম ওসমানের সাথে জাতীয়পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত সাবেক সাংসদ নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান নির্বাচনে না আসার কথা জানিয়েছেন। এদিকে রূপগঞ্জ আসনে আওয়ামীলীগের হেভীওয়েট প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাপার প্রার্থীও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। যদিও এই আসনে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাইও মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তাছাড়া রূপগঞ্জ ও সদর-বন্দর আসনের দুটিতেই মনোনয়নপত্র কিনেছেন সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ও বর্তমান তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব এড. তৈমূর আলম খন্দকার। আড়াইহাজার আসনেও নির্ভার থাকার সুযোগ নেই আওয়ামীলীগের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর। কেননা, তার সাথে তার পূর্ব প্রতিদ্বন্দ্বি জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজসহ আরো কয়েকজন মনোনয়নপত্র কিনেছেন। জাতীয়পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর শিকদার লোটন জাপার মনোনয়ন কিনে নির্বাচনে অংশ নিলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের সবকটি আসেন জাতীয়পার্টিকে ছাড় না দেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামীলীগ তা ভালো করেই গ্রহণ করেছেন জাতীয়পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক ভোটব্যাংক রয়েছে জাপার। এবার নির্বাচনে তা প্রমাণ মিলবে। গত বৃহস্পতিবার জাতীয়পার্টির মনোনয়নপত্র সংগহ করার শেষ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার থেকে আগামী ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীদের স্বাক্ষাতকার শেষ করে মনোনয়পত্র চূড়ান্ত করবে জাপা। আগামী ২৬ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকা বিভাগে প্রার্থীদের স্বাক্ষাতকার গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য যে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ নভেম্বর ২০২৩ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ, রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ ০১-০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, প্রার্থীতা প্রত্যাহারে শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ এবং ভোটগ্রহণের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৪।