নারায়ণগঞ্জে ভবনের ছাদের ২টি রেস্টুরেন্টে অভিযান
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের বহুতল ভবনগুলোর ছাদে গড়ে ওঠা একাধিক রেস্টুরেন্টে তদারকি অভিযান চালিয়েছে সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস। এসময় অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি রুফটপ রেস্টুরেন্টের কাগজপত্র দেখতে চেয়ে তা না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অভিযান সংশ্লিষ্টরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরের চাষাঢ়া বঙ্গবন্ধু সড়কের সমবায় মার্কেটের টপ ফ্লোরে অবস্থিত লা ভিস্তা রেস্টুরেন্ট ও পাশের মেডিনোভা হাসপাতাল ভবনের টপ ফ্লরে চাঁদের পাহাড় রেস্টুরেন্টে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে অংশ নেওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নাগরিকদের জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে সতর্ক। দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অযাচিতভাবে বেশ কিছু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সেজন্য আমরা সিটি করপোরেশন নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের এখানে যেসব ভবন আছে, বিশেষ করে যেসব ভবনে একাধিক খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে বা যেখানে আগ্নিকা-ের কোনো ধরনের আশঙ্কা আছে সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। আমাদের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল সাপোর্ট দিচ্ছে। তিনি বলেন, আজ আমাদের চাষাঢ়া নতুন সমবায় ভবনের ওপরে (টপ ফ্লোরে) যে রেস্টুরেন্ট লা ভিস্তা রয়েছে এবং পাশের মেডিনোভা হাসপাতাল ভবনে ওপরে যে চাঁদের পাহাড় রেস্টুরেন্ট রয়েছে, সেখানে গিয়েছি। আমরা দুটি প্রতিষ্ঠানে যাচাই-বাছাই করে দেখেছি, দুটো প্রতিষ্ঠানই নিয়ম বহির্ভূতভাবে টপ ফ্লোরে করা হয়েছে। এদের কাছে যখন আমরা ভবনের নকশা চেয়েছি তারা সেটি দিতে পারেনি। এটা তো একদিকে পরিবেশের বিষয়, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় খতিয়ে দেখা গেল, এখানে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতের যে বিষয় সেখানে নিয়মের বাইরে কাজ করছে। যে খাবার মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে সে খাবার তারা সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় সংরক্ষণ করে। বেশিরভাগ স্থানে যে খাবারের মেয়াদ নেই সেগুলো তারা ফ্রিজিং করে। হিমায়িত করে রাখা এসব খাবার পরবর্তীতে তারা পরিবেশন করে। অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে তিনি বলেন, একটা ভবনের জরুরি বহির্গমণ পথ সেটি সব সময় সচল থাকার কথা। আগুন নেভানোর জন্য যেটা ফায়ার হাইড্রোলিক সেটা বেশিরভাগ স্থানে অচল। বিশেষ করে আমরা লা ভিস্তা ভবনের নিচে দেখলাম সেটা আছে ঠিকই, নিচ থেকে টপ ফ্লোর পর্যন্ত কিন্তু সেটা সচল না। ওইটা ব্যবহার করার যে যোগ্যতাসম্পন্ন লোক তাদেরও সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই ভবনটা নিচে এবং ওপরে দুটি ফ্লোর ব্যবহৃত, বাকিটা পরিত্যক্ত। ওখানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়, আমরা শুনি, কিন্তু ভবনে অগ্নিনিরাপত্তাজনিত কোনো ব্যবস্থা আমরা দেখিনি। চাঁদের পাহাড় রেস্টুরেন্টের অবস্থা আরও খারাপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, একেবারে অবৈধভাবে তাদের প্রতিষ্ঠানটি গঠিত। তাদের লাইসেন্স আছে তিন হাজার স্কয়ার ফিট, কিন্তু ফায়ারের যে ডকুমেন্টস আমরা দেখলাম তাতে সাত হাজার স্কয়ার ফিট। এখানে গরমিল আছে। তাদের অধিকাংশেই গরমিল। তিনি আরও বলেন, আমরা সম্পূর্ণ শান্তভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি বলছি। পরবর্তীতে আমরা আইনি বিষয়ে চেষ্টা করব। প্রথমে বুঝিয়ে আইন মানতে বাধ্য করার যে প্রক্রিয়া সেটি আমরা নিচ্ছি। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক ফখরউদ্দিন জানান, দুটি প্রতিষ্ঠানেই আমরা গিয়েছি দুটি প্রতিষ্ঠানই রুফটপ। রুফ আসলে থাকে যেকোনো দুর্ঘটনায় মানুষ যদি নিচে নামতে না পারে সে ছাদে দিয়ে আশ্রয় নেবে। আমরা দেখলাম চাঁদের পাহাড়ের রুফটপ দখল হয়ে গেছে, এতে করে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কেউ ছাদে এসে আশ্রয় নিতে পারবে না। এটা একটা স্ট্রাকচারাল বিল্ডিং, যার ওপরে নন স্ট্রাকচার কিছু থাকার সুযোগ নেই। এটার ওপরে একটা টিন শেড দিয়ে চাঁদের পাহাড় রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে। এটি আমরা রিপোর্ট করবো। তিনি বলেন, যেসব রুফটপ আছে স্ট্রাকচারের বাইরে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হলো। যদি মানুষ নিচে না নামতে পারে সে ওপরে আশ্রয় নেবে। মানুষ আশ্রয় নিতে না পারলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে এবং সেটি বেইলি রোডের মতই হবে। দুটি প্রতিষ্ঠানেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না বলে আমরা তাদের সতর্ক করেছি। তাদের বলা হয়েছে অচল অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র সচল করার জন্য। চাঁদের পাহাড়, লা ভিস্তাও আমাদের নকশা দেখাতে পারেনি, সেটা দেখলে বোঝা যাবে তাদের নকশায় কী ছিল। অভিযানে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শেখ মোস্তফা আলী, ফায়ার সার্ভিসের নারায়ণগঞ্জের উপ-সহকারী পরিচালক ফখরুদ্দিন, সহকারী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মশিউর রহমান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আলমগীর হীরন, ফুড অ্যান্ড স্যানিটেশন অফিসার শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।