আজ সোমবার | ১১ আগস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৬ সফর ১৪৪৭ | রাত ৯:১৩

যাদের কারণে হকারদের এত সাহস!

ডান্ডিবার্তা | ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট দীর্ঘদিন পর ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী একত্রে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জকে হকার ও যানজট মুক্ত করা হবে। দুজনই চান হকার ও যানজটমুক্ত হোক নগরী। তবে, দুজনের দুই বিশ^স্ত অনুসারী নিজ¦ নিজ¦ স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে বারবার শামীম ওসমান ও আইভীকে পিছনের দিকে টানেন বলে দাবি নারায়ণগঞ্জবাসীর। এ দুই বিশ^স্ব অনুসারী হলেন জাকিরুল আলম হেলাল ও ফয়জুর রহমান রুবেল। অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কে হকারদের শেল্টার ও তাদের যত বিচার আচার সবই করে থাকেন জাকিরুল আলম হেলাল। তিনি মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ হকার্স লীগের উপদেষ্টাও। হকার নেতা খ্যাত রহিম মুন্সী, আসাদ, সিরাজ, পলাশ, সোহেল সহ সকল হকার নেতারাই তার আশির্বাদ পুষ্ট বলে জানা গেছে। শামীম ওসমানের যে কোনো সভা সমাবেশে এই হকার নেতাদের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক হকার নেতাকর্মী উপস্থিত করেন জাকিরুল আলম হেলাল। মূলত এ কারণেই পেছন থেকে হকারদের নেতৃত্ব ও শেল্টার দেন হেলাল একথা জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হকার। এই হেলাল ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এছাড়া, প্রয়াত গোলাম সারোয়ার ও শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভুইয়া সাজনুর ভাই তিনি। হেলালের কারণেই মূলত শামীম ওসমান বারবার হকারদের পক্ষে অবস্থান নেন বলেও দাবি সচেতন মহলের। তাদের মতে, এবার শামীম ওসমানও মনে প্রাণে চাইছে হকারমুক্ত নগরী গড়তে। তবে, শুধুমাত্র এক হেলালের কারণে তিনি বারবার পিছ পা হচ্ছেন। এক হেলালের জন্য নগরবাসীকে আবারো জঞ্জালের মধ্যে রাখা ঠিক হবে না শামীম ওসমানের। তার মতো নেতার উচিত, এ ধরনের টাউট (হেলাল) কর্মী-সমর্থকদের দুরে সরিয়ে রাখা। অপরদিকে, দিগু বাবুর বাজারের ইন্সটিটিউট সড়কটি লিজ নিলেও পুরো মিরজুমলা সড়ক দখল করে মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ফয়জুল ইসলাম রুবেলে বিরুদ্ধে। এছাড়া, গত কয়েকবছর ধরে রুবেলই ঐ সড়কটির ইজারাদার হওয়ায় সিটি কর্পোরেশনের টেন্ডার কার্যক্রমও নিয়ে প্রশ্ন উঠে বারবার। রুবেল নিজেকে নারায়ণগঞ্জ শহর যুবলীগের কার্যকরী সদস্য পরিচয় দিয়ে থাকেন। মেয়রের ছোট ভাই আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বলের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অর্থের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগীতার দায়িত্বে থাকেন এই রুবেল। কথিত আছে, মূলত আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বলের হয়ে বাজারে দেখাশোনা করেন তিনি। সামনে থাকেন রুবেল আর পেছনে কলকাঠি নাড়েন উজ্জ্বল। এই রুবেল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর বেয়াই। মেয়রের আরেক ভাই আহাম্মদ আলী রেজা রিপনের শ্যালক। জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা প্রয়াত আমিনুল ইসলাম সেক্রেটারীর ছেলে তিনি। অনুসন্ধানে জানা যায়, মীর জুমলা সড়ক দখল করে প্রায় চার থেকে পাঁচশ চটি বা চকি বসানো হয়েছে। এসব চকির মধ্যে ছোট চকিগুলো থেকে গড়ে ৮০০ টাকা হিসেবে তিন শিফটে প্রায় আড়াই হাজার টাকা এবং বড় চকিগুলো থেকে দিনে অন্তত ৫/৬ হাজার টাকা হিসেবে মাসে প্রায় সাড়ে কোটি টাকা চাঁদা তুলতো রুবেল ও তার বাহিনী এমন অভিযোগ ছিলো খোঁদ বাজারের স্থায়ী ব্যবসায়ীদের। আরও জানা গেছে, বছর দুয়েক আগে ফয়জুল ইসলাম রুবেল দেওভোগস্থ পালপাড়া এলাকার তার বাবার পুরোনো বাড়ি ভেঙ্গে সেখানে বিশাল আকৃতির বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। পালপাড়ার বাসিন্দাদের অনেকেই নাম প্রকাশে অনিহা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের প্রাণের ভয় আছে ভাই, তারা অনেক প্রভাবশালী, সিটি মেয়র আইভীর লোক, দয়া করে নাম প্রকাশ করবেন না। এই শর্ত দিয়ে তারা বলেন, এই যে বিশাল আকৃতির বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে তা কেবলমাত্র রুবেলের আয়ের টাকা দিয়ে। আর রুবেলের একমাত্র আয় সড়ক দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বাজার থেকে। সে অবৈধ ঐ বাজার থেকে মাসে কোটি কোটি টাকা আয় করে বলে আমরা জানি। আর এই আয় দিয়েই এ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বলেও তারা জানান। এছাড়া, হেলাল ও রুবেলের বিষয়ে অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের মধ্যে হেলালের অবস্থান ৪র্থ। শাহ নিজাম, সাজনু ও নিপুর পরেই তার অবস্থান। মেয়র আইভীর ঘনিষ্ঠদের মধ্যেও রুবেলের অবস্থান উপরের সারিতেই। মেয়রের দুই ভাইয়ের পরেই রুবেলের অবস্থান। শামীম ওসমানের সভা-সমাবেশগুলোতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করে থাকেন হেলাল। একইভাবে মেয়রের সকল সভা-সমাবেশ বা অনুষ্ঠানেও রুবেলকে সর্বদা মেয়রের আশেপাশেই দেখা যায়। এককথায় বলা যায়, ওসমান পরিবারের সদস্যদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে জাকিরুল আলম হেলালের নাম। একই সাথে চুনকা পরিবারের সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত সকল সংগঠনের (বঙ্গসাথী ক্লাব, চুনকা ফাউন্ডেশন, চুনকার ওরশ মোবারক কমিটি) সদস্য হিসেবে আছে রুবেলের নাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাষাড়া থেকে উচ্ছেদ হওয়া কয়েকজন হকার জানায়, হেলাল ভাইই তো আমাদের সব। প্রেসক্লাবের আয়োজনে মেয়র ও দুই এমপি বসে যখন সিদ্ধান্ত নিলেন হকার বসবে না। তারপর দিন হেলাল ভাইয়ের পরামর্শেই আমরা শামীম ওসমান এমপি সাহেবের সাথে শিল্পকলা একাডেমীতে যোগাযোগ করি। হেলাল ভাই যখন আছে, তখন আমাদের কিছুই হবে না বলেও দাম্ভিকতা প্রকাশ করে তারা। তারা আরও বলে, শোনেন নাই এমপি সাহেব গতকাল বলেছে ওমরাহ হজ¦ থেকে এসেই একটা ব্যবস্থা করবে আমাদের। মীরজুমলা সড়ক থেকে উচ্ছেদ হওয়া সবজি বিক্রেতাসহ অন্যান্য হকারদেরও একই দাবি। তারা বলছে, রুবেল ভাই থাকতে আমাদের কোনো চিন্তা নেই। নগরীর কোনো সড়কে কোনো হকার না বসলেও এই সড়কে তথা বাজারে আমরা বসবোই। রুবেল ভাই তো আর অন্য কেউ না, মেয়রেরই আত্মীয়। তাই মেয়র মহোদয় নিশ্চয়ই রুবেল ভাইয়ের কথা ফেলতে পারবে না। এদিকে, নগরবাসী বলছে, দীর্ঘদিন পর ভাই-বোন (শামীম-আইভী) একসাথে বসে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে, এখন যদি তাদের নিজ নিজ অনুসারীর জন্য লাখো নগরবাসীর চিন্তা তারা না করেন তাহলে তা হবে অমানবিক। অনুসারী তথা চামচাদের জন্য তারা যদি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তাদেরও একদিন জনগনের বিচারের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে বলে আমরা বিশ^াস করি। তাই অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী এই দুই রাজনীতিবীদ কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিবে না বলেও মনে করেন তারা।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা