বেইলী রোডের আগুনে শান্ত’র মৃত্যুতে শোকের মাতমে স্তব্ধ এলাকা
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট বেইলী রোডের আগুনে নারায়ণগঞ্জের শান্ত হোসেন নিহতের ঘটনায় এলাকার শোকের মাতম বইছে। নিহত শান্ত ৩ ভাই এক বোনের সুখের কথা চিন্তা করে ঢাকার বেইলি রোডে গ্রিন কজি কটেজ ভবনে চাকুরী করেন। তার বাবা বিদেশে থাকলেও সংসারে তেমন স্বচ্ছলতা ছিল না। ভাই-বোনের লেখা পড়ার খরচ যোগাতে হোটেলে চাকুরি করতেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বেইলী রোডের ভবনের আগুনে তার সকল স্বপ্ন নিয়ে তাকে চলে যেতে হলো পরপারে। নিহত শান্ত’র মা মাতম করতে করতে বলেন, আমার ছেলে কখনও ভিডিওকলে কথা বলতো না। গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ সে ভিডিওকল দেয়। পরিবারের সবার খোঁজখবর নেয়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি তোমার কিছু হয়েছে? সে কিছু হয়নি বলে ফোন রেখে দেয়। পরে শুনি তার অফিসে আগুন লেগেছে। আহাজারি করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার বেইলি রোডে গ্রিন কজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাÐে নিহত শান্ত হোসেনের (২৩) মা লিপি আক্তার। শান্ত নারায়ণগঞ্জের ভূঁইগড় পশ্চিমপাড়া এলাকার মো. আমজাদ হোসেনের ছেলে। তিনি বেইলি রোডে গ্রিন কজি কটেজ ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় চাকরি করতেন। তারা দুই ভাই এক বোন। বাবা সৌদি আরব থাকেন। তবে তিনি বিদেশে তেমন সুবিধে করতে না পারায় পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে শান্তই সংসারের খরচ বহন করতেন। সরেজমিনে শান্তর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মরদেহ ঘিরে রেখেছেন এলাকাবাসী। এলাকা শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের কান্না যেন থামছে না। তাদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ। মায়ের আহাজারিতে অশ্রæসিক্ত হয়ে পড়েছেন সবাই। লিপি আক্তার বলেন, আমার ছেলে অনেক ভালো। সবসময় হাসি-খুশি থাকতো। পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে চাকরিতে যোগ দেয়। তার বাবার পাশাপাশি সে সংসারের খরচ যোগাত। ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ বহন করতো। আমার ছেলে আর রইলো না। আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো। আমাকে কে স্বপ্ন দেখাবে। তার বাবাও শেষবারের মতো ছেলেকে দেখার সুযোগ পেলো না। শান্তর ভাই প্রান্ত হোসেন বলেন, রাতে মোবাইলে দেখি ঢাকার বেইলি রোডে আগুন লেগেছে। তখনই আমার হৃদয়ে নাড়া দেয় আমার বড় ভাই তো সেখানে চাকরি করে। আমি সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়ের মোবাইলে কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। পরে তার সাথের একজনকে ফোন দিলে পুলিশ ধরে বলে মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। পরে সকালে মরদেহ নিয়ে বাড়িতে চলে আসি। শান্তর চাচা কামাল হোসেন বলেন, পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছিল শান্ত। সে তার পরিবারের কথা চিন্তা করতো। এখন আর কেউ তার পরিবারের কথা চিন্তা করবে না। কুতুবপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. মাসুদ মিয়া বলেন, এখানে সরকার এবং জনগণের অবহেলার কারণে এ তরুণের মৃত্যু হয়েছে। এটা মেনে নেয়ার মতো নয়। এ সন্তানদের জন্য তার বাবা দেশের বাহিরে রয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।