কুতুবপুরে কথিত ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণে মাদক ব্যবসা
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট ক্রাইমজোন এলাকা হিসেবে জেলাব্যাপি পরিচিত নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন। প্রতিদিনই এ ইউনিয়নে কোন না কোন অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে দীর্ঘদীন ধরে। এবার মাদক ব্যবসার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে কুতুবপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন কথিত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। তাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় কুতুবপুরের সর্বত্র জমজমাট মাদক ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে নামধারী ছাত্রলীগ নেতাসহ বেশ কয়েকজন সদস্য জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি মরনঘ্যাতি মাদকসহ ক্ষমতাসীনদলের বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হয়েছে। অপরদিকে, ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের প্রভাবশালী সাংসদ মাদক নিমূল্যে ব্যাপক উদ্যোগ নিলেও নীজ দলের নেতৃবৃন্দের মাদক ব্যবসার জড়িত থাকার বিষয়টির কারনে তার এমন মহৎ উদ্যোগের সফলতা নিয়েও সাধারন মানুষের কাছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সূত্রমতে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ফতুল্লা থানা শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের সভাপতি রাকিবুল হাসান রকি (২৮)-কে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত রকি কুতুবপুর ইউনিয়নের নামধারী ছাত্রলীগ নেতা লিমন ও ইমরানের ঘনিষ্ট সহচর হিসেবে পরিচিত। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত দত্ত জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রকি দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা কারবারের কথা স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামি বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে রকিকে ফতুল্লা থানা শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের সভাপতি করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেন জেলা কমিটির সভাপতি আল মামুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. নাহিদুর রহমান লাফিজ। এর আগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাখা হয়েছিলো রকিকে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, কুতুবপুর ইউনিয়নের একাধিক স্পটে কথিত ছাত্রলীগ নেতা লিমন ও ইমরানের শেল্টারে দীর্ঘদীন ধরে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছিল মাদকের অন্যতম ডিলার সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া রকিবুল হাসান রকি, মাহিত ওরফে মাহিন, নাইমসহ একদল মাদক ব্যবসায়ী। ক্ষমতাসীনদলের নাম ভাঙ্গিয়ে দীর্ঘদীন ধরে বীরদর্পে মরনঘ্যাতি ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসলেও অতীতে তা অনেকটা গোঁপনই ছিল। সম্প্রতি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ক্ষমতাসীনদলের নেতা রকিবুল হাসান রকি গ্রেপ্তারের পর থেকে একের পর এক কথিত ছাত্রলীগ নেতা ইমরান ও লিমনের অপকর্মের ফিরিস্তি প্রকাশ পেতে শুরু করেছে বলে এলাকাবাসী মন্তব্য করেন। এছাড়াও কথিত ছাত্রলীগ নেতা লিমন ও ইমরানের শেল্টারে কুতুবপুর ইউনিয়নের বৈড়াগি বাড়ি ও ষ্টেশন এলাকায় মাহিম আর তানভির, শাহীবাজার ও নিশ্চিন্তপুর এলাকার রকি ও পলাশ, নুরবাগ এলাকার মামুন ও শুভ, আমতলা এলাকার লিমন, রেললাইন বটতলা এলাকার লিমন, বগা সুমন, সুজন, মাঠা আলা বাড়ি এলাকার রিপন, সজল, শহীদুল, প্যারাডাইস সিটি এলাকার পাগল ইয়াসিন, পেডু রনি, ছিনতাইকার জনি, কালা কাউছার, ভাঙ্গা পুল ও খাজারডেক এলাকার মামুন, বাবু অন্যতম। এসকল মাদক ব্যবসায়ীরা কুতুবপুর ইউনিয়নের একাধিক স্পটে ইয়াবার পাইকারী ও খুৃচরা ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত করে আসছেন। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে মাদক নিমূল্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছেন ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান। এমনকি মাদকমুক্ত নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলার জন্য প্রত্যাশা নামক একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়ে বিশাল সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ মুহুর্তে কুতুবপুরের কথিত ছাত্রলীগ নেতাদের মত জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অপকর্মের হোতাদের চিহ্নিত করার মাধ্যমে দলীয় ব্যবস্থাসহ আইনগত ব্যবস্থা না নেয়া হলে সাংসদ শামীম ওসমানের মাদক নিমূল্যের উদ্যোগ আলোরমুখ দেখবে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসী মনে করেন, মাদক নিমূল করতে হলে এ সকল লিমন ও ইমরানের মত নামধারী নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই সাংসদ শামীম ওসমানের মাদকমুক্ত নারায়নগঞ্জ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে অন্যথায় স্বপ্ন শুধু প্রত্যাশার মধ্যই বন্দী হয়ে থাকবে। এ বিষয়ে কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জসীম উদ্দীন বলেন, দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কুতুবপুরে অনেকেই মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। আর কারা এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে কুতুবপুরের সবাই জানে। আমি কারো নাম বলতে চাই না। আমি বললে সব দোষ আবার আমার উপর চাপবে। তবে, আমাদের সাংসদ শামীম ওসমান মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। সেই যুদ্ধে আমরা অংশীদার হয়ে মাদক নিমূলে সব ধরনের ব্যবস্থা নিব। আর এতে কে বা কাহারা মনক্ষুন্ন হলো তা আমরা দেখবো না। ফতুল্লা মডেল থানার ওসি নূরে আযম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্সে রয়েছি। যে কোন মূলে আমরা মাদক নিমূল্যে কাজ করে যাবো। মাদক ব্যবসায়ী যতই ক্ষমতাবান ব্যাক্তি হউক না কেন আমরা ছাড় দিব না।