আজ সোমবার | ১১ আগস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৬ সফর ১৪৪৭ | রাত ৯:০৯

হকারদের দখলে ফুটপাত!

ডান্ডিবার্তা | ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ শহরে ফুটপাতের পাশাপাশি সড়কের একটা অংশও দীর্ঘদিন ধরে হকারদের দখলে রয়েছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরীর লাখ লাখ মানুষ। মাঝেমধ্যে পুলিশ অভিযান চালালেও দৃশ্যপট খুব একটা পাল্টায় না। স্থানীয়দের চোখে পুলিশের এ অভিযান শুধুই ‘লোক দেখানো’। স্থানীয়রা জানান, চাষাঢ়া থেকে শুরু করে নিতাইগঞ্জ, ২ নম্বর রেলগেট ও কালীরবাজার হয়ে খানপুর এ পথটুকু পাড়ি দিলেই নারায়ণগঞ্জ শহর প্রদক্ষিণ করা হয়ে যায়। রিকশায় সময় লাগে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট। কিন্তু হকাররা ফুটপাত আর সড়ক দখল করে দোকান বসানোয় দুই ঘণ্টায়ও এ পথ শেষ করা যায় না। সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই পাশে কয়েক শতাধিক হকার ফুটপাত অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসা করছেন। এ সড়কের হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার উচ্ছেদ নিয়ে সংঘর্ষও হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে হকার উচ্ছেদ করা যায়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, চাষাঢ়া সোনালী ব্যাংকের সামনে থেকে কালীরবাজার ব্যাংকের মোড় এলাকা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ হকারদের দখলে চলে গেছে। ফলে সারাদিন ওই সড়কের পথচারীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। ফুটপাতে দোকানের কারণে হরহামেশাই মানুষের জটলা বেঁধে যায়। চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। নারায়ণগঞ্জের কালীরবাজার থেকে ১ নম্বর রেলগেট এলাকার সড়কের দুই পাশেও অবৈধভাবে কয়েকশ দোকান গড়ে উঠেছে। অবৈধ দোকানে ভরে গেছে কেন্দ্রীয় ডাকঘর থেকে গ্রিনলেজ ব্যাংক (সাবেক) পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের ফুটপাতও। সেখানে ফুটপাত দখল করেই লেপ, তোশক ও জাজিম বানানোর কাজ চলছে। বেসরকারি চাকরিজীবী শিপন ভূইয়া জানান, নারায়ণগঞ্জ খুব ছোট একটি শহর। চাইলেই এ শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। আমার কাছে মনে হয়, সেই চাওয়াটাই এখানকার জনপ্রতিনিধির মধ্যে নেই। এখানে রাজনৈতিক স¤প্রীতির চেয়ে হিংসা বেশি কাজ করে, যার কারণে এই নগরীর এমন দশা। চাষাঢ়া সমবায় মার্কেটের ব্যবসায়ী রিপন মাহমুদ আকাশ জানান, মার্কেটের সামনে হকাররা ফুটপাত দখল করে দোকান বসায়। তাদের দোকানের কারণে ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দে মার্কেটে ঢুকতে পারেন না। অনেকের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাতে দোকান বসানোর সবচেয়ে বড় কারণ হলো চাঁদাবাজি। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ বলেন, ‘সড়ক দখল করে অবৈধভাবে হকারদের বসার কোনো অধিকার নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা বহুবার কথা বলেছি। কিন্তু আমাদের এখানে রাজনৈতিক দলগুলো হকারদের মানবিক বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে। কিন্তু হকারদের পুনর্বাসনের জন্য একটি হকার্স মার্কেট করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু দিন দিন হকার বেড়েই চলেছে এ শহরে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এক হয়ে কাজ করলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।’ শাহীন আহমেদ মনে করেন, ‘হকারদের মাধ্যমে একটি শ্রেণি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে হকার বলেন, আর ইজিবাইক বলেন, সব কিছুর মূলে রয়েছে আর্থিক লেনদেন। বিভিন্ন সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী হকার ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ হলো হকারের নগরী। নারায়ণগঞ্জের সবাই জানেন, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি এই হকার ইস্যুতে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম। গুলি করেছিল। আমার কিছু অকুতোভয় কর্মী মানবঢাল বানিয়ে আমাকে রক্ষা করেছিল। সেই ঘটনার মামলায় পিবিআই তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অস্ত্রধারীর অস্ত্র দেখেছে। শাহ নিজামের অস্ত্র দেখেছে। কিন্তু অস্ত্রটি লাইসেন্স করা। আপাতত উনাকে পাওয়া গেল না বিধায় তার সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই তাকে অস্ত্র মামলা থেকে খালাস দেওয়া হোক। আইভী বলেন, ‘এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে আমরা নারাজি দিয়েছি। আমরা কারও কাছ থেকে কোনো কিছু চাই না। আমরা চাই প্রশাসন তাদের নিজেদের কাজটুকু করুক।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই হকার নিয়ে এত সমস্যা হচ্ছে, সমস্যার কথা এতবার বলা হচ্ছে, কিন্তু বিষয়টি সমাধান হচ্ছে না। একটি শহরের ফুটপাত, তাও শুধু বঙ্গবন্ধু রোডের, সেটা পরিষ্কার রাখা যাবে না, এটা কেমন কথা? এই ধনী জেলা নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে কোটি কোটি টাকা মানুষ নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের কর্মচারী থেকে শুরু করে কর্মকর্তাÑ এমন কেউ নেই যারা এই নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে টাকা নেন না। বিষয়টি ওপেন-সিক্রেট। তাহলে আপনারা কাজ করবেন না কেন?’ এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘ফুটপাত দখলের বিরুদ্ধে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের চলাচলের বিঘœ ঘটিয়ে যাতে ফুটপাতে হকাররা বসতে না পারেন, সে জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি। কিন্তু পুলিশ চলে গেলে তারা আবার এসে বসছেন। এমনও হয় যে, আমরা অনেক সময় তাদের মালামাল পর্যন্ত জব্দ করে নিয়ে আসি। পরে আবার শর্ত দিয়ে সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরে তারা পুলিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। বলে পুলিশ পেটে লাথি দিচ্ছে। এই বিষয়টা নিয়ে আসলে পুলিশের একার পক্ষে কোনো সমাধান দেয়া সম্ভব না। সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসকসহ সবার সমন্বয়ে সমাধান করতে হবে। চাঁদাবাজির বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘চাঁদা দেওয়া কোনো ব্যক্তি আজ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে দেয়নি। তবে আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা সবসময়ই থাকে। এ ধরনের কোনো বিষয় জানতে পারলে আমরা অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেব।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা