খোকা যুগের অবসান
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৪টি আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যরাই দাপুটে জয়ের মধ্যে দিয়ে আবারও নির্বাচিত হয়েছেন। ব্যতিক্রম শুধু সোনারগাঁয়ে, যেখান বিরাট ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা। এখানে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার। নির্বাচনের শুরুতে এখানে তুমুল লড়াই হবে মনে করা হলেও নির্বাচন শেষে দেখা গেলো বিপুল ভোটে হেরে গেছেন এখনকার বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা। এরমধ্যে দিয়ে সোনারগাঁয়ে ‘খোকা যুগের’ অবসান হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কর্মীরা। ভোট ব্যাংক না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে জেলার এই সংসদীয় আসনটি দখলে রেখেছিল মহাজোটের সঙ্গী জাতীয় পার্টি। সোনারগাঁও আসনে দুইবার জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়ার কারণে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন লিয়াকত হোসেন খোকা। দুইবারই এ আসনে কোন প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিন ধরে এই আসনে নৌকার মাঝি না থাকায় সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের হাতে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগও ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। এখানে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের রয়েল রিসোর্ট কান্ডের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়, ভাঙচুর করা হয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও। অভিযোগ উঠে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এই হামলায় জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে মামলায় আসামি করা হয় জাতীয় পার্টির ইউপি চেয়ারম্যান ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তাছাড়া গত একদশকে কয়েক হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী খোকার হাত ধরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়ার ঘটনাও ঘটে। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে কোন ছাড় না দিতে দাবি ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। গত বছরের ১৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নারায়ণগঞ্জের এক জাতীয় পার্টির এমপি আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। কাজেই ওই এলাকাকে রক্ষার জন্য, এলাকার মানুষদের রক্ষার জন্য, সেখানে মানুষেরা নৌকা মার্কা চায়। এ সময় নানক আরও বলেন, সবাই জানিয়ে দিয়েছে ওই সিট জাতীয় পার্টির সিট নয়। জাতীয় পার্টির ভাইয়েরা বড় বড় কথা বলেন। নির্বাচন করে দেখেন কয় সিট পান। পায়ের তলায় মাটি নাই। এই সমাবেশের পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হন। কিন্তু খোকা এবারও আশায় ছিলেন আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টির আসন সমঝোতায় থাকবে তার নাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির জন্য যেসব আসনে ছাড় দেয় সেই তালিকায় ছিল না সোনারগাঁ আসনটি। কিন্তু খোকার সে আশায় গুড়ে বালি। কপালে জোটেনি ক্ষমতাসীন দলের দয়া। তাই সহজ সমীকরণে পরপর ২ বারের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা এবার ভোটের মাঠে মোকাবেলা করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী কায়সারকে। এদিকে অভিযোগ ছিল, গত দুইবার মহাজোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হওয়া সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা ও তাঁর স্ত্রী ডালিয়া লিয়াকতের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ‘আলাউদ্দিনের চেরাগ’ পাওয়ার। ১০ বছর পূর্বে চাকুরিজীবী খোকার কাছে নগদ মাত্র ৩ লাখ টাকা থাকলেও বর্তমানে তাঁর নামে রয়েছে চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কয়েক কোটি টাকা। গৃহিণী হয়েও শূন্য থেকে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তাঁর স্ত্রীও। তাছাড়া খোকার আত্মীয়-স্বজন পরিচয়ে শহরের অনেক লোক সোনারগাঁয়ে ‘ক্ষমতার দাপট’ দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ ছিল স্থানীয়দের। গত ১০ বছরে সোনারগাঁয়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বালু সন্ত্রাস, ভূমিদুস্যতা ও মাদক বিস্তারের অভিযোগ ছিল নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের। তাই এই নির্বাচনে খোকার পরাজয় অনেকটাই প্রত্যাশিত ছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি খোকার কোন রাজনৈতিক ভিত্তি নেই সোনারগাঁয়ে। ‘ছাড়ে’ এমপি হওয়া খোকার রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছেন তারা। জয়ের বিষয়ে এই আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার বলেন, সংসদ সদস্য থাকাকালীন সোনারগাঁয়ে আমি কোনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করিনি। এ কারণে আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিভিন্ন দলের সমর্থক ও সাধারণ মানুষ আমাকে পছন্দ করেন। ১০ বছর ‘নৌকার ঘাঁটি’ এই এলাকার মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিতে পারেনি। এবার তারা মুখিয়ে ছিল নৌকায় ভোট দেবার জন্য। তার প্রতিফলন ঘটেছে সোনারগাঁয়ে। বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ের পাল তুলেছে নৌকা। এর মধ্য দিয়ে কপাল পোড়ে লিয়াকত হোসেন খোকার।