আজ মঙ্গলবার | ১২ আগস্ট ২০২৫ | ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৭ সফর ১৪৪৭ | রাত ৩:০০

মূল্যস্ফীতিতে মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে

ডান্ডিবার্তা | ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানসিক চাপ বাড়ছে। দ্রব্যমূল্য দিন দিন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি এখন এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তে পরিণত হচ্ছে। আর নি¤œবিত্ত মহাসংকটে পড়ছে। মানুষ এখন সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। যাদের সঞ্চয় নেই, তারা ঋণ করছে। ফলে মানুষের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দিন দিন সংকট আরও বেড়ে যাবে। নীলফামারীতে আশিকুর মোল্লা বাবু নামে একজন ব্যবসায়ী স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যাকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। আশিকুরের চাচাতো ভাই জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর পর ব্যাংক থেকে নেওয়া ২২ লাখ টাকা ঋণ শোধ করতে গিয়ে আশিকুরের ব্যবসার পুঁজি শেষ হয়ে যায়। পাশাপাশি তিনি যে রাখিমালের ব্যবসা করতেন সেখানেও বড় ধরনের লস করেছেন। তার গোডাউনে রাখা রসুন সব পচে গেছে। নতুন করে ব্যবসা করতে পৈতৃক কিছু জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি করতে গেলে শরিকরা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এসব কারণে হতাশ হয়ে বেশ কিছুদিন ঘরবন্দী ছিলেন আশিকুর। মানসিক বিপর্যয় থেকে তিনি এই কাজ করে থাকতে পারেন।’ সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, ‘আমাদের দেশটা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এখানে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে। গরীব আরও গরীব হচ্ছে। এই ব্যবসায়ী আশিকুর মোল্লা তার ন্যূনতম একটা সম্মানবোধ আছে। তিনি তো নীলফামারীর সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মোল্লার ছেলে। ফলে সম্মানবোধ থেকে তিনি হয়ত এই কাজ করেছেন। কিন্তু আমাদের দেশে তো হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি হয়ে অনেকেই আয়েসে জীবন যাপন করছেন। তাদের ওই সম্মানবোধটাই নেই। এখন পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে তাতে গরিব আরও গরিব হচ্ছে।’ আশিকুর মোল্লার স্ত্রী তহুরা বেগমের ছোট ভাই মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘অনেক দিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন আশিকুর। তিনি মনোরোগ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। ঘটনার পর তার বাসা থেকে বেশ কয়েকটি চিকিৎসার ব্যবস্থাপনাপত্র জব্দ করেছে পুলিশ। সব ব্যবস্থাপনাপত্র মনোরোগ চিকিৎসকদের। এ ছাড়া ঘরের ভেতরে বিছানার পাশ থেকে রক্তাক্ত চাকু পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, স্ত্রী-সন্তানদের হত্যার পর ওই চাকু দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন আশিকুর। তবে তিনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত পুরো ঘটনা বোঝা যাচ্ছে না।’ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘মানুষ অনেক সময় হতাশা থেকে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তবে সবাই একই ধরনের চিন্তা করেন না। হয়ত কোনো একটা সমস্যার কারণে একজন আত্মহত্যার পথে গেলেন। আবার একই ধরনের সমস্যা অন্য আরেকজন অন্যভাবে সমাধান করছেন। এগুলো নির্ভর করে মানসিক চাপ কে কতটা নিতে পারছে। নীলফামারীর এই ঘটনাটাতে যেটা মনে হচ্ছে, তিনি হতাশা থেকে এটা করেছেন। স্ত্রী-সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা থেকেই হয়তো তাদের হত্যার পর নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তবে যে চিন্তা থেকেই এটা করে থাকুক না কেন, সেটা ইতিবাচক নয়। কোনো পরিবারে যদি কেউ এই ধরনের হতাশায় ভোগেন তাহলে দ্রæত মনোরোগ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ এই ধরনের মানুষ যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারেন।’ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিদিনকার জীবনযাত্রায়সৃষ্টি করেছে এক টালমাটাল অবস্থা। আয়-ব্যয়ের সংযোগ ধরে রাখতে না পেরে অনেকেই ভুগছেন অশান্তিতে। অস্থিরতা আমাদের ভেতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয়। মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণও এখন বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যেও। অ্যামেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি জরিপে জানা গেছে, ৮৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী নিত্যকার জীবনের বেশিরভাগ মানসিক চাপের উৎসই হচ্ছে সা¤প্রতিক মূল্যস্ফীতি। এই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি না পেলে দৈনন্দিন জীবন ক্রমশ হয়ে উঠবে আরও দুর্বিষহ। মনোবিদরা বলছেন, নিজের মনোযোগ কিছুটা সরিয়ে আনার মাধ্যমে মানসিক চাপ থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি মিলতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, আমাদের আয় তো বাড়ছে না। কিন্তু ব্যয় তো বেড়েই চলেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আমাদের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। নীলফামারীর এই ভদ্রলোক হয়ত প্রচÐ ভাবে মানসিক চাপে ছিলেন। যে কারণে পুরো পরিবারকে নিয়ে মৃত্যুর কথা ভেবেছেন। অনেকে হয়ত এই অবস্থায় না গেলেও প্রচÐ মানসিক চাপে আছেন। এখন আমাদের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে আমাদের ঋণ নিলে কিন্তু শোধ করতেই হয়। আমাদের দেশে তো বেকার ভাতা নেই। আমাদের স্বাস্থ্যখাতে একটা বড় খরচ চলে যায়। অথচ উন্নত দেশগুলোতে দ্রব্যমূল্য বাড়লেও স্বাভাবিক জীবনে এর খুব বেশি প্রভাব পড়ে না। কারণ স্বাস্থ্য খাতে তাদের খরচ করতে হয় না। এসব কারণে আমাদের দেশে অনেক বেশি সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। তরুণেরা বিপথগামী হচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। কারণ তারা হাত পাততে পারে না। ফলে তাদের সঞ্চয় ভেঙে বা ঋণ করে চলতে হচ্ছে। আর সেই ঋণ শোধ করতে গিয়েই হচ্ছে সংকট।’




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা