সদর-বন্দর আসন নিয়ে চলছে মেরু করণ!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তাদের দলীয় মনোনীত ২৯৮ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে গত রোববার বিকালে। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও বাকী রাখা হয়েছে শহর ও বন্দর নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে চলছে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন। বিশেষ করে আওয়ামীলীগ, জাতীয় পাটি ও নবাগত তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা নানা হিসেব কষছেন আসনটি নিয়ে। কেউ বলছেন, আসনটি জাতীয় পাটিকেই দেয়া হবে কেউ বলছেন তৃণমূল বিএনপিকে কেউ বলছেন আওয়ামীলীগকে। সূত্রমতে, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পাটির মনোনীত প্রার্থী এই আসনে এমপি হয়। বরাবরই স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা নৌকার প্রার্থী দেয়ার দাবি জানিয়ে বিগত নির্বাচনগুলোতে দলীয় মনোনয়ন পত্র কিনলেও তাতে সায় দেয়নি দলের হাইকমান্ড। ফলে পর পর তিনবার নির্বাচিত হয়ে আসনটি জাতীয় পাটি পাকাপোক্ত করে নেয়। এখন তৃণমূল বিএনপিকে আসনটি ছেড়ে দিলে জাতীয় পাটির অবস্থান কি হবে, এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। শেষ পর্যন্ত আসনটি জাতীয় পাটি ধরে রাখলে তৃণমূল বিএনপি তথা তৈমূর আলম কি করবেন। আবার কেউ বলছেন, আসনটি তৃণমূল বিএনপিকে ছেড়ে দিলে জাতীয় পার্টি তথা প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার ওসমান পরিবারের ভুমিকা কি হবে। যেহেতু নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর সেলিম ওসমান এই আসনে জাতীয় পাটির বর্তমান এমপি। তারা কি তৈমূরকে ছাড় দিবেন? আবার কেউ বলছেন এমন পরিস্থিতিতে হয়তো আওয়ামীলীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। তাদের মতে, বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় কেউ যেন নির্বাচিত হতে না পারে, সেদিকে নজর দিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিরোধীদল না আসা সাপেক্ষে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করতে প্রয়োজনে আসন উন্মুক্ত করা হবে। বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় কেউ যেন নির্বাচিত হতে না পরে। সেক্ষেত্রে একাধিক ডামি প্রার্থী রাখতে মত দেন দলীয় প্রধান। ফলে এই আসনে যে কেউ প্রার্থী হয়ে যেতে পারে শেষ পর্যন্ত। এদিকে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার তার পৈত্রিক নিবাস রূপগঞ্জ থেকে তার দলের মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এবং গত শুক্রবার বিকালে রূপগঞ্জে এক নির্বাচনী প্রস্তুতি সভায় তিনি বলেছেন, আমি আমাদের মার্কা সোনালী আঁশ ‘পাট’ প্রতীক নিয়ে এই আসনে নির্বাচন করবো। কিন্তু গত রোববারের ঘোষণায় আওয়ামীলীগ তাদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর নাম ঘোষণা করেছেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে তৈমূর আলম এখন কি করবেন? তবে তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন যেহেতু আওয়ামীলীগ সদর-বন্দর আসনে তাদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা দেয়নি সেহেতু সেখানে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলমকে আসনটি ছেড়ে দিবে। এদিকে গতকাল সোমবার জাতীয়পার্টি থেকে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। একটা গুঞ্জন ছিল সেলিম ওসমান আওয়ামীলীগের যোগ দিয়ে এই আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন। ফলে শেষ পর্যন্ত এই আসনে জাতীয়পার্টি, তৃণমূল বিএনপি ও আওয়ামীলীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই বলেন, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমরা বরাবরই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করে আসছিলাম। অবশেষে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনে আমাদের দলীয় লোককে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তার জন্য আমরা নেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তবে সদর-বন্দর আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি আওয়ামীলীগ। আশাকরি কয়েকদিনের মধ্যেই সদর-বন্দর আসনের বিষয়ে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামীলীগের জোট রয়েছে বিদায় আসনটি জাতীয়পাটিকে দেয়া হয়েছে। এবং গত তিনটি নির্বাচনে এখানে জাতীয় পাটির এমপি নির্বাচিত হয়েছে। এবার নতুন করে তৃণমূল বিএনপি আওয়ামীলীগের সঙ্গে জোটবব্ধভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে তৃণমূল বিএনপি আসনটি চাইতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার রূপগঞ্জ থেকে তাদের দলীয় মনোনয়ন কিনেছে। সে সদর-বন্দর আসনে আসবে কেন? তার আসন তো রূপগঞ্জ। আর যদি মহাজোটের মাধ্যমে নির্বাচন হয় তাহলে ২০১৮ সালের মতো আমাদেরকে ছাড় দিতে হবে। তবে শেষ পর্যন্ত আসনটি কাকে দেয়া হবে তার সিদ্ধান্ত এককভাবে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) উপর।