আজ মঙ্গলবার | ১২ আগস্ট ২০২৫ | ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৭ সফর ১৪৪৭ | সকাল ৮:৫৭

স্বতন্ত্র প্রার্থী আতঙ্কে জোট প্রার্ধীরা

ডান্ডিবার্তা | ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট সদর-বন্দর আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমান। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতেই যেখানে জোটের প্রার্থীদের ভয় আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আতঙ্ক মনে করা হচ্ছে তার কোনটির সম্মুখীন হতেই হচ্ছে না তাকে। আর সদর-বন্দর আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এখন বোধ হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হিম্মতের অভাবটাই কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী শামীম ওসমান জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রেসিডিয়াম সদস্য সালাউদ্দিন খোকা মোল্লাকে নিয়ে চিন্তিত নন। চিন্তার যা কারণ ছিল তা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাউছার আহম্মেদ পলাশকে নিয়ে। তবে নারায়ণগঞ্জের বাকি তিনটি আসনে যে নির্বাচন জমজমাট হবে তা মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনে আসলে হয়তো সব প্রার্থীর তোড়জোড় আরো আগেই শুরু হয়ে যেত। সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ এবং আড়াইহাজার সংসদীয় আসন তিনটিতে জাতীয় পার্টি, আওয়ামীলীগ ও তৃণমূলের প্রার্থীরা এখনই ভোটের যুদ্ধের আভাস টের পাচ্ছেন। রূপগঞ্জ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী হেভীওয়েট হিসেবে যেখানে আগেই হাফ ছাড়ার কথা সেখনে নিস্তার নেই সারাদেশে রাজনীতিতে হ-য-ব-র-ল পাকিয়ে ফেলা তৃণমূল বিএনপির মহসচিব তৈমূর আলম খন্দকারের জন্য। এতো গেল ভিন্ন দলের কথা। গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে তিনি নিজেই যাকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক করেছেন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে গাজীর বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন শাহাজাহান ভূঁইয়া। গাজীর আতঙ্ক হয়ে জাতীয় পার্টির মনোনিত প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। আওয়ামীলীগের সাথে মহাজোটে থাকা জাতীয় পার্টি সদর-বন্দর আসন নিশ্চিত করার পর জেলার আরো তিনটি আসন দাবি করে বসে আছে আওয়ামীলীগের কাছে। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। সদর-বন্দর ছাড়াও আরো তিনটি আসন না পেলেও দুটিতে নিশ্চিত হতে চাচ্ছে জাতীয় পার্টি। গত তিন মেয়াদের জাতীয় নির্বাচনে ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান সংসদ নজরুল ইসলাম বাবু আড়াইহাজারে নিজের দাপট প্রতিষ্ঠা করেছেন বলা যায়। তবে বিএনপি না আসলেও এমন সমীকরণে তাকে পড়তে হবে তা তিনি ক্ষুন্নাক্ষরেও ভাবেননি হয়তো। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজ মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন বটে তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবার সাহস করতে পারেননি। তবে নজরুল ইসলাম বাবুর ভয় জোট জাতীয় পার্টিকে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর শিকদার লোটনকে আড়াইহাজার আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টি নারায়ণগঞ্জে দুটি আসন গত দুই নির্বাচনে ছাড় পেয়েছিল এবার তা টেনে নিতে চায় তিনি। সোনারগাঁ আসনে গত দুইবার জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামীলীগ। এবার এখানে আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বটে। তবে তার সাথে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামীলীগেরই চারজন। কায়সারের স্ত্রী রুবাইয়া সুলতানা, তার চাচাতো ভাই এরফান হোসেন দীপ, সোনরগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড.শামসুল ইসলাম ভূইয়ার ছেলে মারুফুল ইসলাম ঝলক এবং আওয়ামীলীগ নেতা এইচএম মাসুদ দুলাল। কায়সারের আগে আতঙ্ক স্বতন্ত্র প্রার্থী। তারপর জোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে ভয়। খোকা অধীর অপেক্ষায় আছেন জাতীয় পার্টির আসন ভাগাভাগির বিষয়ে। যদি তা হয় তবে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর সাথে অন্তত নির্বাচনে ভোটের মাঠে লড়তে হবে না। তবে আশঙ্কা অন্যভাগে জোটের বদৌলতে আওয়ামীলীগ যদি প্রার্থী সরিয়েও নেয় তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মোকাবেলা করাটাও কি অতো সহজ হবে প্রশ্ন থেকেই যায়। এবার নির্বাচনে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে আসন ভাগাভাগির সমঝোতার বৈঠক চলছে, সেই সমঝোতার বৈঠকে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন তারা এবার তেমন বাধা পাচ্ছেন না দলের পক্ষ থেকে। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির অসন্তোষের সীমা নেই। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আসন সংখ্যা কমানোর ব্যাপারে আপত্তি নেই। কিন্তু আপত্তি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উপস্থিতিতে। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের শরিকরা কেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে এত নেতিবাচক? কেন তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটের মাঠে চাচ্ছেন না? এর উত্তরে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভীতির একাধিক কারণ রয়েছে। যেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছে সেখানে যদি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বসে যান, তাহলে আওয়ামী লীগের যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী তার পক্ষে নৌকার নেতাকর্মীরা কাজ করবেন। এ ধরনের একটি শঙ্কা রয়েছে জাতীয় পার্টির। একইভাবে ১৪ দলের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও সেখানে তারা আওয়ামী লীগের কর্মীদের নির্বাচনের মাঠে পাবেন না। বরং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন। এরকম একটি বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ করা যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন, তারা আওয়ামী লীগের ভোটের একটি বড় অংশ কেটে নিতে পারে। জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের শরিকদের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। কাগজে কলমে জাতীয় পার্টি সংসদে প্রধান বিরোধী দল হলেও সারা দেশে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি অনেক দুর্বল এবং গত ১৫ বছরে ক্ষমতার চার পাশে থাকার কারণে জনগণের মধ্যেও তাদের ব্যাপারে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের বি টিম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বা একান্ত অনুগত বিরোধী দল হিসেবে তারা বিবেচিত হচ্ছে। যার জন্য আওয়ামী বিরোধী ভোটগুলো তারা পাবেন না, তাদের নির্ভর করতে হয় আওয়ামী লীগের ভোটে সমর্থন। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি আওয়ামী লীগের ভোটগুলো মোটা অঙ্ক নিয়ে যান তাহলে ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের জন্য একটি বড় ধরনের বিপদ তৈরি হতে পারে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে যে, জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের শরিকরা আশঙ্কা করছেন শেষ পর্যন্ত যদি স্বতন্ত্ররা নির্বাচনে থাকেন এবং নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে তাদের একটা বড় ধরনের ভরাডুবি ঘটার সম্ভাবনা আছে। এরকম ঝুঁকি তারা নিতে চান না।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা