১৪ দলে গৃহদাহ শুরু

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আসন বণ্টন, মনোনয়ন নিয়ে ১৪ দলের মধ্যে অসন্তোষ ক্রমশ প্রকাশ্য রূপ লাভ করছে। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে আদর্শিক জোট হিসেবে পরিচিত ১৪ দল বড় ধরনের সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আওয়ামী লীগ এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। শুধুমাত্র ১৪ দলের শরিক হাসানুল হক ইনুর জন্য কুষ্টিয়ার একটি আসন ছেড়ে দিয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির নেতা সেলিম ওসমানের জন্য নারায়ণগঞ্জের আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই দুই আসনে আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থী দেয়নি। কিন্তু অন্যান্য ১৪ দলের নেতাদের জন্য আসন ছাড়া হয়নি। শুধু তাই নয়, এই সমস্ত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। তারা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। এই সমস্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ফলশ্রæতিতে ১৪ দলের অন্যান্য নেতাদের কি হবে, তা নিয়ে ক্রমশ সংকট তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে। ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান রাশেদ খান মেনন ঢাকার মতিঝিল আসন থেকে নির্বাচন করতেন। কিন্তু এবার তিনি ওই আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন না, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। রাশেদ খান মেনন বরিশালের দুটি আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিভিন্নসূত্র বলছে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া আগে রাশেদ খান মেনন দুইবার আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং সেখানে তিনি বলেছিলেন যে, এবার নির্বাচন করতে চান না। তার বদলে তার স্ত্রীকে যেন মহিলা কোটায় এমপি করা হয়। এবং সেই সমঝোতার ভিত্তিতেই রাশেদ খান মেননের ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী বাহাউদ্দিন নাছিমকে। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই রাশেদ খান মেনন পাল্টে যান। তখন তিনি ঢাকার আসনটি পাওয়ার জন্য আবার দেনদরবার শুরু করেন। কিন্তু ততক্ষণে যা হবার হয়ে গেছে। এখন রাশেদ খান মেননকে বরিশালের আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে হবে। কিন্তু বরিশালের দুটি আসনেই আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে এবং এই আসনগুলো থেকে যদি আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রত্যাহারও করে তাহলেও সেখানে রাশেদ খান মেননের জন্য এক কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হবে। কারণ এই দুটি আসনের একটিতে স্বতন্ত্র হয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন সাদিক আব্দুল্লাহ। অন্য আসটিতেও আওয়ামী লীগের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। ফলে এরকম পরিস্থিতিতে বরিশালে রাশেদ খান মেননের টিকে থাকা কতটুকু সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওয়ার্কার্স পার্টির আরেক নেতা ফজলে হোসেন বাদশারও আসন নেই। সেই আসনে আওয়ামী লীগের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন সূত্র গুলো বলছে, শেষ পর্যন্ত এই আসনটিতে হয়তো আওয়ামী লীগ ছাড় দিতে পারে। তবে জাসদের আরেক নেতা শিরীন আখতারের ফেনীর আসনে আওয়ামী লীগ কোনরকম ছাড় দেবে না। ওই আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আলাউদ্দিন মোহাম্মদ নাসিমকে ইতোমধ্যে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। শিরীন আখতারকে বলা হয়েছে যে, তিনি যেন অপেক্ষা করেন। পরবর্তীতে তাকে মহিলা আসনে নিয়ে আসা হবে। বিভিন্ন জায়গায় ১৪ দলের যে শরিকারা প্রার্থী হয়েছেন তারা এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করতে চান। ১৪ দলের বিভিন্ন শরিকরা অন্তত ৫০টি আসন দাবি করছেন। আওয়ামী লীগ তাদেরকে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০টি আসন দিতে আগ্রহী। ফলে আসন নিয়ে ১৪ দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে গৃহদাহ। এই গৃহদাহ মিটিয়ে আওয়ামী লীগ কিভাবে ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখবে? নির্বাচনের আগে সেটিই একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে।