রাজপথেই থাকবে বিএনপি
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট অবেশেষে দ্বাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে এই নির্বাচনে সাধারন জনগণের সাড়া না থাকলে ও নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত পর বিএনপির নেতাকর্মীসহ জনমনে নানা আলোচনা-সমালোচনা অবহৃত রয়েছে। এক দিকে নব-নির্বাচিত আওয়ামী লীগের দাবি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনে দেশের সর্বস্তরের জনগণ ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করেছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো বলছে কারচুপি ও অবৈধ ভোটের মাধ্যমেই দ্বাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছে। এটাকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন শুধু বিএনপি নয় দেশের মানুষ ও বলবে না এমনটাই দাবি তাদের। এদিকে নির্বাচন শেষ- কর্মী, সমর্থক ও ভোট বর্জন করা সাধারণ জনগণের এখন একটাই প্রশ্ন, কী করবে বিএনপি। জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট বর্জনের পর এখন ‘পরিস্থিতি’ বুঝে সামনের দিকে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলটির নেতারা মনে করছেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাদের আহŸানে সাড়া দিয়ে জনগণ একতরফা ভোট বর্জন করেছে। তাদের দাবি, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ৪২ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলা হলেও মূলত ৫-১০ ভাগ ভোট পড়েছে। নির্বাচনে এই ভোটার উপস্থিতি কম হওয়াকে আন্দোলনের প্রাথমিক সাফল্য হিসেবে দেখছেন তারা। তাদের আরো দাবি রয়েছে, ভোটারবিহীন এই নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তাদের প্রত্যাশা, এমন ভোটের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব সোচ্চার হবে এবং তাদের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর নানামুখী চাপ প্রয়োগের পদক্ষেপ আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে নতুন সরকারের টিকে থাকা কঠিন হবে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি। কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বিএনপি। নির্বাচনের ফলাফল বাতিল এবং নতুন নির্বাচনের দাবিতে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবে দলটি। প্রাথমিকভাবে নূণ্যতম দেড় মাস কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সভা-সমাবেশসহ জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। তবে কর্মসূচির ফাঁকে মাঝেমধ্যে হরতালও দেয়া হতে পাওে এমনটাই দাবি তাদের। নির্বাচনের পরে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি হিসেবে দুই দিনের গণসংযোগ করেছে বিএনপি। সেখানে তাদের নির্বাচন বর্জনের লিফলেট বিতরনের মাধ্যমে নির্বাচনে সাড়া না দেওয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ ও জ্ঞাপন করেছেন তারা। এদিকে গত ২৮ অক্টোবর পর থেকে নির্বাচনের আগমুহুর্ত্ব পর্যন্ত বিএনপির বহু নেতাকর্মী কারাগারে। আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকে ঘরছাড়া, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের আগে কারামুক্ত করা দরকার। এখন কঠোর কর্মসূচিতে গেলে তাদের জামিন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে। নেতাদের ধারণা, নির্বাচন হয়ে গেছে। এখন সরকার তাদের মুক্তিতে বাধা সৃষ্টি নাও করতে পারে। সরকার বাধা না দিলে কম সময়ের মধ্যে তারা জামিনে কারামুক্ত হতে পারেন। এতে দল নতুন করে সুসংগঠিত, চাঙ্গা হবে। আন্দোলন এগিয়ে নিতে যা সহায়ক হবে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয়বাদী দল বিএনপি। এরই মাঝে বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র। যাকে ঘিরে বর্তমানে ব্যাপক আলোচনা চলছে এদিকে বিএনপির কর্মী সংখ্যাক নেতাদের মধ্যে ও গত ২দিন যে হতাশার সাফ দেখা গিয়েছিলো এটা ও ধীরে ধীরে কেটে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তারা নির্বাচনের পর বহি:বিশ^কে নিয়ে যে পদক্ষেপ নিতে চেয়ছিলেন এটা হয়তো এবার সফল হবে এমনটাই মনে করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সূত্র বলছে, গত ২৮ অক্টোবর পর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছে। যাকে ঘিরে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী বর্তমানে কারাজ্ঞাপন করছেন। কিন্তু নির্বাচনের কয়েকদিন পূর্বে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান “অসহযোগ” আন্দোলনের ঘোষণা দিলে ও বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্বাচন বর্জনের লিফলেট বিতরণ করেই ক্ষান্ত হয়ে পরেন। তারপরই নির্বাচনের আগের দিন তিনদিনের হরতাল দেয় দলটি। হরতাল সমর্থনের দিন ব্যাপক আন্দোলন হিসেবে মাশল মিছিল দেখা গেলে ও নির্বাচনের দিন ও তার পরদিন নিস্কিয় ভূমিকা রেখেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এদিকে এক পা, দু’পা করে শেষ হয়ে গেলো জাতীয় সাংসদ নির্বাচন যা নিয়ে বর্তমানে আলোচনা সমলোচনার উর্ধ্বে রয়েছে নির্বাচনের নানা ঘটনা। যাকে ঘিরে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা বলছে, ভোটারবিহীন, ডামি, প্রহসনের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে শুধু নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠ হয়নি বলে আখ্যা দিয়েছে এবার সরকারের ওপর নানামুখী চাপ প্রয়োগমূলক পদক্ষেপ আসতে পারে বলে ও আশা করছে বিরোধী দল বিএনপি। তেমনটা হলে পরিস্থিতিও পাল্টে যাবে বলে ধারনা তাদের। সে ক্ষেত্রে আন্দোলনও নতুন গতি লাভ করবে। এর ফলে নতুন সরকারের টিকে থাকা কঠিন হবে। এ দিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর কঠোর আন্দোলন সত্তে¡ও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাওয়ায় দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশাও বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং পরিবর্তন হবে এমন প্রত্যাশার পরেও আরেকটি নির্বাচন হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তার যাত্রা আবার শুরু হয় কিনা, তা নিয়ে শঙ্কিত নেতাকর্মীরা। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের হতাশ না হয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহŸান জানানো হয়েছে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি, মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা বর্তমানে তাকিয়ে আছে কেন্দ্র ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে যে কোন নির্দেশনায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপি রাজপথে থাকতে ব্যাপক প্রস্তুতি রেখেছে এমনটাই দাবি জানিয়েছে দলটির একাধিক নেতাকর্মী। এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহŸায়ক এড.সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, গত রবিবার এই সরকারের পাতানো নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে দেশের জণসাধারনের বিজয় সুশ্চিত হয়েছে। এই সরকার জনগণকে জিম্মি করে এই দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে ধূলোই মিশিয়ে দিয়ে এটা স্বৈরাতান্ত্রিক কায়েমের লক্ষে যে এক তরফা যেন তেন ভাবে নির্বাচন করতে চেয়েছিলো সেই ডামি নির্বাচনকে এই দেশের মানুষ ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে নিরবভাবে প্রতিবাদ করেছেন, আমি দেশের সকল জনগণ ও নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এই সরকারের এই বাংলাদেশে যে স্বৈরাতান্ত্রিক কায়েম করতে চেয়ছিলো তার প্রতি এটা চরম রায় দিয়েছে দেশের জনগণ। নির্বাচনের দিন এই সরকার ফ্লস ভোট ও মৃত্যু ব্যক্তিদের ভোট, সিল মারাসহ সকল ভোট দিয়ে অপকর্মের মাধ্যমে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি করার জন্য বহু চেষ্টা করেছে। এটা এই দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে আর তাদের এই অপকর্মকে বিশ^বাসী ও দেখেছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনের দিন বা হা বা পেতে বিদেশ থেকে যে ভূয়া পর্যবেক্ষক এনেছিলো তা আজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক বিবৃতিতে তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। তারা বলেছে তারা কোন পর্যবেক্ষক পাঠায়নি এবং তারা আরো বলেছে, বাংলাদেশে কোন অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন হয়নি। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে আছি তারা যে নির্দেশনা দিবে আমরা জাতীয়তাবাদীদল রাজপথে থেকে সেই নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবো ও সফলতা আনবো ইনশাআল্লাহ।