হতাশায় বিএনপির কর্মীরা
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট সরকারের এক তরফা নির্বাচন ঠেকাতে হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন ধরণের আন্দোলন করলেও তা প্রতিহত করতে পারেনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে বাদ দিয়েই দ্নাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এর মধ্যেই আন্দোলনে বিএনপির পরাজয় ঘটেছে। আর এর প্রভাব রাজনৈতিক আলোচনার শহর নারায়ণগঞ্জ বিএনপিী উপরও প্রভাব পড়েছে। বারবার আন্দোলন কর্মসূচির ডাক দিলেও শেষ পর্যন্ত কেনো তা ব্যর্থ হলো এখন সে প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন দলটির তৃণমূলের হতাশ নেতা-কর্মীরা। সদ্য অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন বাতিলের দাবিতে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলেও অন্যান্য সময়ের আন্দোলন থেকে এবারের অসহযোগ আন্দোলনে নারায়নগঞ্জ বিএনপির আন্দোলনের প্রশংসা কেন্দ্রসহ নারায়নগঞ্জবাসীর আলোচনায় ছিল। জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহন করা তৃনমূল একটি প্রশ্নই গুরপাক খাচ্ছ? কি কারনে বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হল। আর সরকার বিরোধী আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপির তৃণমূলে এখন হতাশা দেখা দিয়েছে। এই ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন অনেকেই। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা, ১ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করায়আগামী ৩০ বছরেও বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যেহেতু এতো আন্দোলন করেও নির্বাচন ঠেকানো যায়নি সেহেতু নির্বাচনের পর যে সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না সেটাও স্বীকার করে নিচ্ছেন কেউ কেউ। হতাশ এসব নেতা-কর্মীরা বলেন, নির্বাচনের পর বিরোধী দলের নাশকতামূলক কর্মকাÐ ঠেকাতে সরকার আরও কঠোর হতে পারে, এমনকি নাশকতাকারীদের সরাসরি গুলি করারও নির্দেশ দিতে পারে। এতে করে আর আন্দোলন কর্মসূচি ডাকার লোকও পাওয়া যাবে না। বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, দলের মধ্যে প্রচÐ রকমের সমন্বয়হীনতা এবং স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট থাকার কারণেই এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। তারা মনে করেন, বিএনপির নেতৃত্বে এখন আর প্রকৃত রাজনীতিবিদরা নেই, এখন সুবিধাবাদী আমলা নির্ভর দলে পরিণত হয়েছে বিএনপি। এই কারণেই তৃণমূলের সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের যোগাযোগ বা সমন্বয় নেই। আর এই কারণেই তাদের ডাকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সাড়া দিচ্ছেন না এবং বিরোধী জোট আহুত কোনো আন্দোলনও সফল হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের জেলার নেতাদের তেমন কোনো যোগাযোগ নেই। দলটির জেলা নেতাদের মধ্যেও রয়েছে একাধিক গ্রæপ। আর সে কারণে দলের মধ্যে কোনো ধরণের সমন্বয়ও নেই। এই সমন্বয়হীনতার কারণেই মূলত কোনো আন্দোলনে সফলতার মুখ দেখেনি বিএনপি। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ওপর এখন কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশ এলেও সেটাই সত্যিকার অর্থেই দলের নির্দেশ কিনা তাও অনেকে বিশ্বাস করেন না। দলের মধ্য থেকে এই সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর বিএনপির এক নেতা বলেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পাড়যন্ত তারেক রহমান ভিডিওবার্তায় নেতা-কর্মীদের মাঝে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এতেই প্রমাণ হয় দলের মাঝে সমন্বয়হীনতা কত প্রকট আকার ধারণ করেছে। জেলা ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপির আদর্শ ছিল জিয়াউর রহমানের মধ্যপন্থি জাতীয়তাবাদী দর্শন। এই দর্শনের ওপরেই বিএনপির প্রতিষ্ঠা। কিন্তু বিএনপি এখন অনেকটা স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্তে¡ও সাধারণ মানুষ আন্দোলনে আসছে না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের শেয়ার বাজার, পদ্মাসেতু, হলমার্ক প্রভৃতি কেলেঙ্কারির কারণে আওয়ামী লীগের ওপর কিছুটা ক্ষোভ থাকলেও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গে জোট বাধার কারণে বিএনপির নেতৃত্বে ডাকা আন্দোলনে সাধারণ মানুষ মাঠে নামছে না। জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা ছাড়া বিএনপির আন্দোলনের এই দুর্দশা কাটবে না বলেও মন্তব্য করেন ছাত্রদলের সাবেক ওই নেতা।