সমঝোতার পথে আ’লীগ-বিএনপি!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থবারের মতো নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হওয়ার সম্ভাবনার কথা শুনা যাচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নত বিশে^ ইতিমধ্যে নিজেদের আসন পাকাপোক্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশে^র কয়েকজন নারী প্রধানমন্ত্রীর পাশে নিজের অবস্থানকে ইতিমধ্যে পাকাপোক্ত করেছেন। দেশে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও রাজনৈতিক সমঝোতা নেই বললেই চলে। দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল সম্পূর্ন বিপরীতমুখি অবস্থানে রয়েছে। এ অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে দেশে সহনশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চ্চা শুরু করতে চান বলে একাধিক সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য দায়িত্বশীল দলীয় নেতা এবং সমমনাদের সাথে একটি সমঝোতায় আসতে চাইছেন সরকার। আর একারণেই বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে বাসার আসার পর অন্যান্য সময়ের চাইতে তাকে অনেকটাই উৎফুল্ল দেখা গেছে। বেগম খালেদা জিয়া ও দলের উদার মনের নেতাসহ জাতীয়তাবাদী ঘরানার রাজনৈতিক নেতারাও মনে করেন, বাংলাদেশের স্বার্থে রাজনৈতিক ঐক্য এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর এ কারণেই বিভিন্ন মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীরা একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় যাতে আসতে পারে সে লক্ষ্যে একাধিক মহল কাজ শুরু করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে এ আলোচনার বাইরে রাখতে চাইছে ক্ষমতাসীন দল। ইতিমধ্যেই বেগম খালেদা জিয়ার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পিছনে কোন রাজনৈতিক যোগসূত্র আছে কি না তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে তারেক জিয়ার ব্যর্থ কৌশল এবং ভুল রাজনীতির কারণে বিএনপি মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর এ কারণেই বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন তারেক জিয়ার হাত থেকে দলকে মুক্ত করতে চাইছেন। বিএনপির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া যদি নামমাত্র নেতৃত্বেও থাকেন এবং দলের প্রধান হিসেবে ছোটখাটো নির্দেশনা দেন, তাহলেও বিএনপিকে ঘুরে দাঁড় করানো সম্ভব। আর সেজন্যই বেগম খালেদা জিয়াকে আবার নেতৃত্বে আনার পরিকল্পনা নিচ্ছেন একাধিক মহল। যদিও বেগম খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্র বলছে যে, তিনি বর্তমানে অত্যন্ত অসুস্থ। রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোন অবস্থা তার নেই। তবে বিএনপির বিভিন্ন নেতারা মনে করছেন যে বেগম খালেদা জিয়া শুধু নামমাত্র প্রধান থাকবেন তাহলেই দলের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হবেন এবং নতুন করে তাদের পথচলা শুরু হতে পারে। তবে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, নির্বাচনের পর বিএনপি সরকারের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করছে। এই সমঝোতার অংশ হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম এবং খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্ত করা এবং তাদেরকে গঠনমূলক রাজনীতির পথে নিয়ে আসার সুযোগ দেওয়া হতে পারে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের পরপরই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেশ কয়েকটি মামলায় জামিন পেয়েছেন। আরও কয়েকটি মামলায় তার জামিন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খুব শীঘ্রই কারাগার থেকে বের হবেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া আরো একাধিক বিএনপির প্রভাবশালী নেতার জামীন প্রক্রিয়া চুড়ান্ত প্রায়। তবে এটির সাথে সরকারের কোনো সমঝোতার প্রয়াস আছে কিনা সেটি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক আছে। তবে একটি মহল মনে করছে যে তারেক জিয়া একজন সন্ত্রাসী দুর্বৃত্ত। তারেক জিয়ার সঙ্গে সরকার কোনরকম আপোষ সমঝোতা করবে না। নির্বাচনের আগেও তারেক জিয়ার কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছিল সরকারের সাথে সমঝোতা করার জন্য। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তারেক জিয়ার মতো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার দÐিত ব্যক্তির সঙ্গে কোন রকমের সংলাপের কথা অস্বীকার করা হয়েছিল। আর এ কারণেই শেষ পর্যন্ত বিএনপির সাথে কোনো রকম রাজনৈতিক সমঝোতা হয়নি। সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে যে সরকার মহলের কেউ কেউ মনে করে যে তারেক জিয়ার চেয়ে বেগম খালেদা জিয়া অনেক সহনীয় এবং রাজনৈতিক ভাবে গ্রহণযোগ্য। আর এ কারণেই বেগম জিয়ার সঙ্গে সরকারের একটি আপোষ সমঝোতার গুঞ্জন রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এতে বিএনপি বর্তমান সরকারকে মেনে নেবে, তাদের আন্দোলনের কর্মসূচি গুলো আস্তে আস্তে গুটিয়ে ফেলবে এবং ধীরে ধীরে তারা সাংগঠনিক তৎপরতার মধ্যে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাÐকে নতুন করে শুরু করবে। বিএনপি এই ধরনের সমঝোতার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানাগেছে। তবে বিএনপির পাশাপাশি ক‚টনৈতিক মহল থেকেও রাজনৈতিক ঐক্যমত এবং একটি সহাবস্থানের নীতিতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। একাধিক সূত্র বলছে যে নির্বাচনের পর সরকারও এখন জাতীয় ঐক্যমত এবং দেশ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সকলকে সামিল করতে চায়। আর এই লক্ষ্যেই সরকার বিএনপির সঙ্গে একটি উদার নীতিতে এগোতে পারে। তবে সেটি কখনোই তারেক জিয়ার সঙ্গে নয়। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকেও মনে করা হচ্ছে তারেক জিয়া কোনভাবেই সাধারণ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতা নন। আর তার রাজনৈতিক কৌশলে কোনো বিচক্ষণতা নেই। তিনি কারো কথাই শুনেন না। এমকি দলের সিনিয়র নেতাদের পরামর্শকেও তিনি উপক্ষো করেন। লন্ডনে বসে বাংলাদেশের বাস্তবতা না বুঝে তিনি যে রাজনৈতিক রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন সেটা বিএনপির জন্য আত্মঘাতী হয়েছে। এ কারণেই বিএনপির মধ্যে তারেক হঠানোর দাবি সোচ্চার হচ্ছে। এরকম একটি বাস্তবতায় তারেক জিয়াকে সরিয়ে দেওয়া এবং সেখানে বেগম খালেদা জিয়াকে নেতৃত্বে নিয়ে এসে দল পুর্নগঠন অগ্রাধিকার পাচ্ছে। আর এ কারণেই বিএনপির একটি অংশ এখন সরকারের সঙ্গে নতুন করে দেন দরবার শুরু করতে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে দেশকে গণতান্ত্রিকভাবে স্থিতিশীল করতে হলে দুই দলের সমঝোতার কোন বিকল্প নেই।