কঠোর কর্মসূচির পথে বিএনপি

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গণ ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠা শুরু করেছে। একদিকে নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়ে নিবার্চনে অংশ নিতে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। অপরদিকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলন করতে গিয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি রাজপথের সবচাইতে বড় বিরোধী দল বিএনপি। গত একমাস যাবৎ কঠোর আন্দোলনে বিএনপির নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে সামনে কয়েকবার ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে ও দফায় দফায় শুধু অবরোধে সীমাবদ্ধ রয়ে আছে দলটি। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিলের সময় শেষ হয়ে আসায় বিএনপির কয়েকজন সাবেক নেতারা মনোবল হারিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলেও মূল ধারার বা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখনো জনগণের ১ দফা দাবি আদায়ে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিএনপির একাধিক সূত্র। এদিকে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সাথে তাল মিলিয়ে এবার কঠোর আন্দোলনের দিকে ঝুঁকতে চাচ্ছে দলটি। ইতিমধ্যে কয়েক দফা অবরোধের পর আজকে থেকে নব দফার অবরোধের কর্মসূচি শুরু হতে যাচ্ছে, এই কর্মসূচিকে ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি রেখেছে। নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, আজকের কর্মসূচি অবরোধ বিগত দিন থেকে আরো কঠোরভাবে পালন হবে, আর যেহেতু বিএনপির নেতাকর্মীদের নামের মামলা বিশাল আকার ধারণ করেছে সেই ক্ষেত্রে গ্রেফতার এড়িয়েই আন্দোলন জোরদার করতে চায় বিএনপি। সূত্র বলছে, সরকার পতনের আন্দোলনে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর থেকে গত ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত কয়েক দফায় ডেট লাইন দিয়ে গেছে। কিন্তু ডেট লাইন দিয়ে তারা আরো মামলায় পিষ্ট হচ্ছেন আর কিছুই না। এছাড়াও হরতাল ও অবরোধেও চমক দেখানোর কথা থাকলেও নিশ্চুপই দেখা গিয়েছে বিএনপিকে। এদিকে তফসিল ঘোষণা হওয়া থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিগত দিন থেকে আরো নিষ্ক্রিয় হয়ে পরেন। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা দাবি করেছিলেন তফসিল ঘোষণার পর পর ‘অসহযোগ’ কর্মসূচি পালন করবে। কিন্তু বিএনপির কোন নেতাকর্মীদের কঠোর কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি শুধু ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ ছিলো অবরোধ। এমন করে একে একে অষ্টম দফার অবরোধ শেষ করেছে বিএনপি। এদিকে ডিসেম্বর মাসের দিকে বিএনপির টার্গেট ছিলো বলে জানা গেছে। তাছাড়া ইতিমধ্যে নির্বাচনী আমেজ তৈরি করতে মরিহা হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে গত মাসের ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন দাখিলের সময় ও শেষ হয়ে গেছে, এতে বিএনপির বহু নেতাকর্মীদের ‘কিংস পার্টির’ নেতারা বিএনপি থেকে ভেঙে নিয়ে আসতে চাইলে ও তারা তা পালনে সফল হয়নি। এটাকে বিএনপি তাদের প্রাথমিক বিজয় বলেই আখ্যা দিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিএনপির হাতে আর মাত্র সময় ১ মাস এই মাসের মধ্যেই বিএনপির ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের মাধ্যেমে তাদের দাবি আদায় করতে হবে এমনটাই বলছে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আজকে থেকে বিএনপির নবম অবরোধ কর্মসূচি শুরু হতে যাচ্ছে, এই কর্মসূচিকে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভাবছে বলে জানা যাচ্ছে তাদের দাবি বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে তাল মিলিয়েই আজকের কর্মসূচি কঠোর করা হবে। ইতিমধ্যে আজকে থেকেই বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে নবম দফা অবরোধের সমর্থনে মশাল মিছিল করেছেন। এদিকে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী এক কথায় বসে আছে যে নির্বাচন এবার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে এই বাংলাদেশের মাটিতে কোন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলেও নেতাকর্মীরা দাবি জানিয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভাষ্য দিয়ে যাচ্ছেন আজকের অবরোধ পালন হবে নজির বিহীন ভাবে। আর সামনে যত দিন যাবে কর্মসূচি আরো কঠোর হবে। এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহŸায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান যুগের চিন্তাকে বলেন, চলমান অবরোধের সমর্থনে ইতিমধ্যেই নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধের সমর্থনে মশাল মিছিল হয়েছে। আমরা আশা করছি বিগত দিনগুলো থেকে আগামী কালকের অবরোধ কর্মসূচি আরো কঠোর হবে সামনে আরো কঠোর থেকে কঠোর হবে, এই সরকারের পতনের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম বলেন, দিন যত যাবে আমাদের কর্মসূচি ধীরে ধীরে আরো কঠোর হবে, আমাদের অবরোধ কর্মসূচি রয়েছে সেটা সফল করতে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে, আমরা যথাযথভাবে রাজপথে থেকেই আমাদের আন্দোলন সফল করবো। রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাছির উদ্দিন বাচ্চু বলেন, আমরা আমাদের রূপগঞ্জের কোথাও অবরোধ ও হরতাল পালন করতে পারি না। অবস্থান করতে নিলেই পুলিশ সেখানে আমাদের উপর টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে আবার গুলিও করে এদিকে আওয়ামী লীগের লোকেরা আমাদের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন চালায়। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী আগামী কাল কঠোরভাবে অবরোধ সফলের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি আমরা পরিস্থিতি বুঝেই রাজপথে অবরোধ পালন করবো। মহানগর যুবদলের আহŸায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেন, বর্তমানে আমাদের কেন্দ্রীয় ঘোষিত দফায় দফায় সকল অবরোধ পালন করে আসছি, ইতিমধ্যে নেতাকর্মীরা কিন্তু ঘরে বসে নেই সকলেই কিন্তু আন্দোলনে আত্মগোপনে থেকেও রাজপথে রয়েছে। আমরা আশা করছি বর্তমান দেশের প্রেক্ষাপটের সাথে তাল মিলিয়ে শীঘ্রই আমাদের আরো কঠোর কর্মসূচি আসার পথে রয়েছে। দেশের জনগণ তাদের সফলতা কয়েকদিনের মধ্যেই লক্ষ্য করতে পারবে। যত দিন যাবে আমাদের আন্দোলন আরো কঠোর থেকে কঠোর হবে। জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বলেন, এই স্বৈরাচারী সরকার তাদের পুলিশ লীগ দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপরে দফায় দফায় মামলা-হামলা অবহৃত রেখেছে। কিন্তু বিএনপি তাদের এই মামলা ও হামলাকে ভয় পায় না, তারা এই মামলা ও হামলাকে উপক্ষো করেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পরছে। আমরা নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি তারা যাতে আগামী কালকের অবরোধ কর্মসূচি গ্রেফতার এড়িয়ে বিগত দিন থেকে আরো কঠোরভাবে পালন করে। আর আমরা আশাবাদী এই দেশের জনগণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের সাথে একতিত্র হয়ে অবরোধ পালনে রাজপথে থাকবে। মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব শাহেদ আহম্মেদ বলেন, আমরা বর্তমানে আন্দোলনে রয়েছি, আমাদের এই আন্দোলনকে ও দেশের জনগণের ভোট আবারো হরণ করার লক্ষে এই সরকার উঠে পড়ে লেগেছে, কিন্তু এবার আর কোন কাজ হবে না, এই সরকারের পতন অনিবার্য। আগামী কালকে শুধু নয় সামনের প্রস্তুতি দলীয় কর্মসূচি কঠোর থেকে কঠোরভাবে পালন করা হবে। জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান দোলন বলেন, আমাদের জেলা ছাত্রদল সংগঠনের কেউ রাজপথে আসুক বা না আসুক আমি রাজপথে আছি, যে কোন মূল্যে আমাদের কেন্দ্রীয় ঘোষিত অবরোধ সফল করতে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। ইতিপূর্বে যতগুলো অবরোধ কর্মসূচি কেন্দ্র ঘোষণা করেছেন। সবগুলো আমরা পালন করে এসেছি, আগামীকাল আমাদের আরেক কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অবরোধ রয়েছে এটা ও আমরা বিগত দিন থেকে আরো কঠোর পাবে পালন করবো ইনশাআল্লাহ।