শীতে বেশী কাবু শিশুরা
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট ছয় বছর বয়সী রবিউল তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। সঙ্গে সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্টও আছে। চিকিৎসকের পরামর্শে রবিউলকে ব্যবহার করতে হচ্ছে নেবুলাইজার। যার ফলে স্কুলেও যেতে পারছে না। রবিউলের বাবা মুক্তাদির জানান, ছেলেটার অসুস্থতা রীতিমতো ভয়াবহ ধরনের। শীত এলেই এরকম অসুস্থতা চেপে বসে। খুব কষ্ট হচ্ছে বাচ্চাটার। কয়েক দিন ধরে প্রায় পুরো দেশেই জেঁকে বসেছে শীত। পৌষ শেষে এখন শুরু হয়েছে মাঘ মাস। এ মাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। পৌষের শুরু থেকেই ঠান্ডাজনিত রোগে কাবু হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। সেটা এখন বেড়েছে। চিকিৎসকদের মতে, শীতে শিশুদের ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। রাজধানীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। বেশি চাপ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে। এর বাইরেও বিভিন্ন হাসপাতালে সর্দি-জ্বরে আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গেলো বছর (২০২৩ সালে) শুধু ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া নিয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ছয় লাখ রোগী। তাদের মধ্যে শুধু ডায়রিয়া রোগী ছিল সাড়ে চার লাখ। এই দুই রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী রাজশাহী বিভাগে এবং এরপর রয়েছে ঢাকা বিভাগ। চিকিৎসকদের মতে, জানুয়ারি-ফেব্রæয়ারি এই দুই মাস রোগী বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) দেওয়া তথ্যমতে, ঢাকার হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। তবে অন্যান্য সময় গড়ে ২৫০ জন করে রোগী থাকে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জানুয়ারি মাসে শিশু হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। যেটা সাধারণ সময়ে ৩০০ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের রেকর্ড থেকে জানা যায়, গত ১৫ দিনে শুধু ৮০টির মতো শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের শিশু মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিজওয়ানুল আহসান জানান, আমাদের এখানে অন্যান্য সময় যত শিশু রোগী আসতো, শীতের প্রকোপে জানুয়ারির শুরু থেকে তার দ্বিগুণের বেশি আসছে। প্রতিদিন যেখানে ২০০ থেকে ২৫০ শিশু রোগী আসতো, সেখানে গত কয়েক দিনে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী আসছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শীতজনিত রোগ নিয়ে প্রচুর রোগী আসছে। সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক শিশু। শীত বাড়লে এই রোগ আরও বাড়বে। শিশুদের গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। সাধারণ সর্দি-কাশিতে যতœ না হলে জটিলতা বাড়তে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। এসব রোগ প্রতিরোধে শিশুদের খুব সাবধানে রাখতে হবে। যতটা পারা যায় সব বয়সের মানুষকে ঘরে থাকতে হবে। ঘরের বাইরে গেলে যথাযথ পোশাক পরতে হবে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শীতে শিশুদের সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বাড়ে। একইসঙ্গে চর্মরোগ ও ডায়রিয়ার মতো রোগও বাড়ছে। শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না। শ্বাসকষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।