নির্বাচনের পর বিএনপি কি করবে?

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আগামীকাল রবিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিএনপি এই নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছে। ইতোমধ্যে দলটি নিষ্ক্রিয় অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণাও দিয়েছে। যদিও সেই অসহযোগ আন্দোলনের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি জনজীবনে। আগামীকাল রবিবার নির্বাচন শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। প্রশ্ন উঠেছে, এই নির্বাচনের পরে বিএনপি কী করবে? বিএনপি কী আন্দোলন অব্যাহত রাখবে? নির্বাচনের পর তারা সাংগঠনিক ভাবে নিজেদেরকে পুনর্গঠিত করার চেষ্টা করবে? নতুন সরকারকে কিছু সময় দেবে নাকি অন্য কোন পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির? বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, নির্বাচনের পর বিএনপি কী করবে সে সম্পর্কে তাদের মধ্যেও এক ধরনের অস্পষ্টতা রয়েছে। বিএনপির অধিকাংশ নেতাই জানেন না যে নির্বাচনের পর তাদের রাজনীতির গতি প্রবাহ কোন দিকে ধাবিত হবে। তবে বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি সামনে নির্বাচনের পর তিনটি বিকল্প রয়েছে। সরকারের সাথে সংলাপের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করা: বিএনপির সামনে প্রথম যে বিকল্পটি রয়েছে তা হল নির্বাচনের পর নতুন সরকারের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করা। বিএনপির আটক নেতাকর্মীদেরকে কারাগার থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠে নতুনভাবে সংগঠিত করে আবার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করা। রাজনৈতিক ভাবে যদি বিএনপি পরিপক্কতার পরিচয় দেয় তাহলে নির্বাচনের পর এক থেকে দুই বছর সময় বিএনপি নতুন করে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ নেবে। বিএনপির যে সমস্ত নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের মুক্তি এবং মামলাগুলোকে ধাতস্থ করার একটা রূপকল্প গ্রহণ করবে এবং সংগঠনকে নতুন করে গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে। এই সময় মুখে মুখে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও বিএনপি বড় ধরনের হঠকারী রাজনীতির পথে যাবে না। এক দেড় বছরের মধ্যে নতুন করে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করে সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু করবে। এই রকম বিকল্পই একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের করণীয় বলে মনে করেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু বিএনপি সেটি করবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখা: বিএনপির সামনে দ্বিতীয় বিকল্প হল আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখা। নতুন সরকারকে স্বীকৃতি প্রদানে অস্বীকৃতি জানানো এবং এই অস্বীকৃতি জানানোর মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে নতুন সরকারকে অগ্রহণযোগ্য বা অবৈধ ডাক দিয়ে এই আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখা। তবে সেটি করে বিএনপি কতটুকু সফল হবে এ নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে। কারণ নির্বাচনের পর দ্রæত সময়ের মধ্যে একটি নতুন সরকার গঠিত হবে এবং আন্তর্জাতিক ভাবেই নতুন সরকার যে স্বীকৃতি পাবে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। এর ফলে আবার নতুন করে আন্দোলন শুরু করা ভঙ্গুর বিএনপির জন্য একটি কঠিন এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার হবে। বিএনপির অধিকাংশ নেতা কারাগারে। এই অবস্থায় নির্বাচনের পরে নতুন প্রেক্ষাপটে আন্দোলনকে বিএনপি কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে সেটি একটি বড় বিস্ময়ের ব্যাপার। সেক্ষেত্রে বিএনপি কতটা সফল হবে সেটিই দেখার বিষয়। আন্তর্জাতিক মহলে লবিং, তদবির এবং এবং নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রচারণা: বিএনপির সামনে তৃতীয় বিকল্প হল যে নির্বাচনের পরে নতুন সরকারকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আন্তর্জাতিক লবিং এবং কূটনীতি। ইতোমধ্যে বিএনপির একাধিক লবিস্ট ফার্মে নিয়ে কাজ করছে। বিএনপির মধ্যে একটি প্রবাসী সরকার গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে। নতুন সরকারকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে আন্তর্জাতিক প্রচারণার মাধ্যমে একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি চেষ্টা করতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনের পরে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনকে স্বীকৃতি না দেয়, সেক্ষেত্রে বিএনপির এই বিকল্প পথে এগোবে। এখন দেখার বিষয় যে নির্বাচনের পরে বিএনপি কোন পথ বেছে নেয়।