জুয়ার জোয়ারে ভাসছে না’গঞ্জ
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁ, রূপগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন স্পটে প্রকাশ্যে প্রতিদিনই বসছে জুয়ার আসর। তবে রূপগঞ্জে এর প্রভাব বেশী। পাড়া-মহল্লা, অলিগলি, খুপরি ঘরে আড়ালে-আবডালে বসে এসব আসর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘুরে এমন হাজারো স্পট দেখলে মনে হবে– রূপগঞ্জ যেন জুয়ায় ভাসছে। তবে প্রশাসন নির্বিকার। অভিযোগ রয়েছে, এসব আসরের কথা পুলিশ জানলেও নিশ্চুপ। আসরগুলো থেকে পুলিশ মাসোহারা পায় ৩০ লাখ টাকা। তবে পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। পুলিশের দাবি, জুয়ার আসর উঠিয়ে দিলেও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আবার চালু হয়ে যায়। ফলে দিন দিন জুয়ার স্পট বেড়েই চলছে। পুলিশের এ অভিযোগ রাজনৈতিক নেতারা অস্বীকার করেছেন। জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় হাজারো স্পটে প্রতিদিন জুয়ার আসর বসে। ১০০ স্পটের ব্যাপারে থানা পুলিশ জানে। তাই এসব স্পটকে বলা হয় ‘পারমিটেড’। বাকিগুলোকে বলা হয় ‘চোরাই বোর্ড’। এসব আসরে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার খেলা চলে বলে জানা যায়। মাসে হাতবদল হয় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। পুলিশ প্রতি মাসে বখরা পায় ৩০ লাখ টাকা। এসব জুয়ার স্পট বন্ধের ব্যাপারে পুলিশের সহযোগিতা চাইলেও পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। জানা যায়, উপজেলার কায়েতপাড়া, দাউদপুর, ভোলাবো, মুড়াপাড়া, ভুলতা, রূপগঞ্জ সদর ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে রাতদিনে ৪০০ স্পটে জুয়ার আসর বসে। এ ছাড়া তারাবো ও কাঞ্চন পৌরসভা এবং চনপাড়া বস্তিতে বসে আরও ৩০০ স্পট। এগুলো ছাড়াও আরও কয়েকশ স্পট রয়েছে। এসব স্পটে প্রতিদিন কোটি টাকার বেশি খেলা চলে বলে জানায় জুয়াড়ি ও জুয়ার আসরের কয়েকজন আয়োজক। এ হিসাবে প্রতি মাসে জুয়াড়িদের কাছে হাতবদল হয় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে বাড়ছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা। মাদকের মতো রূপগঞ্জের ১২৮ গ্রামের ঘরে ঘরে বেড়ে চলছে জুয়াড়ির সংখ্যা। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে না পেরে ও অভিভাবকদের কাছে টাকা চেয়ে না পেয়ে বিভিন্ন গ্রামে গত ৩ মাসে জুয়াড়ি সন্তানের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন অর্ধশতাধিক পরিবারের মা-বাবা ও অভিভাবক। জুয়ার টাকার জন্য চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি করতে গিয়ে গত দুই মাসে আটক হয়েছে ২২ জন। বিভিন্ন এরাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণত জুয়ার আসর বসে বাড়িতে, জঙ্গলে, বড় গাছের তলায়, পুকুরপাড়ে, ঝোপের আড়ালে। আবার খোলা জায়গায়, নয় তো তাঁবু টানিয়ে বসে জুয়ার আসর। কোথাও বসে ট্রলার কিংবা নৌকাতে। কখনও রাতে, আবার কখনও দিনে চলে এসব আসর। উপজেলার কামশাইর, নগরপাড়া, তালাশকুর, বরুণা, চনপাড়া বস্তি, বরাপা, মাসাবো, হাটাব, ইছাপুরা, গুতিয়াবো, উত্তরপাড়ার তুহিন সাহেবের বাগানবাড়িতে, গন্ধবপুর চরে, ব্রাহ্মণখালীর মাঠে, আধুরিয়া, কাঞ্চন, কালনি, গোবিন্দপুর, কান্দাপাড়া, তেতলাবো, মাহনা, মিরকুটিরছেও, নোয়াপাড়া, ভুলতা মিয়াবাড়িসহ বহু স্পটে চলে জুয়ার আসর। এসব গ্রামের অনেক পরিবার এখন জুয়ার কারণে সর্বস্বান্ত হয়েছে বলে জানা যায়। হাটাব এলাকার ব্যবসায়ী মো. আলীর ভাষ্য, জুয়া একটা নেশা। এ নেশা মাদকের মতোই ভয়ংকর। এ ব্যাপারে প্রশাসন শক্ত অবস্থান না নিলে তাঁর মতো অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাবেন। উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, রূপগঞ্জে জুয়া একটি বিরাট সমস্যা। এ জন্য অপরাধও বাড়ছে। জুয়াড়িদের ছাড় দেওয়া হবে না। আইনের আওতায় আনতে হবে। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহার দাবি, জুয়ার আসর থেকে পুলিশ কোনো মাসোহারা নেয় না। বরং জুয়া বন্ধে পুলিশ সোচ্চার। তবে জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালালেই সমস্যা। একে তো অভিযানকালে অনেক জুয়াড়ি পালাতে গিয়ে পানিতে পড়ে অথবা উঁচু ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়। অন্যদিকে তাদের ধরে আনলে রাজনৈতিক নেতাদের তদবির থাকে। তবুও পুলিশ গত ৩ মাসে ২৫ জনকে ধরে আইনের আওতায় নিয়েছে। সমাজকে বাঁচাতে জুয়া বন্ধে পুলিশকে সবার সহায়তা করা দরকার, যা তারা পাচ্ছেন না বলে দাবি করেন ওসি।