টিআইবির সমালোচনায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) রিপোর্টের কঠোর সমালোচনা করেছেন সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা। এই রিপোর্টকে একপেশে, সরকারবিরোধী, অযৌক্তিক ও গোঁজামিলে ভরা বলে দাবি করে তারা বলেছেন, বিএনপি যে ভাষায় কথা বলে, সেই ভাষায় টিআইবিও কথা বলে। বিএনপির ওকালতি করতেই এই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পৃথক সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও বলেন, টিআইবি গবেষণা নিয়ে কাজ করলেও তাদের গবেষণায় নিরপেক্ষতা খুঁজে পাওয়া যায় না। এই গবেষণা আন্তর্জাতিক মানদন্ডেও পড়ে না। গত বৃহস্পতিবার দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, টিআইবি হচ্ছে বিএনপির দালাল ও সরকারবিরোধী। তাদের প্রতিটি কথা একপেশে, বিএনপির ওকালতি করে তারা। বিএনপি যে ভাষায় কথা বলে, সেই ভাষায় টিআইবিও কথা বলে। তিনি বলেন, টিআইবি বিএনপির সুরে কথা বলে, বিএনপির পক্ষে কথা বলে। ইতিহাস থেকে উপলব্ধি করেছি, তারা সব সময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ছিল। গবেষণা নিয়ে কাজ করে তারা। কিন্তু তাদের গবেষণায় আমরা নিরপেক্ষতা খুঁজে পাচ্ছি না। ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্ঘটনা নিয়ে কথা বলে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। ১০০ মানুষ মারা গেলে ৫০০ বানিয়ে দেয়। টিআইবিও তাদের মতো। এই টিআইবি বলেছিল, পদ্মা সেতু অসম্ভব। একই কথা সিপিডিও বলেছিল। কিন্তু বাস্তবতা কী, দেশবাসী দেখেছে। টিআইবির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে কিনা– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু কথা বলা হয় পাবলিক পারসেপশনের জন্য। মামলা করে সবকিছুর সমাধান হয় না। তাদের রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা হবে। কথা বা তর্কের মাধ্যমে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব থাকবেই। আমাদের দলেও দ্বন্দ্ব-কোন্দল আছে। এসব নিয়েই আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে যত সমস্যাই থাকুক, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত দলের কেন্দ্রীয় নেতা বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, পারভীন জামান কল্পনা, অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতা প্রমুখ। একই দিন নিজ দপ্তরে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির ভাষা এবং টিআইবির ভাষা মিলে গেছে। রিজভী আহমেদ প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করে যে কথাগুলো বলেন, সেগুলোকে একটু পরিশীলিতভাবে টিআইবি উপস্থাপন করেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তিনি বলেন, টিআইবি সব সময় গবেষণালব্ধ রিপোর্ট প্রকাশ করে। প্রকৃত পক্ষে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টিআইবি গবেষণা না করেই হালকা কিছু বিষয়, অর্থাৎ পত্রিকার রিপোর্ট এবং তড়িঘড়ি করে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতেই তারা প্রেস ব্রিফিং করে। গতকালেরটাও আমার সে রকম মনে হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সুন্দর ও স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে। সেটিকে ¤øান করার উদ্দেশ্যে টিআইবি এই রিপোর্টটি দিয়েছে। সমালোচকসহ যারা এই নির্বাচন বর্জন করেছে ও প্রতিহত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এখনও চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের মুখে অস্ত্র তুলে দেওয়ার জন্য এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে বলে অনেকে বলছেন। সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, নির্বাচন নিয়ে টিআইবি যে গবেষণা করেছে, তা আন্তর্জাতিক মানদন্ডে পড়ে না। এ রিপোর্ট গোঁজামিলে ভরা ও বিভ্রান্তিকর। টিআইবি অযৌক্তিক কথা বলেছে। তিনি বলেন, যারা এই গবেষণা করেছেন, তাদের গবেষণার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। স্বীকৃত আন্তর্জাতিক জার্নালে তাদের কোনো গবেষণা নেই। টিআইবির গবেষণা বৈজ্ঞানিক মিসকন্ডাক্টকে (অসদাচরণ) ছাড়িয়ে গেছে। তারা অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। অসত্য তথ্য দিয়ে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। বিজ্ঞানসম্মত, আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসরণ না করে তার ফলাফল উপস্থাপন করেছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি টিআইবিকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই; তারা আন্তর্জাতিক মানের কোনো জার্নালে গবেষণা পাঠিয়ে দেখুক, তারা এটা পাবলিশ করবে না। যদি পাবলিশ করে, তাহলে আমি মেনে নেব তাদের এটা গবেষণা হয়েছে।