আজ সোমবার | ১১ আগস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৬ সফর ১৪৪৭ | রাত ৮:৪৭

সিদ্ধিরগঞ্জে চলছে গ্যাস চুরির ‘মহোৎসব’

ডান্ডিবার্তা | ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৭নং ওয়ার্ডে চলছে গ্যাস চুরি ও অবৈধ সংযোগের মহোৎসব। তিতাসের অসাধু কিছু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মিজানুর রহমান খান রিপন ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী জহির সহ বেশকয়েকজন সহযোগীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আদমজী নগর কদমতলী এলাকার ইয়াবা ও ফেন্সিডিলের ডিলার হিসেবে পরিচিত জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির শেল্টারে শক্তিশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। একই এলাকার সাইদুর রহমান ছদু, ফজল হাওলাদার, তার ছেলে রাশেদ হাওলাদার, আলমগীর হলেন সিন্ডিকেট প্রধান। সুমন, দুলাল মুন্সি, জীবন, খায়ের, সুজন ওই সেন্ডিকেটের অন্যমত সদস্য। এই চক্রের নেতৃত্বে এলাকার কদমতলী নয়াপাড়া, খালপাড়, ফলপট্টি, ভূঁইয়াপাড়া সহ বেশ কয়েকটি এলাকাজুড়ে এসব সিন্ডিকেট তিতাসের কিছু কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এক থেকে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন নব নির্মিত আবাসিক ভবন ও অবৈধ মিল কারখানায় গভীর রাতে গ্যাস সংযোগ দিচ্ছেন। কদমতলীর বাসিন্দা মো. জাকির হোসেন জানান, অদক্ষ লোকেরা ত্রুটিপূর্ণ লাইন সংযোগ দিচ্ছেন। রাতের আধাঁরে তরিঘড়ি করে লাইন সংযোগ দেওয়ায় লিকেজ হয়ে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটে অনাকাঙ্খিতভাবে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। তিতাস কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে কোন বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও দুই একদিনের মধ্যে আবার সংযোগ দিচ্ছেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। কদমতলী প্রধান মসজিদ এলাকার বাসিন্দা হাসান  জানান, গেলো কয়েকদিন আগে তিতাস কর্তৃপক্ষ এলাকায় নামমাত্র অভিযান চালায়। তেমন কোনো অবৈধ গ্রাহকেরই লাইন কাটেনি। তিতাস কর্তৃপক্ষ কঠোর থাকলে এলাকায় এভাবে হাজার হাজার সংযোগ দিয়ে অবৈধ গ্যাস বিজনেস আমাদের কাউন্সিলরের লোকজন করতে পারতো না। তারা তিতাস কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন এলাকায় লোক দেখানো কিছু অভিযান চালিয়ে কিছু জরিমানা করে তাদের অভিযান সমাপ্ত করেন। কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর পুনরায় ওই সব অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সকল আয়োজন সম্পন্ন করেন সেই কর্মকর্তারাই। তবে তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ( তিতাসের অসাধু কর্মকর্তা) যেসব বাড়িতে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে থাকেন সেগুলোতে কোন অভিযান চালাতে কখনও দেখিনি। এভাবে এই চক্র প্রতিমাসে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে। নাম প্রকাশে নাসিক ৭নং ওয়ার্ড এলাকার অনিচ্ছুক কয়েকজন বাড়ীর মালিক বলেন, নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছি। আমরা চাইনা অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করতে। কিন্তু বৈধ ভাবে সংযোগ দিতে না পারায় বাধ্য হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দালাল ঠিকাদারদের মাধ্যমে লাইন সংযোগ নিয়ে গ্যাস ব্যবহার করছি। মাসে মাসে তারা এসেই বিল নিয়ে যান। স্থানীয় সচেতন মহল জানায়, সরকারিভাবে গ্যাস সংযোগ দেওয়া নিষিদ্ধ থাকলেও সরকারের সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এখনো গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। গ্রাহকদের কাছ থেকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছে এসব অপকর্ম। বর্তমান কাউন্সিলর সাহেব পাস করার পর কিছু  প্রভাবশালী তার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে তার লোকজন পরিচয়ে এসব অবৈধ গ্যাসের ব্যবসা করে যাচ্ছে। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কমপক্ষে ছয় হাজার ফুট বিতরণ লাইনের মাধ্যমে চোরাই পথে প্রায় শতাধিক বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া যায়। প্রতিটি বাড়ি থেকে গড়ে এক লাখ টাকা করে নিলেও কোটি টাকার উপরে পকেটে চলে যায় সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের পকেটে। অথচ, এই কাজ করতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। ফলে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার জন্য গ্যাস চুরি একটি সহজলভ্য মাধ্যম হিসেবে পরিণত হয়েছে। এই কারণে গ্যাস চুরির ক্ষেত্রে চোরের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। অবৈধ গ্যাস লাইন পরিদর্শন করে দেখা যায়, অবৈধভাকে নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি গ্যাস লাইন থেকে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরণের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে যেতে পারে, যেটা বড় ধরনের ট্রাজেডিতে রূপ নিতে পারে নাসিক ৭নং ওয়ার্ডে। এ বিষয়ে কথা বলতে নাসিক ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খান রিপন এর মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আসলে পুরো ওয়ার্ডজুড়েই আমার লোক। কারন আমি ১৭ হাজার ভোটারের প্রতিনিধি। আমি কোন অপরাধকে প্রশ্রয় দেইনা। সমাজে অনিয়মগুলো সেই বহুকাল পুর্ব থেকে চলছে। আপনার কাছে তথ্য দিয়ে থাকলে আমি তা সরেজমিনে এসে দেখুন এবং জানুন যারা এ অপরাধগুলো করছে তারা আমার লোক কিনা। আমি প্রয়োজনে তিতাস কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন এবং জানুন কোনটা বৈধ এবং কোনটা অবৈধ সংযোগ সেটা একমাত্র তারাই বলতে পারবে। এছাড়াও অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ তিতাসের উপমহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকৌশলী মো: মফিজুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, এর আগেও ২০২২ সালে নাসিক ৭ নং ওয়ার্ডের কদমতলী মধ্যপাড়া প্রধান মসজিদ থেকে দক্ষিন দিকে অন্তত ১’হাজার ফুট রাস্তার মাঝখান দিয়ে অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ দেওয়া নিয়ে কদমতলী এলাকায় ১০’লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাতের আঁধারে অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ দিতে মজিবর খানের বাড়ির বিদ্যুতের সার্ভিস লাইন কেটে ফেলার প্রতিবাদ করায় প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগে কাউন্সিলর রিপনের দুই ঘনিষ্ঠ জনের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা হয়। তখন ঘটনাস্থলে যাওয়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই শওকত জামিল বলেন, রাস্তা কেটে গ্যাস লাইন সংযোগ ও মজিবর খানের বাড়ির বিদ্যুতের সার্ভিস লাইন কেটে ফেলার সত্যতা পাওয়া গেছে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা