আজ সোমবার | ১১ আগস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৬ সফর ১৪৪৭ | রাত ৯:০৭

দালালদের নিয়ন্ত্রণে তিতাস! অবৈধ গ্যাস সংযোগের হিড়িক

ডান্ডিবার্তা | ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট চাষাড়া বালুর মাঠে অবস্থিত তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জ ও কায়েমপুর ফতুল্লা আঞ্চলিক কার্যালয় এখন দালালদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রতিটি থানা এলাকায় স্থানীয় দালাল ও তিতাসের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে দেদারছে দেওয়া হচ্ছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ।আর এতে বাড়ছে প্রাণহানীর ঝুঁকিও সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। এই অবৈধ সংযোগ থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে তিতাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রতিমাসে বিল বাবদ হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ২০১০ সালের ১৩ জুলাই থেকে সকল পর্যায়ে আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করা হলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ও দালালদের মাধ্যমে অসাধু কর্মকর্তারা এসব সংযোগ দিয়ে থাকেন। এলাকাবাসী জানান, রাতের আধারে এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় দালাল ও তিতাসের অসাধু কর্মকর্তারা। অবৈধ সংযোগ দিতে অসাধু কর্মকর্তারা ১ থেকে দেড় লাখ টাকা টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন। আর বিল হিসেবে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে যে টাকা নেয়া হয় তার পুরোটাই যায় তাদের পকেটে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আবার সংযোগ দেওয়া হয় তিতাসের সেই অসাধু কর্মকর্তা ও দালাল চক্রের মাধ্যমে। প্রতি মাসে ঠিকঠাকমতো টাকা দিলে সংযোগ কখনো বিচ্ছিন্ন করা হয় না। তবে বাকী পড়লেই অভিযান চালিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। রাতের আঁধারে অদক্ষ জনবল দ্বারা গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কারণে ঝুঁকিতে থাকে আশপাশের বাড়ির লোকজন। যেকোনো সময় অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এমনকি ঘটতে পারে ভয়াবহ প্রাণহানির ঘটনা। আর এই সকল অবৈধ সংযোগের কারণে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস লিকেজ হয়েও অগ্নিকাÐের মতো ঘটনা ঘটছে। অনুসন্ধানে পাওয়া যায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সবচাইতে বেশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে ফতুল্লায়। এলাকাবাসী জানায়,চাষাড়া বালুর মাঠের গ্যাস অফিসের পাশে কথিত ঠিকাদার পারভেজ, সুমন, ফতুল্লার কুতুবপুর এলাকার নামের আগে পদবী রয়েছে গ্যাস সাইফুল, গ্যাস মিজান, গ্যাস স্বপন,গ্যাস গিয়াস উদ্দিন, ফতুল্লার আলিগঞ্জ, সেহাচর, দাপা এলাকায় রয়েছে সেন্টু, দুই ভাই সিলেটি গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী, শামসুদ্দিন চৌধুরী, সেহাচর তক্কার মাঠে এলাকার গ্যাস বাবুলসহ একটি বিরাট সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের এই সিন্ডিকেট পুরো ফতুল্লায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তিতাস গ্যাসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করে এই সিন্ডিকেট একের পর এক রাতের আঁধারে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে এবং হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। একাধিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখা গেছে এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা হচ্ছেন তথাকথিত কন্টাকটার পারভেজ, সুমন ও গ্যাস মিজান এদের নেতৃত্বেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে আসছেন উক্ত সিন্ডিকেটটি। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন সিন্ডিকেটের মূল হোতা এই পারভেজ ও সুমনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসলে অবৈধ গ্যাস সংযোগের আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে এবং এই অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ হবে বলে তাঁরা মনে করেন। এদিকে হাজার হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে যারা বৈধভাবে বিল দিয়ে গ্যাস ব্যবহার করছেন তারা রয়েছেন গ্যাসের মহাসংকটে। অবৈধ সংযোগের কারণে বৈধ গ্রাহকরা ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছেন না, ফলে তাদেরকে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বোতলজাত গ্যাস কিনে আনতে হচ্ছে। একদিকে তারা গ্যাসের বিল দিচ্ছেন অন্যদিকে টাকার বিনিময়ে বোতল জাত গ্যাস কিনতে হচ্ছে। এটি যাদের দেখভাল করার কথা তাদের তৎপরতা মোটেও চোখে পড়ছে না। কুতুবপুরের পাগলা এলাকার একটি বাড়ির কেয়ারটেকার জানান তাদের বাড়িসহ পাশে তিনটি বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এ জন্য প্রতি মাসে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা দিতে হয়। তিনি আরো জানান, প্রতিমাসের ৮ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে তাদের বিল পরিশোধ করতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক বাড়ির মালিক জানান তার বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এজন্য তাকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়া আশপাশের অনেক বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন রাত ১২ টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত কয়েকজন মিস্ত্রি ও দালাল তাদের নিজস্ব মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ দিচ্ছে। অবৈধ সংযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দালালরা বলেন, সারাদেশেই এভাবে গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে, আমরা দিলে দোষ কি, গ্যাস অফিস ম্যানেজ করেই আমরা গ্যাসের সংযোগ দিয়ে থাকি। আমরা সবাইকে ম্যানেজ করে এই গ্যাস সংযোগ দেই। অবৈধ গ্যাস সংযোগের জন্য নেয়া এসব টাকা তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আমাদের মাঝেই বন্টন করা হয়। এ বিষয়ে কায়েমপুর ফতুল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, পারভেজ, সুমন, মিজান, গিয়াসউদ্দিন এদের নাম শুনেছি এরা কোন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর ঠিকাদার না,তারা কখনো অফিসের ভিতরে আসতে পারেনা বাহিরে ঘোরাঘুরি করে। এই ধরনের দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা তথ্য পেয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যাই, তখন যারা দালালদের মাধ্যমে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে তারা আমাদেরকে জানায়, আমরা জানি বর্তমানে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে কিন্তু দালালরা আমাদেরকে বলে আপনারা সরাসরি অফিস থেকে গ্যাস সংযোগ আনতে পারবেন না, আমরা অফিসকে ম্যানেজ করে আপনাদের গ্যাস সংযোগ দিয়ে দিতে পারব, দেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই অফিসের সাথে কথা বলে আমরা আপনাদেরকে বই এনে দেবো তখন লাইনটি বৈধ হয়ে যাবে। দালালরা সরল সোজা মানুষের কাছ থেকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনা এই মানুষগুলা তারা জানে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে পত্রিকায় টিভি চ্যানেল গুলোতে প্রতিনিয়ত নিউজ প্রকাশ হচ্ছে, তারপরও তারা কেন প্রতারণা শিকার হচ্ছে আমি বুঝে উঠতে পারতেছি না। আমি নতুন এসেছি তারপরও এ পর্যন্ত প্রায় ২৬০০ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। প্রায় ৫০ টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিল ও বিভিন্ন কারণে বিচ্ছিন্ন করেছি। তারা দেখছে এ ধরনের অভিযান প্রতিনিয়তই আমরা করছি, তারপরও মানুষ যেনে শুনে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে অবৈধ সংযোগ বাড়িতে নিচ্ছে। আমরা অনেক সময় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযানে গেলে এলাকাবাসীর তোপের মুখেও করতে হয়,তখন আমরা থানা পুলিশের সহযোগিতা নেই, তখন আমরা দালালদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাইলেও থানা পুলিশ গরি মুশি করে। তাই আমি এডিশনাল এসপি সাহেবের সাথে কথা বলেছি তিনি আমাদের বলেছেন আপনারা যখন থানায় যাবেন আমাকে জানাবেন আমি থানায় বলে দেবো। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে ফতুল্লায় যত অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে আমরা তা বিচ্ছিন্ন করে দেবো।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা