লাঙ্গলও নৌকায় চড়ে বসেছে
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকায় এবার লাঙ্গলও চড়ে বসেছে। তিনি বলেন, ১৫ বছর আমরা সরকারে। ২০০৮ সালে আমরা জয়লাভ করেছিলাম। সেদিন বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় ঐক্যজোট। আর আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে আমাদের মহাজোট। সেই নির্বাচনে শুধুমাত্র নৌকা মার্কায় আওয়ামীলীগ ২৩৩টা সিট পেয়েছিল। আর বিএনপি পেয়েচিল মাত্র ৩০টা সিট। বাকীগুলো আমাদের সঙ্গে যারা জোটে ছিল তারা পেয়েছে। তারপর থেকে কিন্তু বিএনপি আর নির্বাচনে আসতে চায় না। নির্বাচনে আসতে তারা ভয় পায়। যার জন্য তারা সন্ত্রাস করে। ২০১৪ সালের নির্বাচন বন্ধ করার জন্য ২০১৩ সাল থেকে তারা অগ্নি সন্ত্রাস শুরু করে। ৩ হাজারের বেশি মানুষকে তারা পুড়িয়েছে। এতে ৫০০ মানুষ মারা গেছে। ৩ হাজার ৮’শয়ের মতো যানবাহন পুড়িয়ে দিয়েছে। ওই জ্বালাও পোড়াও মানুষ খুন এটাই হচ্ছে বিএনপির একমাত্র গুণ। এটাই তারা পারে। আর কিছু পারে না। মানুষকে কিছু দিতে পারে না। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ইসদাইরে এ কে এম শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে শেষ নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ আহŸান জানান। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ এই জনসমাবেশের আয়োজন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রথম বেসরকারি খাতে ৩৬০ মেগাওয়ার্ট হরিপুরে এবং মেঘনাঘাটে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র করি। আমরা মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম। পরে সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে শুরু করি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে দেখি সেই বিদ্যুৎ কমে গেছে। সরকারপ্রধান বলেন, মানুষ সামনের দিকে যায় আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে দেশ পেছনের দিকে যায়। বিএনপির দু:শাসন, দুর্নীতি, মানুষ খুন, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা এবং ভোট চুরির জন্য এক কোটি ২৩ লক্ষ ভুয়া ভোটাদের ভোটার লিস্ট তৈরী করার কারণে মানুষ তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে সরকার গঠন করে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। যা আর কেউ বাড়াতে পারেনি। আগামীতে দেশের কোন মানুষ গৃহহীন, ভ’মিহীন থাকবে না। নির্বাচন যাতে না হয়, সে চক্রান্ত এখনো আছে। এসময় তিনি সবাইকে ভোট দিয়ে দেশে গণতন্ত্র আছে, তা প্রমাণ করার আহŸান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘কেউ দাবায় রাখতে পারবা না’। তো বাংলাদেশকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না। নির্বাচন ঘিরে অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হয়েছিল। নির্বাচন যাতে না হয়, সেই চক্রান্ত এখনো আছে। যেহেতু নিজেরা নির্বাচন করে জিততে পারবে না, কাজেই দেশের মানুষকে বঞ্চিত করতে চায় ভোটের অধিকার থেকে। তিনি বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটররা যখন একে একে ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন আবার তারা একই কাজ করতে চায়। আমরা বলেছি নির্বাচন হবে। আজ ৪ তারিখ। ৭ তারিখের নির্বাচনে আমি দেশের সবার কাছে অনুরোধ করব, সবাই শান্তিপূর্ণভাবে থাকবেন। তিনি আরও বলেন, আমরা আওয়ামী লীগই জনগণকে নিয়ে জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। এই টের অধিকার সাংবিধানিক অধিকার, সে অধিকার আমরা সংরক্ষিত করেছি। সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন, ভোট দিয়ে প্রমাণ করবেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান। ২০০৯ থেকে ২০২৩ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আজ আমরা ২০২৪ সালে পা দিয়েছি। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলে বাংলাদেশের এত উন্নতি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এখন মানুষ সেবা পাচ্ছে, বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আর বিএনপি সেখানে কী করে, আপনারা দেখেছেন। ২৮ অক্টোবর তারা কী ভয়ংকরভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। পুলিশকে ফেলে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স জ্বালিয়ে দিয়েছে, রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে, সে অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করেছে এবং সেখানে অনেক পুলিশ সদস্যকে আহত করেছে। ঠিক ২০১৩ সালে যেভাবে হত্যা করেছিল, ঠিক একইভাবে আবারো করেছে। তিনি বলেন, ঠিক প্যালেস্টাইনে (ফিলিস্তিন) ইসরায়েল যেভাবে হামলা করছে, হাসপাতালের ওপর বম্বিং (বোমাবর্ষণ) করছে, ঠিক বিএনপিও সেই ইসরায়েলকে অনুসরণ করে আজ পুলিশ হাসপাতালে আক্রমণ, অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করছে। ওদের মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই। আজকে নির্বাচনে তারা আসেনি, সেটি তাদের ইচ্ছা। কিন্তু মানুষের ভোটের অধিকারে বাধা দেওয়া কখনোই দেশের জনগণ মেনে নেবে না। এ অধিকার মানুষের অধিকার। সুতরাং ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ইনশাআল্লাহ হবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে বলেই এটা আমরা করতে পেরেছি। আপনাদের সেবা করতে পেরেছি। সারাদেশে আমরা উন্নয়ন অগ্রগতি করেছি। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করে আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি আমরাও পারি। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দলকে বিজয়ী করার জন্য সবাইকে আহŸান জানিয়ে বলেন, আমাদের মার্কা নৌকা মার্কা, এ নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, এ নৌকা আজ উন্নয়ন দিয়েছে, এই নৌকা-ই আগামী উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। তাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীদের আপনারা জয়যুক্ত করবেন। আপনাদের কাছে সে আহŸান জানাই। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে সমাবেশ মঞ্চে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জের ৪টি আসনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম ওসমান, গোলাম দস্তগীর গাজী, নজরুল ইসলাম বাবু, কায়সার হাসনাত, জাতীয় পাটির মনোনীত প্রার্থী সেলিম ওসমান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো: শহিদ বাদলসহ ৫টি উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা ও সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।