রূপগঞ্জে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত রূপগঞ্জ আসন। ভোটের মাঠে ৯ জন থাকলেও দুই ‘হাই প্রোফাইল’ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারের কল্যাণে সবার দৃষ্টি রূপগঞ্জে। তাঁদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে নির্বাচনী মাঠ সরগরম হয়ে উঠলেও গোলাম দস্তগীর গাজীর সাথে মূল লড়াইটা হবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিনবারের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়ার। ভোটারদের মতে এখন পর্যন্ত রূপগঞ্জে নির্বাচনী যে হাওয়া তাতে তৈমুর আলম খন্দকারকে তৃতীয় স্থান পেতে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সাথে লড়তে হতে পারে। রূপগঞ্জ ঘুরে চায়ের আড্ডায় ও মানুষের জটলায় এই ৪ প্রার্থীর নামই ভোটারদের মুখে মুখে শোনা গেছে। ব্যানার-পোস্টারেও দেখা গেছে এই ৪ প্রার্থীর উপস্থিতি। এখানে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এ কে এম শহিদুল ইসলাম ও জাকের পার্টির মো. জোবায়ের আলম থাকলেও প্রচারণায় তাঁদের দেখা যাচ্ছে না। ভোটের মাঠে আরও আছেন স্বতন্ত্র ‘ডামি প্রার্থী’ গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম মোর্তুজা, গাজী পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান ও জয়নাল আবেদীন চৌধুরী। রূপগঞ্জ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। স্থানীয়রা জানান, গত ১৫ বছর আগে যখন গোলাম দস্তগীর গাজী সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব নেন তখন অনেকটায় অবহেলিত জনপথ ছিল এই রূপগঞ্জ। সেই ‘মফস্বল’ রূপগঞ্জের একটা অংশকে তিনি আজকে দেশের সবচেয়ে আধুনিক শহরে রূপান্তর করেছেন তিনি। যদিও সমানভাবে রপগঞ্জের সব এলাকায় উন্নয়ন না হওয়ার অভিযোগ করছেন গাজী বিরোধী পক্ষের। তাঁদের দাবি রপগঞ্জে আলোর নিচে অন্ধকারও আছে। রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ও সদর ইউপি এলাকায় এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগার অভিযোগ তাঁদের। পাশপাশি সন্ত্রাস ও মাদক মোকাবেলায় গোলাম দস্তগীর গাজীকে অনেকটাই ব্যর্থ বলছেন তারা। তবে ভোটারদের ভরসায় এখনো আছেন গোলাম দস্তগীর গাজী। সৎ, পরিচ্ছন্ন ও নির্বাচিত হলে আবারও মন্ত্রী হবেন গাজী এমন আলোচনায় ভোটের মাঠে এগিয়ে আছেন তিনি। কেটলি প্রতীকে নির্বাচন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিনবারের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া। গুঞ্জন রয়েছে দেশের একটি প্রভাবশালী বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর আশীর্বাদপুষ্ট প্রার্থী তিনি। তিনবারের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাধে নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে তাঁর। পাশাপাশি গাজী বিরোধী ভোট তাঁর পক্ষে থাকবে বলে স্থানীয় ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। তাঁর পাশে আছেন কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম ও দাউদপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার। আবাসন ব্যবসায় যুক্ত সেই বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রূপগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ রয়েছে। পাশাপাশি নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করছেন বলে আওয়ামী লীগের ভোটাররা তাকে ‘বেইমান’ বলছেন। তারপরেও স্থানীয় ভোটাররা বলছেন ভোটের মাঠে চমক দেখাবেন তিনি। কিংস পার্টি খ্যাত তৃনমূল বিএনপির কেন্দ্রীয় মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার জন্মসূত্রে রূপগঞ্জের সন্তান। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে ভোট করে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। শহরে তাঁর বড় রাজনৈতিক পরিচয় ও কর্মী বাহিনী থাকলেও রূপগঞ্জে তাঁর সেই প্রভাব নেই বলে অভিমত স্থানীয়দের। স্থানীয়রা বলছেন রূপগঞ্জে তৃনমূল বিএনপির কোন অস্তিত্ব নেই, নেই কোন কর্মী বাহিনী। তাঁর প্রচারণায় তাই তিনি কর্মী সঙ্কটে ভুগছেন। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে ভোটের মাঠে কোণঠাসা তৈমুরের ভরসা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় তাই বারবার প্রধানমন্ত্রীর ‘কমিটমেন্ট’ শব্দ ব্যবহার করছেন। তাঁর কর্মীদের আশা জাতীয় প্রেক্ষাপটে যদি তাকে ‘ছাড়’ দেয়া হয়। তা নাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনে ‘গায়েবি ভোটে’ জিততে হবে তাকে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলামের আপন ভাই। রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা ও ভোলাব, দাউদপুর এলাকায় তাঁদের নিজস্ব পারিবারিক ভোট ব্যাংক রয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে তাঁর ভাই রফিকুল ইসলাম যেহেতু স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষে কাজ করছেন তাই ভোটের আগে তিনি শাহজাহানের সমর্থনে সরে যেতে পারেন। যদি তিনি শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকেন নৌকা বিরোধী বড় ভোটের অংশ তাঁর একাউন্টে জমা পড়বে বলে মত স্থানীয়দের। সেইক্ষেত্রে শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতা গড়ে তুলতে পারবেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে জিততে হলে গোলাম দস্তগীর গাজীকে এবার ঘাম ঝরাতে হবে। তবে এবার তাঁকে বিপদে ফেলতে পারেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ‘ঘরের শত্রæ’ শাহজাহান। জেলার অন্যান্য আসনের তুলনায় এখানে জমজমাট লড়াইয়ের আশা করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।