আজ মঙ্গলবার | ১২ আগস্ট ২০২৫ | ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৭ সফর ১৪৪৭ | সকাল ৮:৪৩

নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবনা

ডান্ডিবার্তা | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব ঢাকা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার পথ। ডিসেম্বর মাস হলেও শীতের আমেজ এখনো তেমন বোঝা যাচ্ছে না। ব্যানার-পোস্টার, বা ফেস্টুন আর তোরণও তেমন না থাকলেও নির্বাচনের হাওয়া টের পাওয়া যায়। চায়ের দোকান বা আড্ডার জায়গাগুলোতে ছোটখাটো আলাপ চারিতা ছাড়া ভোট নিয়ে তেমন আর আগের মত আলোচনা শুনা যায় না। তরুন ভোটাররা এবার কি ভাবছে নির্বাচন নিয়ে। সিদ্ধিরগঞ্জের চাষাড়ায় সরকারি তোলারাম কলেজ এবং সরকারি মহিলা কলেজের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ শহীদ মিনার। সেখানেই কয়েকজন শিক্ষার্থী আড্ডা দিচ্ছিলেন, যারা সবাই এবার প্রথমবারের মত ভোট দেবেন। তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, নির্বাচনে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কী? সবাই একবাক্যে জানিয়েছেন, স্থানীয় ইস্যুই তাদের প্রধান বিবেচ্য। মেয়েদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় রাস্তাঘাটে। ফলে আমাদের নিরাপত্তা একটি বড় বিষয়। এখানকার রাস্তাঘাট মেয়েদের জন্য একেবারেই নিরাপদ না, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর। যে নির্বাচিত হবে তাকে নিশ্চিত করতে হবে, মেয়েরা যেন যেকোনো সময়ে যেকোনো জায়গায় নির্ভয়ে যেতে পারে। এখানকার সড়কের অবস্থাও খুবই বেহাল, যে কারণে রোজ দীর্ঘ সময় জ্যামে বসে থাকতে হয়, সেই সঙ্গে দুর্ঘটনাও ঘটে প্রচুর। কিন্তু সেদিকে নজর নাই প্রার্থীদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা নিয়েও কেউ চিন্তিত না, বছরের মাঝখানে নতুন নতুন সিলেবাস দেয়া এবং তার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নেয়া সহজ নয় মোটেও। কয়েকজন শিক্ষার্থী আক্ষেপ করে বলছিলেন, তাদের আসনের জনপ্রতিনিধি কিংবা যারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, এ বিষয়গুলোতে তাদের গুরুত্ব তেমন নেই। তারা অনেক বেশি স্থানীয় বা জাতীয় রাজনীতি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের অনেকেই আমার সঙ্গে অন-রেকর্ড কথা বলতে চাননি। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মোট ভোটার সাড়ে ছয় লাখ, এর মধ্যে নতুন ভোটারের সংখ্যা ১৭ হাজার আটশো দশ জন। শিল্পাঞ্চল বলে এখানকার ভোটারদের বড় অংশটি বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক এবং সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষজন। ফতুল্লার পঞ্চবটীতে বিসিক শিল্প এলাকার শ্রমিকদের কাছে এই মুহূর্তে নির্বাচনের ইস্যুর চাইতেও বড় নিজেদের মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারটি। ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর হয়েছে সরকার নির্ধারিত নতুন মজুরি কাঠামো, আর তা নিয়ে অখুশি শ্রমিকেরা। কিন্তু নির্বাচনের আগে এ নিয়ে নতুন কোন আন্দোলন বা মালিক-পক্ষের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা হবে এমন আশাও নেই। ফলে এক ধরণের হতাশাও আছে। কিন্তু ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ এই আসনটির ভাগ্য নির্ধারণে এই ভোটাররা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। তবু নির্বাচন নিয়ে তারা উচ্ছ¡সিত, আর সাধারণ শ্রমিকদের কাছে নির্বাচনে প্রার্থীর চেয়ে মার্কা গুরুত্বপূর্ণ, এমনটি বলেছেন আমাকে অনেক শ্রমিক। সাংবাদিক দেখে সরে গেলেন অনেকে, তবে, কয়েকজন বলছিলেন তাদের নির্বাচন ভাবনা। আমরা চাই আমাদের বেতন ও সুবিধাদি বাড়াবে, কিন্তু সরকার যে আন্দাজে বেতন বাড়াইছে, তাতে তো আমাদের চলে না। “সবার ঝোঁক যেদিকে থাকবে, সেদিকেই যাব, একটা ভোট নষ্ট করে তো লাভ নাই। আমি যারে চিনি, তারেই ভোট দেব, কারণ সে আমার বিপদে আপদে দাঁড়াবে, সুবিধা অসুবিধা নিয়া সে সাহায্য করতে পারবে। পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের একজন নেতা এবার নির্বাচন করছেন, কিন্তু শ্রমিকদের অনেকে মনে করেন তার নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা কম, ফলে তিনি শ্রমিকদের খুব একটা কাজে আসতে পারবেন না। এদিকে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে অনেকে। নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে একটি ব্যাপার বোঝা গেছে, তা হলো সংবাদ মাধ্যমে রাজনীতি বা নির্বাচন নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে চান না। রাজনৈতিক নেতাদের বিরাগভাজন হবার আশংকায় অনেকেই অন-রেকর্ড কথা বলতে চাননি। তাদের অনেকে আমাকে বলেছেন, নির্বাচনের দিন ভোটের পরিবেশ অর্থাৎ নির্বিঘেœ ভোট দেয়া যাবে কিনা তা নিয়ে তারা সংশয়ী। এর কারণ হিসেবে স্থানীয় রাজনীতিতে বর্তমান সংসদ সদস্যের প্রভাব, এ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির বাইরে প্রার্থী দেয়া, এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অর্থাৎ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা উল্লেখ করেছেন তারা এমনকি বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে চলমান আন্দোলনের কারনে নারায়ণগঞ্জবাসীর মাঝে উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। যেমনটা বলছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক, সুজনের নারায়ণগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা। “সাধারণ ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে, কিন্তু তারা সে সুযোগটা হয়ত পাবে না, এমনটাই আমাদের আশংকা। প্রথমত হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জে একটি দলের প্রার্থী, তাদের ক্যাডার বাহিনী, তারা নানাভাবে ভোটকেন্দ্র প্রভাবিত করবে।” “দুই প্রশাসনের কাছ থেকেও তারা ব্যাপক সহযোগিতা পাবে, এর প্রমাণও আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি। আর তিন নম্বর ব্যাপার হচ্ছে, নির্বাচনের রেজাল্টের ক্ষেত্রে অর্থাৎ ভোটটাকে তুলে নিয়ে আসতে পারবে, প্রতিপক্ষ দলের এমন ক্ষমতা নেই। নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস ও মাদকের নগরী বলা হয়, সেটা নিয়ে কোন প্রার্থীই কার্য্যকর ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। এই আসনটির মূল দুটি এলাকা ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা রয়েছে অনেকদিন ধরেই। স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান নানা ইস্যু নিয়ে আলোচিত-সমালোচিত এবং বিতর্কিত। কিন্তু শেষবার অর্থাৎ ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হবার পর থেকে এলাকার উন্নয়নে তিনি বেশ কিছু কাজ শুরু করেছেন। এর বাইরে অন্য যে কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন, তাদের ব্যপারে সাধারণ ভোটারদের পরিষ্কার মতামত বোঝা যায়নি। সেক্ষেত্রে এখানে দলের বা জোটের প্রতীক বড় ভূমিকা রাখবে। যেমন এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়া অনেক প্রার্থী তেমন একটামপরিচিত নন। কিন্তু এসব হিসাব-নিকাশ ছাড়িয়ে নির্বাচনে মূল বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠবে, পছন্দসই প্রার্থীকে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারার সুযোগের বিষয়টি, বলছিলেন, স্থানীয় প্রবীণ সাংবাদিক রনজিৎ মোদক। এই আসনে একবার বিএনপি আসে একবার আওয়ামী লীগ আসে। ২০০৮ এর আগে এখানে বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন, তখন এলাকার তেমন উন্নয়ন হয়নি। এরপর চিত্রনায়িকা কবরী সংসদ সদস্য ছিলেন, তখনও তেমন একটা অগ্রগতি হয় নাই। কিন্তু শামীম ওসমান আসার পর কিছু কাজ হয়েছে।”এখন জনগণ উন্নয়ন চায়, শ্রমিকেরা চায় তাদের মজুরি বাড়বে। কিন্তু তাদের মূল বিচার্য বিষয় হবে সুষ্ঠুভাবে তারা ভোট দেবে, তাদের পছন্দসই প্রার্থীকে। এখানে যাতে জোরজুলুম করার কোন অবকাশ না থাকে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা