নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে মাঠে সহধর্মিণীরা!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ ৫টি আসনে হেভিওয়েট প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় তাদের সহধর্মিণীরাও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। স্বামীর পক্ষে উন্নয়নের ফিরিস্তি ও নানা প্রতিশ্রæতি তুলে ধরে ভোট চাচ্ছেন। বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের টার্গেট করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে তাদের গণসংযোগ, প্রচারপত্র বিলি ও উঠান বৈঠক। ফলে ভোটের মাঠে প্রার্থীদের সহধর্মিণীদের ভোট প্রার্থনা নতুন মাত্রাযুক্ত করেছে নির্বাচনী প্রচারণায়। তবে সবকিছুর নেপথ্যে রয়েছে ভোটের দিন নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানো। সরজমিন দেখা যায়, রূপগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীককে ভোটযুদ্ধে বিজয়ী করার জন্য প্রচারে নেমেছেন তার সহধর্মিণী তারাব পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী। গোলাম দস্তগীর গাজী একদিকে প্রচারণার গেলে অন্যদিকে যাচ্ছেন হাসিনা গাজী। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, প্রচারপত্র বিলি ও উঠান বৈঠক করছেন তিনি। এ সময় তিনি ভোটারদের বলেন তার স্বামী গত ১৫ বছর ধরে ৩ বারের সংসদ সদস্য। দীর্ঘ এই সময়ে তিনি রূপগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। উপজেলার এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আবারো তার স্বামী গোলাম দস্তগীর গাজীকে ভোট দেয়ার আহŸান জানাচ্ছেন। একই আসনে গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রতিদ্ব›দ্বী তৃণমূল বিএনপি’র মহাসচিব ও দলের মনোনীত প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে দিনরাত শ্রম দিচ্ছেন তার স্ত্রী ফারজানা হালিমা। তবে তিনি আলাদাভাবে প্রচারণায় না গেলেও প্রচারণার সময় স্বামীর পাশে থাকছেন। আড়াইহাজার আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর স্ত্রী আড়াইহাজার উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়মা আফরোজ ইভা সরকারি কর্মকর্তা হয়েও ভোটের মাঠে স্বামীকে বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছেন। যদিও সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তার স্বামীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ার কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে শোকজ করেছেন। তারপরও থেমে নেই তার প্রচার-প্রচারণা। নানাভাবে তিনি আড়ইহাজার উপজেলায় তার স্বামীর উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন ভোটারদের কাছে। এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তার স্বামী নজরুল ইসলাম বাবুকে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহŸান জানিয়েছেন। সোনারগাঁ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের নির্বাচনী প্রচারে নারীদের নিয়ে প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে সোনারগাঁ উপজেলা চষে বেড়াচ্ছেন তার স্ত্রী রুবিয়া সুলতানা। গণসংযোগ, প্রচারপত্র বিলি ও উঠান বৈঠক করছেন তিনি। ভোটারদের তিনি বলছেন, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার স্বামী এই আসনে সংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর ৫ বছর সোনারগাঁয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাই আবারো তার স্বামীকে ভোট দেয়ার জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন। একই আসনের দুই বারের নির্বাচিত জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকাকে আবারো ভোটের লড়াইয়ে বিজয়ী করতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গণসংযোগ, প্রচারপত্র বিলি ও উঠান বৈঠক করছেন তার স্ত্রী সোনারগাঁ উপজেলা জাতীয় মহিলা পার্টির উপদেষ্টা ডালিয়া লিয়াকত। গত ১০ বছরে সোনারগাঁয়ে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আবারো তার স্বামীকে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে তার নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তার স্ত্রী জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপি। প্রতিদিন শিডিউল মেইন্টেন করে সকাল-বিকাল দুই বেলা গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করছেন তিনি। তার বক্তব্যে দু’টি দিক প্রাধান্য পাচ্ছে। একটি হলো তার স্বামীর উন্নয়ন। দ্বিতীয়টি হলো ভোটকেন্দ্রে নারী ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানো। সদর-বন্দর আসনে একেএম শামীম ওসমানের বড় ভাই দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমানের স্ত্রী নাসরিন ওসমানের সরব উপস্থিতি রয়েছে নির্বাচনী মাঠে। তবে তিনি আলাদাভাবে কোনো প্রচারণায় যাচ্ছেন না। সেলিম ওসমানের সঙ্গে প্রচার-প্রচারণায় উপস্থিত থাকছেন। এদিকে প্রার্থীদের সহধর্মিণীদের প্রচার-প্রচারণায় নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে ভোট দিতে উৎসাহ বাড়ছে বলে জানান হেভিওয়েট প্রার্থীদের সহধর্মিণীরা। তাছাড়া নারী ভোটাররা প্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি তাদের মতবিনিময় করতে না পারলেও তাদের সহধর্মিণীদের মাধ্যমে তাদের চাহিদা উপস্থাপন করতে পেরে বেশ আত্মতৃপ্তি লাভ করছেন। প্রার্থীরাও তাদের সহধর্মিণীদের মাধ্যমে জেনে আশ্বাস দিচ্ছেন নারীদের বিভিন্ন সমস্যা ও চাহিদা বাস্তবায়ন করবেন নির্বাচিত হলে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ৭ই জানুয়ারি নারী ভোটারদের উপস্থিতি প্রমাণ করবে প্রার্থীদের সহধর্মিণীরা কতোটা উজ্জীবিত করতে পেরেছেন নারী ভোটারদের।