দৈন্যদশা কাটেনি মহানগর আ’লীগের
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক ভাবে দল দুর্বল হয়ে রয়েছে। যার চিত্র সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনের মাধ্যমে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে ফুটে উঠেছে। তার মাঝে সিদ্ধিরগঞ্জের ১০টি ওয়ার্ড পরছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীড়ের আওতাধীন। এখানে এমপি শামীম ওসমান তেমন একটা ফল প্রসু ভোট পান নাই। আর এতে করে দলীয় নেতা কর্মীদের ভুমিকা দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। নির্বাচন কমিশন সুত্রমতে, তার আসনে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পড়েছে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসন মোট ৬ লাখ ৯৬ হাজার ১৩৯ জন ভোটারের মধ্যে ২ লাখ ১৬ হাজার ২৩০ জন ভোট প্রদান করেছে ভোটাররা। আর এতে করে ওয়ার্ড পর্যায়ের দলীয় নেতা কর্মীরা যে ভোটারদের টানতে ব্যর্থ হয়েছে তা বলার অবকাশ রাখে না। অপরদিকে দীর্ঘ প্রায় ২১ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে না। এতে করে দলের মাঝে নতৃন নেতৃত্ব তৈরী হচ্ছে না। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের পূর্বেই মেয়াদোত্তীর্ণ নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দিন তারিখ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও সম্মেলন বাতিল করা হয়। সম্মেলন ঘিরে সক্রিয় হওয়া হাফডজন নেতা চুপসে গেছেন। পদ-পদবি নিয়ে তাদের যতটা সক্রিয় দেখা গেছে, সম্মেলন বাতিল হওয়ার পর তারা ততটাই নিষ্ক্রিয়ও হতাশ হয়েছেন। ফলে তৈরি হচ্ছে না নতুন নেতৃত্ব। দলীয় সুত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ২৭টি ওয়ার্ডের কমিটিও নেই দীর্ঘদিন ধরে। নির্বাচনের আগে ১৭টি ওয়ার্ডের সম্মেলন হলেও সে গুলোর কমিটি ঘোষনা করা হয় নাই। সেই সাথে সিদ্ধিরগঞ্জের ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনের কোন হদিস নেই। অভিযোগ রয়েছে সভাপতি সেক্রেটারির মাঝে মিল না থাকায় এই কমিটি গুলো আটকে রয়েছে। এতে করে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নড়বড়ে হয়ে আছে। যার চিত্র সিদ্ধিরগঞ্জের ১০টি ওয়ার্ডে কমিটি না থাকায় তার চিত্র উঠে আসে। কিন্তু সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে এটা আশা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কমিটি না হওয়ায় সাংগঠনিক ভাবেও দল দুর্বল হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাকে ঘিরে দুইভাগে বিভক্ত মহানগর আওয়ামী লীগ। তারা দুইজন স্থানীয় রাজনীতিতে দুই বলয় ধারণ করে চলছেন। এর মধ্যে সভাপতি আনোয়ার হোসেন দক্ষিন বলয়ে ও খোকন সাহা উত্তর বলয়ে রাজনীতি করেন। দলীয় সূত্রমতে, মহানগর আওয়ামী লীগে ২০ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন আনোয়ার হোসেন আর ২৭ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন এডভোকেট খোকন সাহা। সর্বশেষ সম্মেলন ছাড়াই ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও এডভোকেট খোকন সাহাকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। এর দুই বছর পর ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ এই সময়েও তারা মহানগরের আওতাধীন ২৭টি ওয়ার্ডের সবগুলোতে কমিটি গঠন করতে পারেননি। মূলত নিজেদের মধ্যে কোন্দল ও বিভেদের কারণেই দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ওয়ার্ড কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৭ সালের মে মাস জুড়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও কার্যত তা বাস্তবায়ন হয়নি। আর গত বছরের ২৫শে অক্টোবর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিন ও স্থান ধার্য্য করা হয়েছিল। সম্মেলন সফল করতে মহানগরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে কর্মী সম্মেলনও করা হয়েছিল। ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু ২৫ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হবে এমন অজুহাত দেখিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন বাতিল ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার আভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং মহানগর আওয়ামী লীগের অধীনে থাকা ২৭টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে না পারার কারণেই সম্মেলন হয়নি। দলীয় নেতা কর্মীরা বলছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি না থাকায় নির্বাচনে নিজেদের অবস্থা নড়েবরে হিসেবে উঠে এসেছে। কেননা দলের মুল চালিকা শক্তি হলো তৃনমূল নেতা কর্মীরা। সেখানে আওয়ামী লীগের সাংগটনিক ভাবে দুর্বল হয়ে রয়েছে। আর এজন্য নির্বাচন আসলে তার খেসারত দিতে হচ্ছে। তবে তৃনমূল নেতা কর্মীদের দাবী ওয়ার্ড কমিটি গুলো যেন দ্রুত ঘোষনা করা হয়। আর যে গুলো বাকি রয়েছে সে গুলো যেন দ্রুত শেষ করা হয়।