আজ সোমবার | ১১ আগস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৬ সফর ১৪৪৭ | রাত ৮:২৫

রূপগঞ্জে ইসলাম ব্রিক ফিল্ডে চলছে শিশু শ্রম

ডান্ডিবার্তা | ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি রূপগঞ্জে সাওঘাট ইসলাম ব্রিক ফিল্ড পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া শিশু শ্রমিক দিয়েই ইট ভাটায় ইট তৈরির কাজ চালিয়ে আসছে। সংবাদ পেয়ে তথ্য সংগ্রহে ছবি তুলতে গেলে বাধা দিয়ে সাংবাদিকদের প্রাননাশের হুমকি দিয়েছে ভাটার মালিক শের আলীর ছেলে দীন ইসলাম”। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার ১২টায় উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন সাওঘাট আবাসিক এলাকার ভিতরে গড়ে ওঠা শের আলী ইসলাম ব্রীক ফিল্ডের ভিতরে। সাংবাদিকরা জানান শিশু শ্রমিক ও ব্রিক ফিল্ডের ছবি তুলতে গেলে শের আলীর ছেলে দীন ইসলাম সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন “এটা আমার বাপ দাদার সম্পত্তি এখানে যা খুশি তাই করব” এগুলো সাংবাদিকদের দেখার কোন অধিকার নাই। তিনি আরো বলেন আমরা কারো ক্ষতি করি না। আমরা যদি ইটা প্রস্তুত বন্ধ করে দেই তাহলে ঢাকা ইট সংকট দেখা দেবে। তিনি আরো জানান, বড় কিছু করতে গেলে ছোট কিছু ক্ষতি হবেই। স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কেউ কেউ পরিবেশ অধিদপ্তরের ফ্যাক ছাড়পত্র জোগাড় করে। এদের মধ্যে শের আলীর ইটের খোলাও আছে বলে তাদের ধারণা। তবে এসব খতিয়ে দেখলে জাল প্রমাণিত হবে বলে দাবী করেন তারা। জানা যায় রূপগঞ্জে অর্ধশতাধিক ইটভাটার নিরব অত্যাচারে ক্ষতিকর কালো ধোয়ার কবলে স্থানীয় কৃষি ও সামাজিক পরিবেশ। স্থানীয় কৃষকদের দাবী, ইট ভাটায় আগুন দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত কিছুটা স্বস্থ্যি হলেও আগুন দেয়ার পর কৃষি ফসলের ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেয়। এই এলাকার আমগাছগুলোতে মুকুল এলেও তা আম পর্যন্ত ফলনের মুখ দেখে না। নারিকেল গাছের ডগাগুলো থুবরে পরে। কলাগাছগুলোর পাতাও এ সময় মরে যায়। কৃষকরা আরো জানায়, ইটা প্রস্তুতে ফসলি জমির উর্বর মাটি তথা টপসয়েল কেটে ভাটায় মন্ডা তৈরী করে। ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পায়। এতে ভাটা পড়ে ফসল উৎপাদনে। সরেজমিন রূপগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, দাউদপুরের লক্ষ্যা শিমুলিয়া থেকে বেলদী, দেবই, খৈসাইর, খাস দাউদপুর, খাস কামাল কাটিসহ শীতলক্ষ্যার দুপারেই রয়েছে ৩০টির অধিক ইটভাটা। এসব ইট ভাটা গুলোতে শিশু শ্রমিক দিয়ে ইট তৈরির কাজ করানো হচ্ছে। এসব ইট ভাটায় প্রকাশ্যে পুড়ানো হচ্ছে কাঠ। কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সহজ জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার হচ্ছে হরদম। ফসলি জমি ও নদী তীরের বসতি ঘরের পাশেই গড়া এসব ইটাখোলায় নানা অনিয়মের মাধ্যমে চালাচ্ছে তাদের কার্য্যক্রম। শুধূ তাই নয়, ইটা খোলার ইট বহনের কাজে ব্যবহার হয় সেলো চালিত ইঞ্জিন দিয়ে তৈরী নছিমন,ভটভটি ও ইছার মাথা নামে পরিচিত ঝুঁকিপূর্ণ ট্রাক্টর দিয়ে। সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার কোল ঘেষা এই রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠেছে ইটভাটা। এসব ইট ভাটার কালো ধোয়া ঢাকার বায়ু দুষণের কারণ কি না তা খতিয়ে দেখার দাবীও করেন স্থানীয়রা। সূত্রে আরো জানা যায়, ইটভাটার কালো ধোয়া থেকে বাতাসের সাথে কার্বন মনোক্সাইড, অক্স্রাইড অব সালফার মিশে যায়। ফলে মাত্রারিক্তি দূষণ হয় বায়ুর। এর প্রভাবে অসুস্থ্য হয়ে পরে জনজীবন আইন লঙ্ঘন করে প্রশাসনের নাকের ডগায় একের পর এক ইটখোলা গড়ে ওঠলেও নজরদারী নেই বলে জানান স্থানীয়রা। এলাকার কৃষক রফিক মিয়া বলেন, ইট ভাটার প্রভাবে আমাদের ক্ষেত খামারে ভাল ফসল পাই না। প্রতিবাদ করেও কোন সুরাহা পাই নাই। গ্রামের অন্য কৃষকরা জানায়, ইটাখোলার ধুয়া আর ধুলো বালিতে আমাদের ফসল ভাল হয় না। ইট ভাটা এলাকার স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, থানা প্রশাসন, স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে চলে এসব অবৈধ ইটভাটা। ভুক্তভোগীরা বলেন, ফসলি জমি, স্কুল কলেজ, মসজিদ মাদরাসা ও বসত বাড়ি ঘেষেই গড়ে ওঠেছে এসব ইটভাটা। লোকালয় ও নদী থেকে ৩ কিলোমিটার দুরে এসব ভাটা নির্মানের বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছে না এখানে। অন্যদিকে কৃষিজমিতে ইট ভাটা স্থাপনে আইনি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আবাসিক এলাকাগুলোতে গড়ে তোলা হয় ইটভাটা। স্থানীয়রা জানায়, ইট ভাটার মালিকরা সব সময় প্রভাবশালী। তাদের সাথে স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর গোপন আতাত। তাদের বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দটি করার সাহস পায় না। অনুসন্ধানে জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নেরই রয়েছে ৬০টির অধিক ইটভাটা। এসব ইটভাটার মধ্যে সরকারী হিসেবে পাওয়া যায় কেবল ৩০ টি ইটভাটা। এদের মধ্যে বেশিরভাগ ইটাখোলার নেই বৈধ কাগজপত্র। তারা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চালাচ্ছে ইটা ভাটার ব্যবসা। ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স। তাদের রয়েছে ইটা খোলা মালিক সমিতি। এ সমিতির অধীনে চলে এসব ইট ভাটা। সমিতি আবার অনিয়মকে নিয়ম করে দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের চাপ এড়াতেই এ সমিতির কার্য্যক্রম চালায়। শুধু তাই নয়, বাইরের মঙ্গা পীরিত জেলার কম মূল্যের শ্রমিক, মহিলা শ্রমিক, ও শিশু শ্রমিক দিয়ে চলে ইট ভাটার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। শের আলীর ইসলাম ব্রিক ফিল্ড নামের ইট খোলায় গিয়ে শিশুদের ইট তৈরী করতে দেখা যায়। এছাড়াও তাদের দিয়ে ইট পোড়ানোর কাজও করে থাকে বলে জানা গেছে। শ্রম আইনের বালাই নেই এসব ইটা খোলায়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুসারে পরিবেশগত বিধি বিধান লঙ্ঘন করলে ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের শাস্তির বিধান আছে। এ সময় ইচার মাথা ও ভাটায় অনিয়ম বিষয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করবেন বলে জানান তিনি।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা