সহজ জয় পেতে চায় প্রার্থীরা
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আগামী ৪ মে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এবারের এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকার ঘোষণা আসায় এই উপজেলা পরিষদে প্রার্থীর অনেক বেশী। একই কারণে নির্বাচন নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারসহ সাধারণ জনসাধারণেরও মধ্যেও রয়েছে একটি ভিন্ন রকমের উৎসাহ। ইতিমধ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক তারা সকলেই দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করে দিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যানার পোস্টার ও ফেস্টুনসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও তারা তাদের প্রার্থীতার বিষয়টি জানান দিচ্ছে। তবে নির্বাচনের সময়সীমা যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে হিসেব-নিকেশ, হচ্ছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্রই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। নির্বাচনে কারা কারা প্রার্থী হচ্ছেন, কার কতটুকু জনপ্রিয়তা আছে, কার মাধ্যমে কি ধরণের সেবা পাওয়া সম্ভব, মোট কথা প্রত্যেকের শুধু বর্তমান বা ভাবিষ্যতই না, অতীত কর্ম নিয়েও চলছে বিচার বিশ্লেষণ। এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে বন্দর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এমএ রশিদ, শ্রমিক নেতা ও বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এমএ সালাম, জাতীয় পার্টি নেতা ও মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ আহমেদ, জাতীয় পার্টি নেতা ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান ও সাবেক বিএনপি নেতা ও বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক দুইবারের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলের নাম উল্লেখযোগ্য। এর বাইরেও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবির মৃধা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও বন্দর উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানুর নামও আলোচনায় আছে বলে জানা গেছে। যদিও এবারের নির্বাচনের দলীয় কোন প্রতীক থাকছে না বলে জানা গেছে। তবুও নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ সদর এবং বন্দরের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের একটি বিশাল ভক্ত ও সমর্থক আছে। তাছাড়া নির্বাচনটি দলীয়ভাবে না হওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় যে কোন নেতা, কর্মী বা সমর্থক তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী যাকে খুশি সমর্থনও দিতে পারবে। এখানে কোন বাধ্য বাধকতা নাই। তাই এই নির্বাচনে কাউকে সাপোর্ট করার বিষয়ে দৃশ্যত সরকার বা দলীয়ভাবে কোন বাধা নেই। অন্যদিকে প্রার্থী হতে চাওয়া ব্যক্তিসহ এখানকার বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন ওসমান পরিবারের আস্থাভাজন হতে না পারলে কিংবা সু-দৃষ্টি না পেলে এখান থেকে নির্বাচিত হওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে। বিষয়টি প্রার্থীদের অনেকটাই বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়ে গেছে স্থানীয় লোকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। এবারের প্রার্থী হতে চাওয়া ব্যক্তিদের তালিকার দিকে নজর বুলালেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে তাদের অভিমত। প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় আছে তাদের মধ্যে আবু সুফিয়ান ব্যতীত প্রায় সকলেই ওসমান পরিবারের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত বলে জানা গেছে। বন্দরবাসী জানায়, বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ রশিদ ওসমান পরিবারের খুবই কাছের লোক হিসেবে পরিচিত। এমনকি ওসমান পরিবারের অনুগত হওয়ার কারণে গত উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন বলে জানা গেছে। তাই এবারও যদি এমএ রশিদকে তারা সমর্থন করেন তাহলে বিষয়টিতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই বলে জানান তারা। তবে গত নির্বাচনের জন্য যেহেতু এমএ রশিদ চেয়ারম্যান হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন তাই এই নির্বাচনের জন্য ওসমান পরিবার হয়তো অন্যকাউকে সমর্থন দিতে চাইবেন বলে অনেক প্রার্থীরও ধারণা। আতাউর রহমান মুকুল বিএনপির নেতা হলেও (বর্তমানে দল থেকে বহিষ্কৃত) ওসমান পরিবারের সাথে তার বেশ সখ্যতা আছে বলে জনশ্রুতি আছে। এমনকি ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে গিয়েই না-কি আতাউর রহমান মুকুলের দলীয় পদবী হারাতে হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। গত দুটি নির্বাচনে এই পরিবারের সাথে সখ্যতার কারণেই তিনি সহজে নির্বাচিত হতে পেরেছিলেন বলে জানান তারা। আর এবার যেহেতু ওসমান পরিবারের বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিতে গিয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন তিনি, তাই এবারও হয়তো ওসমান পরিবার তাকে সমর্থন দিবেন বলে মনে করছেন অনেকে। বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধানও ওসমান পরিবারের বিশ্বস্ত লোক হিসেবে পরিচিত। যদিও গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তে চেয়াম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। কিন্তু ওসমান পরিবার তাদের আরেক বিশ্বস্ত লোক হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টি নেতা দেলোয়ার প্রধানকে সমর্থন দেন এবং দেলোয়ার প্রধান আওয়ামী লীগের এই নেতাকে হারিয়ে নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাদের পক্ষ হতে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলতে শোনা গেলেও এই পরিবারের বিরুদ্ধে তাকে সরাসরি কিছু বলতে শোনা যায়নি। তাই বিশ্বস্ততার পুরস্কার হিসেবে এবং গত নির্বাচনে তাদের সমর্থন না পাওয়ায় পরাজয় বরণ করায় এইবারের নির্বাচনে কাজিম উদ্দিনকেও ওসমান পরিবারের পক্ষ হতে সমর্থন দেওয়া অসম্ভব কিছু নয় বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে। মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী এমএ সালামও ওসমান পরিবারের বিশ্বস্ত লোক হিসেবে পরিচিত। গত সংসদ নির্বাচনেও সেলিম ওসমানের পক্ষে তাকে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে দেখা যায়। তাছাড়া বন্দর উপজেলায় তারও বেশ কিছু সমর্থক আছে। তাই ওসমান পরিবার যদি গাজী সালামকেও সমর্থন দেন তাতেও আশ্চর্য কিছু নেই বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান গত ইউপি নির্বাচনে ওসমান পরিবারের সমর্থন নিয়েই নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানা যায়। একদিকে জাতীয় পার্টির নেতা অন্যদিকে ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে পরিচিত। তাই এবারও তিনি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ওসমান পরিবারের সমর্থন চাইবেন এটাই স্বাভাবিক বলে তার ভক্তদের অভিমত। তাছাড়া মুসাপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনও একজন জাতীয় পার্টি নেতা এবং ওসমান পরিবারের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত। ওসমান পরিবারে সমর্থন থাকায়ই তিনি এখানে ধারাবাহিকভাবে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হতে পারছেন বলে স্থানীয়দের ধারণা। তাই স্বাভাবিকভাবেই তিনি আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে ওসমান পরিবারের আশির্বাদ চাইবেন বলে মনে করেন তারা। এর বাইরেও আলোচনায় থাকা জাতীয় পার্টি নেতা সানাউল্লাহ সানু ও আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবির মৃধাও নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে ওসমান পরিবারের আশির্বাদ চাইতে পারেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করেন, ওসমান পরিবারও কাউকে সমর্থন দেয় কি-না এবং শেষ পর্যন্ত কার মুখে ফুটবে বিজয়ের হাসি তা দেখার জন্য অপেক্ষ করতে হবে ভোটের দিন পর্যন্ত।