
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জে ডায়াগনস্টিক বা ক্লিনিকে ডাক্তারদের চিকিৎসার নামে রোগ নির্নয়ে ‘টেস্ট’ বাণিজ্য নতুন কিছু নয়। যুগ ধরে চলে আসা এই বাণিজ্য দিন দিন বেড়েই চলছে। অপ্রয়োজনীয় টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগও বিস্তর চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। তবে চিকিৎসকরা দাবি করেন, ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক মালিকদের চাপ থাকে তাদের উপর। যাতে রোগীদের টেস্ট বেশি দেয়া হয়। কিন্তু পাল্টা অভিযোগ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে, তারা নিজেদের ইচ্ছেমত ভিজিট বাড়ান এবং রোগীকে টেস্ট দেন। এতে একদিকে অতিরিক্ত ভিজিট ও অন্যদিকে টেস্ট থেকে কমিশন নেন তারা। মাঝে রোগীরা অসহায়। বিশেষ করে নিন্ম ও নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের রোগীদের চাপা কান্না চিকিৎসকের মন গলাতে পারে না। যদিও এই চিকিৎসকদের ভেতর মানবিক চিকিৎসকও আছেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা নগন্য। মোটকথা চিকিৎসার নামে চিকিৎকদের লাগামহীন ভিজিট ও টেস্ট বাণিজ্যের কবলে পড়ে আর্থিক যোগান দিতে গিয়ে নিরাস হয়ে বাড়ি ফেরেন অনেক রোগী। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলায় ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠা ক্লিন ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের চিকিৎসা সেবা নিয়ে সংশ্লিস্টদের তৎপরতা রোগীদের আশ^স্থ করতে পারছে না। যে ভোবে পারছে রোগীর কাছ থেকে ভিজিট ও টেস্ট বাণিজ্য করে যাচ্ছে। অসহায় রোগীরা চিকিৎসক যা করতে বলেন তাই করে। অপ্রয়োজনীয় টেস্ট নিয়ে কোন রোগী বা তাদের স্বজন আপত্তি করলে চিকিৎসক বলেন, আমি ডাক্তার না আপনি? এতে থমকে যান প্রশ্ন করা রোগী বা তাদের স্বজন। নিরবে মেনে নেন কসাইখানার সিদ্ধান্ত। নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহর তলীর বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়া রোগীদের সাথে কথা বলে টেস্ট বাণিজ্য ছাড়াও নানা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। ছোট বা মাঝারী আকারের ক্লিন ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রোগীর পকেট কাটেন খুব সহজেই। কিন্তু বড় বড় নামকরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিত্র আরও ভয়াবহ। চাষাড়া বঙ্গবন্ধু সড়কের আল-হাকীম সেন্টারে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেখানে ডাক্তারদের জমজমাট টেস্ট বাণিজ্য ওপেন সিক্রেট। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আছে মেডিনোভা, মডার্ন, ল্যাবএইড। কেউ কারো থেকে কম যান না। চিকিৎসার নামে রোগীর পকেট কেটে সাবাড় করছেন তারা। এসকল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার খোলে ডাক্তাররা গভীর রাত পর্যন্ত রোগী দেখেন। প্রয়োজন হোক বা না হোক, রোগীর টেস্টের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিশনের লোভে অনেক ডাক্তার নানা পরীক্ষা লিখে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন প্রেসক্রিপশন। এদের বেশিরভাগেরই উদ্দেশ্য থাকে রোগীর কাছ থেকে কিভাবে চিকিৎসা ও টেস্টের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া যায়। কোন কোন ডাক্তার নিজের মনোনীত পপুলার কিংবা অন্য জায়গায় পরীক্ষা না করালে পরবর্তীতে সে রোগীকে আর দেখেন না। অনেক চেম্বারে আবার রোগীর চাইতে বেশি দেখা মিলে ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের। মানহীন কোম্পানির ঔষধ ডাক্তার রোগীর প্রেসক্রিপশনে লিখতে দেশি-বিদেশী নানা প্রকার সামগ্রী উপহার দেন তারা। প্রেসক্রিপশনের বই, ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে দেয়া, মাস শেষে লম্বা খামে কমিশন প্রদান করা, কোন ঔষধ কোম্পানি বছর শেষে ডাক্তারকে বিদেশ ভ্রমনে নিয়ে যায়। আর সে সব প্রলুব্ধতায় মুগ্ধ হয়ে ডাক্তার নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন নিন্মমানের ঔষধ। আবার কোন ডাক্তার কমিশনের লোভে চড়া দামের ঔষুধও লিখছেন দেদাচ্ছে। নগরীর নামকরা পপুলার, ল্যাবএইড, মেডিনোভা ও মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগীরা ডাক্তার দেখিয়ে চেম্বার থেকে বের হলেই কোম্পানির প্রতিনিধিরা প্রেসক্রিপশন নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলে রাখছেন। আবার কখনো ডাক্তার অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন লেখায় বেশির ভাগ সময় ঔষধ নির্ণয় করা কঠিন হয়। অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সিরিয়াল নিতেও ঘুষ দিতে হয়। আবার কারো কারো কাছে অগ্রিম ফি দিতে হয়। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরের বাইরে রয়েছে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মতো শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অনুমোদিতহীন চমকপদক নামে আধুনিক সাজসজ্জায় গড়ে উঠেছে অধিকাংশ চিকিৎসাসেবার প্রতিষ্ঠান। এদের বেশিরভাগেরই উদ্দেশ্য থাকে রোগীদের কাছ থেকে কিভাবে চিকিৎসা ও টেস্টের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া যায়। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিটিস্ক্যান ৪ হাজার টাকা, এমআরআই ৪/৫ হাজার টাকা, প্রায় ২ শত ধরনের রক্ত পরীক্ষা ২০০ থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি পরীক্ষা ৪/৮ হাজার টাকা, এফএনএসি (ফাইন নিডল এসপাইরেশন সাইটোলজি) ১ হাজার টাকা, হিস্টো ৬০০/ ১ হাজার টাকা। সিটি স্ক্যান, ইকো, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ জটিল পরীক্ষাগুলো ডাক্তারের উপস্থিতিতে করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। আর যে ওষুধ দিয়ে টেস্ট করানো হয় সেগুলোও অনেক সময় থাকে মেয়াদোত্তীর্ণ ও জীবাণুতে ভরপুর। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো-পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ অন্যান্য ডায়াগনস্টিকগুলোতে পরীক্ষাগুলোর রিপোর্ট তৈরি করার কথা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের। কিন্তু তা করছেন টেকনিশিয়ান কিংবা ডাক্তারের সহযোগীরা। ডাক্তারের নাম, পদবি সম্ভলিত সিল মেরে তারা নিজেরাই স্বাক্ষর করে রোগীকে সরবরাহ করছেন রিপোর্ট। সে রিপোর্ট ভালো করে না দেখে প্রতিষ্ঠানের নাম দেখে ডাক্তার লিখে দিচ্ছেন ঔষধ। রিপোর্ট দেখার দায়িত্বরত ডাক্তাররা নিজেদের নাম, পদবি যুক্ত সিল তৈরি করে মোটা অংকের টাকায় কিংবা মাসিক চুক্তিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিক্রি করছেন। মোটকথা, মহান চিকিৎসাসেবা এখন টাকা তৈরির কারখানায় পরিনত হয়েছে। জীবন মৃত্যুর মধ্যখানে থাকা মহান চিকিৎসা পেশার অনিয়ম, দুর্নীতি ও বাণিজ্যের লাগাম টেনে ধরতে কঠোর নজরদারীর সাথে চিকিৎসা আইন বাস্তবায়ন জরুরী বলে মনে করছে সচেতন মহল। তদারকির দায়িত্বে থাকা জেলা স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, অনিয়মের কারণে জরিমানা করলেও সংশোধন হচ্ছেনা চিকিৎসা সেবায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. এম এফ মশিউর রহমান বলেন, এসব বিষয়ে যদি কেউ সুনির্দিস্ট অভিযোগ দায়ে করেন তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাবিবুর রহমান বাদল ষোল বছরের স্বৈরশাসনে দেশকে পঙ্গু করে শত দমন পীড়ন আর নির্বিচারে গুলি বর্ষন করে দেড় হাজারের বেশী ছাত্র-জনতাকে হত্যার পরও শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা তার গতি রক্ষা করতে পারেনি। গত বছরের ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার রোষানল থেকে বাঁচার জন্য ছোট বোন রেহানাসহ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আত্মসমর্পণ এতটাই […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯