আজ মঙ্গলবার | ১২ আগস্ট ২০২৫ | ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৭ সফর ১৪৪৭ | ভোর ৫:৫৪

মদনপুরে এক ডজন খুনের বিচার হয়নি!

ডান্ডিবার্তা | ০২ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ৫:০৩ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর সন্ত্রাসীদের জনপথ খ্যাত মদনপুর নিয়ন্ত্রণ করছে কে। এক সময়ের আলোচিত তারকা সন্ত্রাসীদের কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রনে আনে প্রশাসন। প্রশাসনের কঠোর ভূমিকার কারনে দীর্ঘদিনের আতংকের নগরীকে সন্ত্রাসমুক্ত করলেও উদ্ধার করতে পারেনি অবৈধ অস্ত্রগুলো। আলোচিত সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করলেও তাদের সেই স্থানগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে কে বা কারা। কামু, সুরুত আলী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় সরকারদলীয় নেতারা। পরিবহন সেক্টর, সরকারি জায়গা দখল, মাদক সেক্টরর নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। বিগত ২০ বছরে মদনপুরে খুন হয়েছে ২২ জন সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করলেও উদ্ধার করতে পারেনি অবৈধ অস্ত্রগুলো। সেই অস্ত্র ভান্ডার ও বাহিনীকে কে বা কারা নিয়ন্ত্রণ করছে তা সকলেও জানলেও সরাসরি মুখ খুলতে সাহস পায়নি স্থানীয় লোকজন। কারন মদনপুর চিরচেনা একটি সন্ত্রাসী এলাকা। এখানে নুনের চেয়ে খুন ছিল সস্তা। প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণ করলেও উদ্ধার করতে পারেনি অবৈধ অস্ত্র ভান্ডার। যে অস্ত্র ভান্ডারসহ ওই বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে একাধিক বাহিনী গঠন করেছে সরকার দলীয় ২/৪ জন। যা প্রশাসন ইচ্ছে করলে সহজে সকল কিছু বের করতে পারবে। গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করলে মদনপুরকে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ উপহার দিতে পারে। মদনপুর ইউনিয়নের ৯টি ওর্য়াডের কোন সেক্টর কোন নেতা বা কার আত্মীয় স্বজনদের কাছে জিম্মি তা একেবারে পরিস্কার। এখনো অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি কানে ভাসে। আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের সাড়াশি অভিযানের দাবী এলাকাবাসীর। এক সময় সন্ত্রাস ও খুনের ভয়ানক নগরী ছিলো নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দরের মদনপুর তথা উত্তরাঞ্চল। এখানে নুনের চেয়ে খুন ছিলো সস্তা। অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানী, কথায় কথায় খুন-খারাবি, চাঁদাবাজী, ডাকাতি, লুটতরাজে লিপ্ত হতো এখানকার সন্ত্রাসীরা। শুধু মদনপুর নয় রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে কাজ করতো এরা। তৎকালীন সময়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী কামরুজ্জামান কামু ও সুরত আলী ওরফে সুরুজ আলী বাহিনী উত্তরাঞ্চলে রাজত্ব করতো। এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দুই বাহিনীর মধ্যে ছিলো তুমুল বিরোধ। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের প্রায় দেড় ডজন সন্ত্রাসী ও পরিবারের সদস্যরা নংসশ খুনের শিকার হয়েছে। মদনপুরের শীর্স সন্ত্রাসী ও কুখ্যাত সুরত আলী বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড কাবিল কে বন্দর থানা পুলিশ আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী কামুর বোন রেহেনা হত্যা মামলায় গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেইসাথে দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনীর অবৈধ অস্ত্র ভান্ডার উদ্ধারের দাবি উঠেছিল জানা গেছে, ২০০৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর বন্দর থানার মদনপুর ছোট সাহেব বাড়ী এলাকায় সুরত আলী বাহিনীর ব্রাশ ফায়ারে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় নুরুজ্জামান (৩২) ও বাবুল (৪৫) দুভাই। এই জোড়া হত্যাকান্ড কামু-সুরতআলী বাহিনীকে মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে আসে। দুপক্ষই বিপুল অবৈধ অস্ত্রের মজুদ করে একদিকে হত্যার প্রতিশোধ অপরদিকে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা অব্যাহত রাখে। জোড়া খুনের পর সুরত আলী বাহিনী এলাকা ছাড়লে পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় কামু বাহিনী। এরইমধ্যে ৫ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে জামায়াতের এমপি তাহেরকে তার মিলের ভেতরে ঢুকে প্রাকাশ্যে গুলি করে সন্ত্রাসী কামু (নিহত)। এতে তাহেরের বডিগার্ড পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনার পর জামায়াতের এমপি তাহের কামু বাহিনীকে নিশ্চিহৃ করতে সুরত আলীকে এলাকায় ফিরিয়ে আনে। তখন ৪টি হত্যাসহ ৪৪টি মামলার ওয়ারেন্ট থাকার পরও সুরত আলী এলাকায় ঢুকে নিয়ন্ত্রণ গ্রহন করে। ২০০৪ সালের অক্টোবরে কামুদের বাড়ীতে ঢুকে তার বোন নিলুফা (৫০)কে প্রকাশ্যে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে সুরত আলী বাহিনী। কিছুদিন পর আরেক বোন রেহেনা (৪২) কে কেওঢালা থেকে অপহরন করে নয়াপুর এলাকায় নিয়ে প্রথমে গুলি করে আহত করার পরম মাইক্রোবাসের চাকায় পিষ্ট করে নির্মমভাবে হত্যা করে। কথিত আছে আশির দশকে কামুর বাবাকে ট্রাকের চাপায় এবং মা-কে বাড়ীতে ডুকে কুপিয়ে হত্যা করেছিলো সুরত আলী বাহিনী। ২০০২ সালে কামুর ভাইয়েরা মিলে কুপিয়ে হত্যা করে সুরত আলীর বড়ভাই বাতেন ভেন্ডারকে। এভাবে পাল্টাপাল্টি খুন আর সন্ত্রাসের কবলে পড়ে বন্দর থানার উত্তরাঞ্চল তথা মদনপুরের কামু-সুরত আলী বাহিনীর নৃশ^ংসতার কথা প্রিন্ট মিডিয়ার ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ২০০৫ সালে কামুর বড়ভাই আবুল সোনারগাঁয়ের নয়াপুরে ভয়ানক প্রতিপক্ষ সুরত আলীকে হত্যা করে তার মাথাটি কেটে বাজারের ব্যাগে করে নিয়ে অলিপুরা কবরস্থানে ফেলে যায়। সুরত আলীর মৃত্যুর পর বাহিনীর দায়িত্ব নেয় তারই সেকেন্ড ইন কমান্ড কাবিলা ও মকবুল। মকবুল ও কাবিলার নেতৃত্বে সুরত আলী হত্যার প্রতিশোধ নিতে ২০০৫ সালের মে মাসে খুন হয় কামুর আরেক সহযোগী দেলোয়ার। এর কিছুদিন পর পুলিশের সাথে ক্রসফায়ারে নিহত হয় মকবুল। এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় কাবিলা। বাইরে অবস্থান করে অপর সহযোগী মুরগী খলিলকে দিয়ে সুরত আলী বাহিনীকে সংগঠিত করে কাবিলা। অপরদিকে কামু বাহিনীর দায়িত্ব নেয় তার ছোটভাই মনু। স্থানীয়রা জানায়, মুলত রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায় মদনপুর সন্ত্রাস ও খুনের ভয়াল জনপদে পরিণত হয়েছিলো। এরপর সন্ত্রাস দমনে র্যাব গঠন ও পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় খুনোখুনীতে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাওয়া বহুল আলোচিত কামু-সুরত আলী বাহিনীর নাম মুছে যায়। তবে এই কুখ্যাত বাহিনীর অস্ত্র ভান্ডার মদনপুরেই কয়েকজনের কাছে রক্ষিত আছে। এদের অন্যতম কাবিলা ও খলিল মেম্বার। এ দুজন মদনপুরে জুটি হিসেবে পরিচিত এবং বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে যুক্ত। সন্ত্রাসী কাবিলা স¤প্রতি নয়াপুর এলাকায় তার বাহিনী ভাড়ায় গিয়ে ৩টি পিস্তল উচিয়ে স্থানীয় আক্কাস আলীকে হত্যার হুমকি দেয় এবং চাঁদা দাবি করে। এ ঘটনায় সন্ত্রাসী কাবিলার বিরুদ্ধে শত শত গ্রামবাসী গণ স্বাক্ষর দিয়ে পুলিশ মহা পরিদর্শকের দফতরে প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ দাখিল করেছিল। সর্বশেষ কাবিল ওরফে কাবিলা বিএনপির হওয়ায় ও তার মূল ছায়াদাতা সুরজ মিয়া। যাকে অনেকে আদৌ চিনেন না। মদনপুরের সুরুজ মিয়া একটি আতংকের নাম। কামু-সুরুত বাহিনীর অবসানের পর নিজে তেরি করে একটি গ্রæপ। কাবিল ওরফে কাবিলা সেই গ্রæপের অন্যতম প্রধান। যার বিরুদ্ধে জোড়া খুনসহ বহু মামলা রয়েছে। মদনপুর হতে এশিয়ান হাইওয়ে রোডের পশ্চিমপাশের জায়গা দখল করতে যায় সুরুজ মিয়া। স্থানীয় কবি বাতেন বাহারের দখলের জায়গা জোরপূর্বক দখল করতে গিয়ে ব্যার্থ হয়। ওই জায়গা সুরুজ মিয়া লালিত ক্যাডার কাবিল ড্রেজার দিয়ে ভরাট করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয় ঠান্ডা মাথার কিলার সুরুজ মিয়া। ত্রাস কাবিলকে সরিয়ে দেয়। আর কাবিলা বিএনপির হওয়ায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারীতে পরে। সুরুজ মিয়া তার নিজস্ব লোক দিয়ে গড়ে তুলে বিশাল একটি ত্রাস বাহিনী। তার ভায়রা ছেলে আমির হোসেনকে দিয়ে গড়ে তুলে আরেক ত্রাস বাহিনী। কাবিলা নীরব হলেও আমির হোসেনকে দিয়ে ত্রাসের আরো ২ টি গ্রæপ করে। যে গ্রæপে সেভেন মার্ডারে মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত আসামী নূর হোসেনের ১০/১৫ জন সন্ত্রাসী রয়েছে। যে কারনে ২০১৯ সালের শুরু হয় মদনপুরের অরজগতা ও খুনাখুনি দিয়ে। মদনপুরে সন্ত্রাসীদের হাতে আহত হয় বন্দর থানা পুলিশের একাধিক সদস্য। হোসিয়ারি শ্রমিক আশিক হত্যাকান্ড, বাবু নামের একজন আহত হয়। যে ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে গিয়ে বন্দর থানার ওসি আজহার হোসেনকে প্রত্যাহার করে নেয় জেলা পুলিশ। পুনরায় শুরু হয় রক্তপাত দিয়ে। যার ফলে বছর জুড়ে নানা বিষয়ে আতংকের নগরী ছিল মদনপুর এলাকা। আলোচনায় থাকলেও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ব্যার্থ হয়েছে প্রশাসন। উত্তরাঞ্চল তথা মদনপুর ইউনিয়ন, নাসিক ২৭নং ওর্য়াডসহ ধামগড় ইউনিয়নের কয়েকটি ওর্য়াড এলাকায় এখনো চলছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, ঝুট সেকেন্ড নিযন্ত্রণ, ভূমিদস্যুতায় ব্যবহার হচ্ছে ওই সমস্ত অবৈধ অস্ত্রগুলো। বন্দরের উত্তরাঞ্চলে এক সময় যে ভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলছিল বর্তমানে প্রেক্ষাপটে অন্য স্ট্যাইলে চলছে। আগে চলতো খুন খারাপি আর এখন চলে নীরবে সকল কার্যক্রম। গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারির পাশাপাশি র্যাবের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল। পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজির অভিযোগে র‌্যাব-১১ একাধিক অভিযানে গত বছর প্রায় ডজনখানিক মামলা করে। মামলা, চাঁদাবাজি ও অস্তিত্ব রক্ষার্থে বছরজুড়ে নানা ঘটনায় আলোচিত ছিল মদনপুর। মদনপুর থেকে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করলেও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের তেমন কোন অভিযান দেখা মিলেনি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি এলাকাবাসী।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা