ভোটারদের আস্থা অর্জনে ব্যস্ত প্রার্থীরা
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট সোনারগাঁ আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা মহাজোটের শরীক দলের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হোন। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি আবারো এমপি নির্বাচিত হোন। সেই দীর্ঘ দশ বছরে সোনারগাঁয়ে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করেছেন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান। এর আগে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের মাধ্যমে সোনারগাঁয়ে শামীম ওসমানের প্রভাব রয়েছে। কিন্তু ওসমান পরিবারের অন্যতম ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি লিয়াকত হোসেন খোকা সোনারগাঁয়ে এমপি হওয়ার পর সোনারগাঁয়ের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রক ওসমান পরিবার। এরও আগে ২০০৮ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁ এলাকা নিয়ে গঠিত সোনারগাঁ আসনের এমপি হোন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত যিনি নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলয়ের রাজনীতিক হিসেবে পরিচিতি। মেয়র আইভীর সঙ্গে হাসনাত পরিবারের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কও রয়েছে। যার দরুন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের গত সম্মেলনে মেয়র আইভী তার বক্তব্যে কায়সার হাসনাতকে ফোকাস করে এবং এমপি খোকাকে নিয়ে নানান ধরণের মন্তব্য করেন ও হেয়প্রতিপন্ন করে মন্তব্য করেন। সেই খোকা যদি আগামী নির্বাচনে পরাজিত হোন তাহলে সোনারগাঁয়ের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রন হারাবেন ওসমান পরিবার। খোকা জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে থাকলেও ওসমান পরিবারের লোক হিসেবে পরিচিতি, কেউ কেউ ওসমান পরিবারের সদস্য হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। ঠিক যেমন শামীম ওসমানের বড় ভাই নাসিম ওসমান ছিলেন জাতীয় পার্টির এমপি এবং বর্তমান এমপি সেলিম ওসমানও জাতীয় পার্টির এমপি। সুতরাং এমপি খোকার পরাজয়ে শামীম ওসমান তার সোনারগাঁযের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রন হারাবেন এমনটা বিশ্বাস করছেন না সোনারগাঁয়ের সাধারণ ভোটাররা।
সোনারগাঁয়ের স্থানীয়রা মনে করেন এমপি খোকাকে বিজয়ী করতে পেছন থেকে না’গঞ্জের পরিবার কাজ করছেন। সোনারগাঁ পৌর যুবলীগের সভাপতি আসাদকে গ্রেপ্তার ও নৌকার সমর্থককে জরিমানা করার বিষয়গুলো নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। এ ছাড়াও গত ১০টি বছরে সোনারগাঁয়ের আমজনতার নেতা হয়ে ওঠেছেন এমপি খোকা। সাধারণ মানুষের খুব কাছাকাছি গিয়েছেন তিনি। ভোটের সংখ্যাও এখানে বেড়েছে তার। আর সেই সুবাধে এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় থাকলেই এমপি খোকার জয় নিশ্চিত। এ ছাড়াও জানাগেছে, গত নির্বাচনেও এমপি খোকাকে সহযোগীতা করেছেন সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান। শামীম ওসমান নিজের নির্বাচন ফেলে সোনারগাঁয়ে খোকার নির্বাচনের দিকে মনযোগী ছিলেন বেশি। এবার তার ব্যতয় হচ্ছেনা। খোকা তার নির্বাচনী ঘাট ঘুছিয়েই পুরোদমে ভোটের মাঠে নেমেছেন। স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও মনে করেন সোনারগাঁয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই খোকা বিজয়ী হবেন। অন্যদিকে স্থানীয় লোকজনকে হুমকি ধমকি ভয় ভীতি দেখিয়ে নৌকার পক্ষে আনার অপচেষ্টার কারনে নৌকার ভোট দিনকে দিন কমেই যাচ্ছে। এমন হুমকি ধমকির কারনে নৌকার প্রার্থী ও তার লোকজনের প্রতি মানুষ ভীত হয়ে ওঠেছে। যে কারনে সাধারণ মানুষের ভোটগুলো ঝুকছে লাঙ্গলের দিকে। এখানে বিএনপির বিপুল পরিমান ভোটও পাবেন এমপি খোকা। নৌকার প্রার্থী কায়সার হাসনাতকে নিরাপদ মনে করেনা এখানকার বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকেরা। কিন্তু এমপি খোকা সকলের জন্য নিরাপদ, সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই বিএনপির লোকজনও নেমেছে লাঙ্গলের পক্ষে। উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নুরুজ্জামান খান প্রকাশ্যে এমপি খোকাকে বিজয়ী করার ঘোষণা দিয়ে নেতাকর্মীদের শপথ পড়িয়েছেন। এ ছাড়াও যারা নির্বাচনে আসেনি এমন অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর ভোটও পাবেন খোকা। অন্যদিকে সোনারগাঁয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পিরোজপুর ইউনিয়ন ও কাঁচপুর ইউনিয়ন। এই দুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম ও মোশারফ ওমর সরাসরি নেতা হিসেবে শামীম ওসমানকেই মান্য করেন। এখানে খোকা এমপি না হলে এই দুটি ইউনিয়নের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ হারাবেন মাসুম ও মোশারফ। ফলে মাসুম ও মোশারফ নির্বাচনে কিছুটা থাকবেন ঢিমেতালেই। মোশারফ ওমরের ছোট ভাই বাবুল ওমর বাবুও শামীম ওসমানের কর্মী। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া শামীম ওসমানের ঘরের লোক হিসেবেই পরিচিতি। জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরুও শামীম ওসমানের কর্মী। সোনারগাঁয়ের দশটি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে শুধুমাত্র সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ভুঁইয়া ও মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু ছাড়া বাকি চেয়ারম্যানেরা শামীম ওসমানের অঙ্গুলী ইশারাতেই চলে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী সোহাগ রনিও ওসমান পরিবারের বিশ্বস্থ। ফলে শামীম ওসমানের ইশারাতেই নৌকার প্রার্থীর আশপাশের লোকজন খালি হয়ে যেতে পারে। ভোটের দিন এমনটা দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।