আসুন জানি কিছু ফিলিস্তিন শিশুর কথা
রাসেল আদিত্য
আমাদের দেশে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, অমুক করলে লীলাখেলা আর আমরা করলেই যতো দোষ।এই লেখনীতে পাঠক আপনাদের কিছু ফিলিস্তিন শিশুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ওঁদের অভিজ্ঞতা,বর্তমান অবস্থা ও গাজার চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করবো। তারপর আপনার বিবেকের কথা শুনতে চাইবো।”মানবাধিকার” শব্দটি নিয়ে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি উচ্চকণ্ঠ পশ্চিমাদের লীলাখেলার সঙ্গে জ্বি হুজুর বলে সবসময় পদলেহনকারী আমাদের দেশীয় বিশিষ্টজনের অবস্থান কোথায় হওয়া উচিত তা বলবে আপনার বিবেক।
(এক)
শুরু করছি গাজার সুজাইয়ার এক শরনার্থী শিবিরে বাসকরা আট বছরের আব্দুল্লাহ জাবরকে দিয়ে। “আমার প্রিয় ফুটবল খেলোয়াড় হলেন সুজাইয়া ফুটবল ক্লাবের আলা আত্তিয়া এবং ওমর খামিস।তারা অনেক গোল করে।আমরা যখন আমাদের বাড়িতে ফিরে যাব তখন আমি খেলব।কিন্তু আমার কাছে ফুটবল নেই। আমি এখনও বড় হয়ে ফুটবল খেলোয়াড় হতে চাই। আমি আমার স্কুল মিস করি”।জানিনা আমাদের স্কুলটি টিকে আছে কিনা? আমার পরিবারের দুইজন বাদে বাকি সবাই বোমায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ীর নীচে চাপা পড়ে মারা গেছে।আমি মরতে চাইনা। শরনার্থী শিবির থেকে বলছিলো আট বছরের আব্দুল্লাহ জাবর।
(দুই)
সুজাইয়ার আরেক আট বছরের শিশু সাঈদ আল আরির ইসরায়েলী হামলার সময়কার স্মৃতিচারন করে বলে,”মাগাজী শরণার্থী শিবিরে বাড়ির বাইরে চাচাতো ভাইয়ের সাথে রাস্তায় খেলছিলাম।ইসরায়েলি বিমান আমাদের উল্টোদিকের ভবনে বোমা বর্ষণ করেছে। আমার মাথার খুলি ভেঙে গেছে।আমার মাথার চারপাশে সেলাই করা হয়েছে।একটি পা ভাঙা এবং একটি বড় ক্ষত যা ডাক্তাররা বলেছে যে আমার হাড়টি থেকে মাংস উঠে গিয়ে উন্মুক্ত হয়ে গেছে! আমার মা আমাদের জন্য রাতের খাবার তৈরী করছিলেন যখন আমাদের পাশের বাড়ির প্রতিবেশীর বাড়ি লক্ষ্যবস্তু হয়।আমাদের বাড়ির দেয়াল আমাদের উপর এসে পড়ে। আমার পা এবং আমার হাত দুটি জায়গায় ভেঙে যায়।আমাদের বাড়ি নিশ্চিন্হ হয়ে গেছে। আমি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে অনেক পছন্দ করি, কিন্তু আমি একজন ডাক্তার হতে চাই। যাতে আমি বাচ্চাদের ভালো হতে সাহায্য করতে পারি। আমি আশা করি আমার মেডিকেল রেফারেল আমাকে মিশরে নয়তো সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠাবে।কারণ আমি মিশরে গাড়িতে ভ্রমণ করতে চাই না।আমি একটি বিমানে উঠতে চাই এবং যখন আমি আকাশে থাকবো তখন জানালা দিয়ে তাকাতে চাই।আমি সুস্থ হয়ে গাজায় ফিরে আসতে চাই।আর যুদ্ধ চাইনা, আমি বাঁচতে চাই”
(তিন)
“আমার প্রিয় খাবার হলো চিকেন উইংস। যুদ্ধ শেষ হবার পর আমি আমার পরিবারের সাথে একটি রেষ্টুরেন্টে যেতে চাই।” এটা বলেই হাসপাতালের বেডে শুয়ে স্মৃতিচারন শুরু করে বারো বছর বয়সী মেয়ে মায়ার আবু সাদ। মায়ার বলে,”আমরা নিরাপদে থাকার জন্য আমাদের শাতীতের বাড়ী ছেড়ে নুসিরাতে দাদার বাড়ীতে চলে যাই।তখন আমি দোলনায় খেলা করছিলাম।আমার দাদা বললেন, আমাদের উঠানে গিয়ে রুটি সেঁকানো উচিত। হুট করেই ঠিক তখন একটি ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের বাড়িতে আঘাত হানে।এবং ভিতরে যাঁরা ছিলো যেমন আমার খালা তাগ্রিদ, চাচা সামেহ, চাচা মোহাম্মদ এবং আমার চাচাতো ভাই রিতালের সহ মোট ১১ জন নিহত হয়। আমার বোন সাবাহকেও দেদিন হত্যা করা হয়েছে।সে এত ছোট ছিল, মাত্র দুই বছর বয়স ছিলো সাবাহর। আমি হয়তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। যখন আমি জেগে উঠলাম, আমি নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। ডাক্তাররা আমার লম্বা চুল কেটে ফেললেন এবং আমি খুব বিরক্ত ছিলাম। তারা ভেবেছিল আমি মারা যাবো। কিন্তু আমার হৃদয় স্পন্দিত হতে থাকল। তাঁরা আমার উপর চার ঘন্টা ধরে অপারেশন করে বলেছিল যে আমার অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছে প্রচুর পরিমানে, মাথার খুলি একদিকে ভেঙ্গে গেছে, পেলভিস এবং দুটি পা ও ভেঙ্গে গেছে। নিষ্পাপ দর্শন মেয়ে মায়ার জানায়, আমার হাতে এবং পেটে সেলাই আছে এবং আমার পায়ে টাইটানিয়াম অংশ রয়েছে।আমি একজন শিক্ষক হতে চাই। আমার প্রিয় বিষয় ইংরেজি।”
(চার)
সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলো উত্তর গাজার সাত বছর বয়সী মেয়ে হায়াত মিকবিল। ছোট্ট মিকবিল বলতে শুরু করে,”আমরা নুসিরাতে আমার দাদার বাড়িতে ছিলাম। ইসরায়েলিরা আমাদের বোমা মেরে মুসাকা খাচ্ছিল। ঐ শব্দটা ভীতিকর ছিল। আমার মা, দাদা, চাচা মোস্তফা, সামেহ ও তাইসির, তার স্ত্রী এবং আমার চাচাতো ভাই হামুদ ও উদয় সবাইকে হত্যা করা হয়। মা বাইরে ছিলেন। আমার পায়ে আঘাত লেগেছে। দুজনের উপরেই বাড়ী ভেঙে পড়েছিলো। আমার বাবা এবং খালা আমার যতœ নিচ্ছেন। আমি জানালার নিচে বসে ক্ষেপণাস্ত্রটি পড়ে থাকতে দেখলাম। আমরা ভেবেছিলাম এটি আমাদের বাড়ির পিছনের দিকে যাচ্ছে। আমার মনে আছে, একজন লোক আমাকে পাথরের নিচ থেকে উদ্ধার করেছিল। আমার পা আটকে গেল। ছোট্ট হায়াত মিকবিল বলে উঠলো, বড় হয়ে আমি একজন ডেন্টিস্ট হতে চাই। যাতে আমি আমার বাবার দাঁত ঠিক করতে পারি। আমি আমার পুতুলের সাথে আঁকতে এবং খেলতে পছন্দ করি। আমি যুদ্ধ ঘৃনা করি”।
(পাঁচ)
বরেজ শরনার্থী শিবিরে থাকা দশ বছরের ইসা ইয়াহিয়া জানায়,”আমি আমার ক্লাসে প্রথম ছিলাম। তিন বছর ধরে আমি প্রথম স্থানে ছিলাম। নুসিরাতে আমাদের প্রতিবেশীর বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। সেই হামলায় আমাদের বাড়ির দেয়াল ভেঙে পড়েছিল। আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচে ছিলাম। আমার দাদা আমাকে টেনে বের করেছিলেন। আমার পেটে শ্রাপনেল ছিল এবং আমি ১০ দিন কিছু খেতে পারিনি। আমার পায়ে ৫০টির বেশি সেলাই আছে। আমার দাদী ও চাচাতো ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি লেখাপড়া করতে অনেক ভালোবাসি। আমি একজন ডাক্তার হতে চাই। আর আমার প্রিয় বিষয় হলো গণিতরআমার রোজ মনেহয় কাল ঘুম থেকে উঠে দেখবো, যুদ্ধ থেমে গেছে, সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে গেছে”। (খেয়াল করে দেখুন, এমন বিভীষিকার মাঝে বসবাস করেও গাজা বা ফিলিস্তিন শিশুরা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দেয়নি। ওঁরা সবাই স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরেই বুঝিবা ঐ নরক যন্ত্রণাকে সহ্য করে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করছে)
কি বলছে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা:-
জাতিসংঘ বলেছে, গাজা হলো এই পৃথিবীতে শিশুদের জন্য সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা। কারণ ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এ অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণ করে হাজার হাজার শিশুকে হতাহত করছে। রোগীর চাপে পিষ্ট হাসপাতালগুলোর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আরও হাজার হাজার শিশু সংক্রামক রোগে ভুগছে এবং খাবার,পানি ও ওষুধের অভাবে দুর্দশায় আছে। ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এলডার জেনেভায় গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেন, আমি এ বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা লাখ লাখ শিশুর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দুঃস্বপ্নের সঙ্গে তুলনীয় মানবিক সংকটকে উপেক্ষা করছেন। স¤প্রতি গাজায় ২ সপ্তাহের সফর শেষে ফিরে এসে এলডার জানান, আমি ক্ষুব্ধ কারণ ইতোমধ্যে এক বা একাধিক অঙ্গ হারিয়েছে, এমন শিশুরাও চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাসের হাসপাতালে বোমা হামলায় নিহত হচ্ছে। আমি ক্ষুব্ধ কারণ কোথাও না কোথাও লুকিয়ে থাকার প্রচেষ্টায় আরও অনেক শিশু প্রতিদিন তাদের অঙ্গ হারাচ্ছে। আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, কারণ অসংখ্য শিশু এমন কী তাদের নিহত মা, বাবা ও পরিবারের সদস্যদের জন্য শোক প্রকাশ করার সুযোগও পাচ্ছে না, ব্যথাতুর কন্ঠে বলেন তিনি। এলডার বলেছেন, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে অবস্থিত আল নাসের হাসপাতাল গত ৪৮ ঘণ্টায় ২ বার কামান হামলার শিকার হয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, হাসপাতালগুলোতে অসংখ্য গুরুতর আহত শিশু ও নিরাপদ আশ্রয় প্রত্যাশী হাজার হাজার নারী-শিশু অবস্থান করছে। তিনি বলেন, তাহলে শিশুরা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা কোথায় যাবে? প্রশ্ন করেন তিনি।তারা হাসপাতালে নিরাপদ নয়।তারা আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ নয়। এবং অবশ্যই, তারা তথাকথিত নিরাপদ জোনেও নিরাপদ নয়। এরচেয়ে বেদনাদায়ক আর কি হতে পারে? এলডার বলেন, পৃথিবীর কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে গাজার শিশুদের বাস্তবতা দেখে তা সহ্য করা সম্ভব না। ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের একটি প্রতিবেদন অনুসারে গত ৭ অক্টোবর থেকে পনেরো হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে বা ধ্বংসস্তূপের নিচে হারিয়ে গেছে এবং মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৪ হাজার শিশু বাবা-মায়ের একজনকে বা উভয়কে হারিয়েছে এবং প্রায় ১৮ হাজার শিশু আহত হয়েছে যাঁদের বেশকিছু সংখ্যায় গুরুতর আহত অবস্থায় রয়েছে। গাজার ২৩ মিলিয়ন মানুষের প্রায় অর্ধেক তথা ৪৭% শতাংশ ১৮ বছরের কম বয়সী। তাঁদের বেশিরভাগই তাদের স্বল্প জীবনে অন্তত চারটি ইসরায়েলি আক্রমণের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে। উপক‚লীয় ছিটমহলে ইসরায়েল কর্তৃক আরোপিত অবরোধের কারণে, শিশুরাও অনাহারের সম্ভাবনার সম্মুখীন হচ্ছে, বিশেষ করে উত্তর গাজায়। যেখানে তারা দিনে গড়ে এক বেলা খাবার খায়। অধিকন্তু বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব, জনাকীর্ণ অবস্থা এবং জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলিতে স্যানিটেশনের অভাব। যেখানে অনেক বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় খুঁজছে, সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের দিকে পরিচালিত করেছে,যাঁর জন্য শিশুরা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের হিসাব মতে, গত ৮৮ দিনে ১৩০০০ জনের বেশি শিশু সহ ইসরায়েলি হামলায় ২২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর অর্থ হল প্রতি ১০ মিনিটে একজন ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাজার পরিস্থিতিকে”মানবতার সবচেয়ে অন্ধকার সময়” হিসাবে অভিহিত করেছে। প্রায় চার হাজারের বেশী লোক নিখোঁজ হয়ে আছে এবং তাঁদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নীচে মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবং ৫০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। যাঁদের শতকরা আশি শতাংশ মহিলা এবং শিশু। জাতিসংঘের মহাসচিব ৩১ অক্টোবর গাজাকে “শিশুদের কবরস্থান” আর অন্য সবার জন্য একটি “জীবন্ত নরক” হিসেবে বর্ননা করলেও ইসরায়েলি আক্রমণাত্মক হামলা এবং স্থল আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দলকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, চলমান হামলা এমনকি আরও তিন চার মাস ধরেও চলতে পারে। আমার প্রতিবেদনটি আল-জাজিরা, রয়টার্স, ভয়েস অফ আমেরিকা ও এপির বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে তথ্য নিয়ে তৈরী করা। যার বেশির ভাগই ইতিমধ্যে পাঠক হয়তো অবগত আছেন।
বাংলাদেশীদের ভূমিকা:- আমি মূলতঃ আমাদের দেশের কিছু তথাকথিত সুশীল, রাজনৈতিক দল, নেতৃবৃন্দের মুখোশ খুলে তাঁদের আসল রুপটি দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্যই কলম ধরেছি। আমরা সবাই জানি, গত কয়েকমাস ধরে আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে। গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে পুরো পৃথিবীর সকল শান্তিকামী মানুষ ওঁদের নারকীয় বর্বরতার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। দিন যতোই গড়িয়েছে, প্রতিবাদ মিছিল দীর্ঘ হয়েছে। এক্ষেত্রে আশ্চর্য ব্যতিক্রম ছিলেন, আজও আছেন বাংলাদেশের সুশীল লেবাসধারী কিছু বিশিষ্টজন(উচ্ছিষ্টজন পড়া আপনার ইচ্ছে)। এই লোকগুলো দেশের প্রয়োজনের সময় নিরবতা পালন করেন, ভোটের মৌসুম এলেই সরব হয়ে দেশের পাঁচ নম্বর সমস্যাকে এক নম্বর বানিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টার মাধ্যমে গায়েবী প্রাপ্তীকে হালাল করার মিশনে মেতে ওঠেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁদের ব্যর্থতাই দেখে আসছি আমরা বিগত এক দশক ধরে। কথায় কথায় দেশে মানবাধিকার গেলো বলে চেঁচানো সুশীল নামধারীরা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লংঘিত হওয়া গাজা নিয়ে আজো একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি।কেনো করেননি?উত্তরটা সহজ। আমেরিকার বিরাগভাজন হবার ভয়ে। ভিসা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে যাওয়ার ভয়ে! একই ভাবে দেশের বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক দল ও তাঁদের মিত্রদের কেউ একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি আমেরিকা গোস্বা হবে সেই ভয়ে। তাঁদের দুই তিনজন তো মোসাদের পদলেহনকারী ও সুবিধাভোগী হিসেবে ইতিমধ্যে প্রমানীত। সবচাইতে আশ্চর্যের ও বেদনাদায়ক হলো, আমেরিকা ও ইসরায়েলের এই সকল ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে গিয়ে শামিল হয়েছেন দেশের একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল! যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য আজো দেশের মানুষের কাছে। গাজায় ইসরায়েলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে যে দলটিকে মানুষ অগ্রভাগে আশা করেছিলো, নিয়তির কি নির্মম পরিহাস, আজ হীণ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লোভে তাঁরাও ইহুদিদের মিত্র! যদিও তাঁদের এই মিত্রতা দলটির রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রতীয়মান হয়ে থাকবে বহুদিন।তাঁদের সকল প্রচেষ্টা আজ কার্যতঃ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। আমাদের দেশের সিংহভাগ মিডিয়াও এই বিষটিকে বেশ চতুরতার সাথে এড়িয়ে গেছে রহস্যজনক কারণে। কিন্তু সবাইতো আর এক হয়না। আমি পাঠকের নিকট এই লেখনীর মাধ্যমে আমেরিকা ও ইসরায়েলের বাংলাদেশী বন্ধুদের মুখোশ উন্মোচনের কিছু চেষ্টা করেছি। এখন তাঁদের আপনারা কোথায় স্থান দেবেন তা আপনার বিবেকের উপর থাকলো প্রিয় পাঠক। মহান আল্লাহ তায়ালা গাজার নারী শিশু ও সাধারণ মানুষকে হায়েনাদের কবল থেকে মুক্ত করুন। ওঁদের জন্য দোয়া ছাড়া আর কিইবা করতে পারি আমরা?
লেখক:- সাংবাদিক ও কলামিস্ট।