তিন মাস পর ফের রাজপথে বিএনপি

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছিলেন, আজ শনিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কালো পতাকা মিছিল শুরু হবে। আমরা চিঠি দিয়েছি। আমাদের মৌখিকভাবে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী কথা বলেছেন। উনি আমাকে জানিয়েছেন, মৌখিকভাবে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং অবৈধ সংসদ বাতিলসহ একদফা দাবি আদায়ে আগামীকাল কালো পতাকা মিছিল জেলায় জেলায় অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বাদে যেসব জেলার সঙ্গে মহানগর আছে, সেগুলোতে একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করা হবে আজ শনিবার। এদিকে, কালো পতাকা মিছিলে অংশগ্রহণ করবেন নারায়ণগঞ্জ জেলা-মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এদিকে এক দফা দাবি বাস্তবায়নে দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলনে রয়েছে দলটি। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহা-সমাবেশ পন্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে দফায় দফায় হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দেয় দলটির নেতাকর্মীরা। যাকে ঘিরে সারা দেশের লাখো বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে নাশকতা মামলাসহ নানা নির্যাতনের ঘটনা পাওয়া গেছে। সেই ধারবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জে ও প্রায় ২ হাজার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে আর প্রায় ১ হাজারের উপরে নেতাকর্মী জেলহাজতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। যাকে ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলনে রাজপথে জমায়েত হতে পারছে না। কিন্তু আগামী ২৭ জানুয়ারী রাজবন্দিদের মুক্তিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, বর্তমান ডামি সংসদ বিলুপ্ত, নতুন নির্বাচনের একদফা দাবি নিয়ে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। যাকে ঘিরে প্রায় ৯০ দিন পর রাজপথে নামতে যাচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে সকল নেতাকর্মীরা কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। তারা সকলেই বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনের মূল মিছিলে অংশ গ্রহণ করবেন। ইতিমধ্যে কঠোর আন্দোলন হরতাল ও অবরোধ পালন করতে গিয়ে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী মামলায় জর্জরিত হয়ে গ্রেফতার এগিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। যার কারণে নেতাকর্মীরা রাজপথে জমায়েত হতে পারছে না। কিন্তু আজকে সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই কালো পতাকা মিছিল সফল করবে। সূত্র মতে, গেল ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। ভোট-পরবর্তী নীরবে সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। ভোটের আগে দাবি আদায় নিয়ে হাঁকডাক দিলেও এখন রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচিতে নিস্কিয় দলটি। গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর ২৯ অক্টোবর থেকে দলটি চার দফা হরতাল ও ১৩ দফা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। এরপর লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি দিয়ে আসছে দলটি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরেও কর্মসূচি দিয়েছিল দলটি। নির্বাচনের আগে ঢাকাসহ সারা দেশে মিছিল ও গণসংযোগ করে বিএনপি। পরবর্তীতে নির্বাচনের পর এই প্রথম কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবে বিএনপি। এর আগে দীর্ঘদিন যাবৎ হরতাল-অবরোধ পালনে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিলেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। রাজপথে সকলে একত্রিত হতে পারেননি। কিন্তু এই কর্মসূচি সফল করতে আবারো সেই পুরানোভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে চায় বিএনপি। যার জন্যই এখন একটি আমেজমুখর ভাবে কালো পতাকা মিছিলের প্রস্তুতি নিয়েছেন। আর ব্যাপকভাবে সফল করার আশঙ্কা জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।  জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দীন বলেন, আমরা সবাইকে নিয়ে ঢাকায় উপস্থিত থাকবো। এই কর্মসূচীকে নিয়ে আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। থানা থেকে নিয়ে ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রত্যেক নেতাকর্মীদের মাঝে যোগাযোগ হয়েছে। ইনশাল্লাহ, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওই দিন কালো পতাকা মিছিলে অংশ নেব। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, শনিবারে ঢাকার নয়াপল্টনে আমাদের কালো পতাকা মিছিল করা হবে। যাকে ঘিরে নেতাকর্মীরা অনেকটাই উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠেছে সকলেই কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপকভাবে প্রস্তুত। এই কর্মসূচি আমাদের রাজবন্দিদের মুক্তিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, বর্তমান ডামি সংসদ বিলুপ্ত, নতুন নির্বাচনের একদফা দাবি নিয়ে কালো পতাকা মিছিল। আমরা নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির আলাদা আলাদা ব্যানারে নারায়ণগঞ্জ থেকে হাজারো হাজারো নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ এই কর্মসূচি সফল করবে ইনশাআল্লাহ। ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু বলেন, আমরা রাজপথে বিগত দিন থেকেই আন্দোলনে রয়েছি। আর বর্তমানে যে বিএনপি দেশের জনগণের দল এটা তারা ব্যাপকভাবে গত ৭ জানুয়ারী নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছে। আর দীর্ঘদিন পর বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি জমায়েত হওয়ার কর্মসূচি আসছে এই কর্মসূচি ব্যাপকভাবে সফল হবে। যেহেতু ঢাকায় এই পোগ্রাম সেহেতু সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই কর্মসূচি সফল করা যাবে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম বলেন, আমরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির বিগত দিন থেকেই অনেকটা ঐক্যবদ্ধ অবস্থায় রয়েছি সেহেতু শনিবার ঢাকায় আমরা যোগদান করবো কালো-পতাকা মিছিল নিয়ে আর সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচিতে থাকবে বিশেষ করে সেদিন বিএনপির নেতাকর্মীদের থেকে বেশি দেখা যাবে দেশের সাধারণ জনগণদের। রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাছির উদ্দিন বাচ্চু বলেন, আমরা রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি বিগত দিনে জেলা বিএনপিকে ব্যাপকভাবে সাপোর্ট দিয়ে গেছি। এবার ও ঢাকায় এই কালো পতাকা মিছিলে রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপক হারে অংশ গ্রহণ করবে। আর দীর্ঘদিন পর এভাবে জমায়েত হওয়ার কর্মসূচি কেন্দ্র দিয়েছে যাকে ঘিরে নেতাকর্মীরা আবারো চাঙ্গা হওয়া শুরু করবে। সদর থানা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এম.এইচ আনোয়ার প্রধান বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা শনিবারের কালো পতাকা মিছিল সফল করতে উজ্জ্বীবীত হয়ে উঠেছে। সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঢাকায় এই কর্মসূচি পালনে রাজপথে থাকবে যত বাধা আসুক না কেন সকল বাধাকে উপেক্ষা করেই নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচি সফল করবে। ইতিমধ্যে আমাদের নেতাকর্মীরা মামলায় জামিন পাওয়া শুরু করে দিয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীরা মামলা থেকে জামিন পাবে। এর পর থেকে সকল নেতাকর্মী আবারো চাঙ্গা হয়ে রাজপথে থাকবে ইনশাআল্লাহ। মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেন, বিএনপি একটি জনসমর্থন দল হিসেবে আবারো প্রমান হয়েছে গত ৭ জানুয়ারী। দেশের জনগণ বিএনপিকে কতটা ভালোবাসে তার প্রমান দিয়েছে নিরবভাবেই। যার মাধ্যমে এই অবৈধ সরকারের পাতানো নির্বাচনকে বয়কট করেছে। আ আওয়ামী লগি যে জনসমর্থন দল নয় তা প্রমান হয়েছে। ইতিমধ্যে দীর্ঘদিন নির্যাতনের কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরা জমায়েত হয়ে ফ্রনলাইনে আসতে পারেনি শনিবার সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঢাকায় নেতাকর্মীরা চমক দেখাবে। জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বলেন, শনিবার ঢাকায় আমাদের কালো-পতাকা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। রাজবন্দিদের মুক্তিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, বর্তমান ডামি সংসদ বিলুপ্ত, নতুন নির্বাচনের একদফা দাবিতে এই কর্মসূচি পালিত হবে। আর এই কর্মসূচিতে সফলতা আনতে আমরা জেলা যুবদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ অবহৃত রেখেছি। সকলেই কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়ে যাচ্ছেন।

মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাগর প্রধান বলেন, দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষে আন্দোলনের কোন বিকল্প নাই। বিগত দিনে আন্দোলনের মাধ্যমেই দেশে সকল প্রকারের সফলতা দেখা গেছে। এই আন্দোলনের একটি অংশ হিসেবেই শনিবার ঢাকায় আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কর্মসূচি সফল করতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সকল বাধা উপেক্ষা করেই নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচি সফল করবে। মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব শাহেদ আহম্মেদ বলেন, দীর্ঘদিন পর আমাদের একটি নতুন কর্মসূচি এসেছে। যা আমরা যথাযথভাবে সফল করবো। ইতিমধ্যে আমাদের প্রত্যেকটি ইউনিটের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ অবহৃত রেখেছি। শনিবার ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে এই কালোপতাকা মিছিল সফল করবো। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মমিনুল ইসলাম বাবু বলেন, আমরা রাজপথে বিগত দিনে ছিলাম সামনে ও থাকবো। ইতিমধ্যে আমাদের নেতাকর্মীরা শনিবারের কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি রেখেছে। কোন বাধাকে বাধা মনে না করে তা উপেক্ষা করেই আমাদের কর্মসূচি সফল হবে।