আজ মঙ্গলবার | ১২ আগস্ট ২০২৫ | ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৭ সফর ১৪৪৭ | সকাল ৯:০৫

স্বতন্ত্র আতঙ্কে আ’লীগ প্রার্থীরা

ডান্ডিবার্তা | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির সাথে আসন ভাগাভাগি নিয়ে অগ্রগতি হয়নি। এখনো প্রতীক বরাদ্দের জন্য দুদিন বাকি থাকলেও আওয়ামীলীগ প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষ থেকেই এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। একদিনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন যারা পেয়েছেন তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে চিন্তিত। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সাথে যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা বলছে সেখানেও যদি আওয়ামী লীগ ছাড়ও দেয় তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত হবে তা নিয়ে সুরাহা করতে পারছে না। আওয়ামীল লীগ বলছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে তারা বিরত রাখতে পারেন না। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তারা নিজ দায়িত্বেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। সদর-বন্দর আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী দেয়নি। ফলে এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমান নূন্যতম যে প্রতিদ্ব›িদ্বতার সম্মুখীন হবেন তা তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এড. আবদুল হামিদ খান ভাষানীর সাথে। এই আসনে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন মনোনয়ন কিনলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সাহস দেখাননি। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে দলীয় ব্যবস্থা নেবেনা জানালে মনোনয়ন কেনা প্রার্থীরা আফসোসে দিন পার করছেন। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে শামীম ওসমানের সাথে শ্রমিক লীগ নেতা কাউছার আহম্মেদ পলাশ মনোনয়নপত্র কিনলেও আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় শামীম ওসমানকে। শামীম ওসমানকে সমর্থন দিয়ে পলাশ আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। যার ফলে শামীম ওসমানের বিপরীতে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সালাউদ্দিন খোকা মোল্লাই মনোনয়ন কেনা প্রার্থীদের মধ্যে শক্তিশালী। সোনারগাঁ আসনে গত দুই নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছিলো আওয়ামীলীগ। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার বিপরীতে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতকে এবার মনোয়ন দেয় আওয়ামীগ। তবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থীর মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এই আসনে কায়সার হাসনাতের স্ত্রী রুবাইয়া ইসলাম, চাচাতো ভাই এরফান হোসেন দীপ, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সামসুল ইসলাম ভূঁইয়ার ছেলে মারুফুল ইসলাম ঝলক ও কেন্দ্রীয় নেতা এএইচএম দুলাল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন কিনেছেন। তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে এই আসনে এই নির্বাচন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে। রূপগঞ্জ আসনে গত তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)। তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিও। এবারের নির্বাচনে তিনি আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে বিধি বাম। এবারের নির্বাচনে কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার সদর-বন্দর আসন থেকে নির্বাচন না করে রূপগঞ্জ আসনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন। এটুকু হলেও দ্বিপাক্ষিক ভোটযুদ্ধ দেখা যেত। তবে স্বতন্ত্র প্রাথী হওয়ার জন্য যখন রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান ভূঁইয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচন দাঁড়ান তখন এখানে ত্রিপক্ষীয় ভোট যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে। জাতীয় পার্টিও বসে নেই, এই আসনে এবার জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ হাড্ডাহাড্ডি করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আড়াইহাজার আসনে গত তিন নির্বাচনে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়ে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম বাবু। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজ মনোনয়ন কিনলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি। তবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর শিকদার লোটন নির্বাচনী মাঠে থাকায় এই আসনেও জমজমাট ভোটযুদ্ধ আশা করা যাচ্ছে। গত দুটি নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে দুটি আসন নিয়ে জাতীয় পার্টি সন্তুষ্ট থাকলেও এবার তারা জেলা তিন থেকে চারটি আসনে ছাড় চায় আওয়ামী লীগের কাছে। তবে সর্বশেষ তিনটি কারণে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন সমঝোতা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর দিয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে প্রথম যে বিষয়টি তা হল স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার দাবি। জাতীয় পার্টি থেকে বলা হয়েছে যে, তাদেরকে যে আসনগুলো ছেড়ে দেওয়া হবে সেই আসনে আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতে পারবে না। আওয়ামী লীগ এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। আওয়ামী লীগ বলেছে যে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দায়দায়িত্ব আওয়ামী লীগ নিতে পারেন না। তারা বিদ্রোহী স্বতন্ত্র। কাজেই তাদেরকে বসিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার আওয়ামী লীগের নেই। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচটি বৈঠকের প্রত্যেকটিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়টি সামনে এসেছে এবং এটি নিয়ে আওয়ামী লীগ তার অনড় অবস্থান পরিষ্কার করেছে। দ্বিতীয়ত, আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নিয়েও জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা হয়নি। জাতীয় পার্টি ৬০টি আসন দাবি করেছে। আওয়ামী লীগ তাদেরকে সর্বোচ্চ ৪১টি আসনে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আশ্বস্ত করেছিল। এই ৪১টি আসনে নৌকা প্রতীকের কোন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবে না। কিন্তু জাতীয় পার্টি মনে করছে যে, তাদের ৬০টি আসন প্রাপ্য। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন যে, তারা (জাপা) যে ৬০টি আসন চাচ্ছে তা অযৌক্তিক। আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, জাতীয় পার্টির ৬০টি আসন পাওয়ার মতো সাংগঠনিক অবস্থানে নেই। এখন। এমনকি ৩০টি আসনেও জাতীয় পার্টির শক্তিশালী অবস্থান নেই। এরকম পরিস্থিতিতে ৬০টি আসনে আওয়ামী লীগ কোনো ভাবেই ছাড় দেবে না বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তৃতীয়ত, রওশন এরশাদের সাথে সম্পর্ক। গণভবনে রওশন এরশাদের যাওয়া এবং সেখানে জিএম কাদেরসহ জাতীয় পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে নালিশের বিষয়টিকে জাপার বর্তমান নেতৃত্ব ইতিবাচক ভাবে নেয়নি। জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন যে, এভাবে একজন রাজনৈতিক দলের নেতার কাছে যেয়ে নালিশ করা কোনোভাবেই শিষ্টাচার সুলভ নয়। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির কোনো সাংগঠনিক নেতা নন। কাজেই তার বক্তব্য গুরুত্বহীন। এই সব কিছু মিলিয়ে ভয় জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব পরিষ্কার হচ্ছে। আওয়ামী লীগ যদিও মনে করছে যে, জাতীয় পার্টির আগামী নির্বাচনে সরে যেতে পারে। কিন্তু জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দাবি করেছেন যে, নির্বাচন থেকে তারা সরে যাবে না। কারও পরামর্শে তারা নির্বাচনে আসেনি। নিজের শক্তিতে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এর আগেও দাবি করেছেন যে, জাতীয় পার্টি এখন সাবালক এবং তার মতে, ১৯৯১ সালের মতো এবার নির্বাচনে চমক তৈরি হবে। মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন যে, ভোটারদের মধ্যে আওয়ামী বিরোধী ভোটার সংখ্যা বেশি। সবকিছু মিলিয়ে তিনি দলকে নির্বাচনমুখী করতে চাইছেন। কিন্তু তিনি দলকে যতই নির্বাচনমুখী করুন না কেন, সমস্যা অন্য জায়গায়। জাতীয় পার্টির যারা প্রার্থী, তারা মাঠের বাস্তবতা সম্পর্কে অবহিত আছেন। ৪/৫টি আসন ছাড়া কোথাও যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকে তাহলে জাতীয় পার্টি যে ভালো করতে পারবে না এটি তারা ভালো মতোই জানে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোন রকম সমঝোতায় যাওয়ার পক্ষপাতী নয়, বরং তিনি নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার পক্ষপাতী।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা