আজ সোমবার | ১১ আগস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৬ সফর ১৪৪৭ | রাত ৯:৫৪

মাদকে সয়লাব প্রত্যন্ত অঞ্চল!

ডান্ডিবার্তা | ০৯ মার্চ, ২০২৪ | ৩:১২ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রতিটি পাড়ামহল্লায় মাদক যেন নৃত্য প্রয়োজনী প্রণ্যের মতোই বৈধতা পেয়েছে। ফলে কিশোর, যুবকসহ পুরো জেলায় মাদক সেবির সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৮ লক্ষের বেশি। সূত্র বলছে, জেলার মোট জণসংখ্যার হিসেবে প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ মাদকের সাথে সরাসরি জড়িত। তবে প্রশ্ন হচ্ছে এসব মাদক দেশের বিভিন্ন সিমান্ত পাড়ি দিয়ে কিভাবে প্রাচ্যের ড্যান্ডি ক্ষেত নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় প্রবেশ করছে? আর মাদক কারবারের গডফাদার কারা? অনুসন্ধান বলছে, আইণ-সৃঙ্খলা বাহিনীর নজঁরদাড়ির অভাবে শতাধিক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ধরাছোঁয়ার বাইরে। তথ্য বলছে, পুলিশি অভিযান চালিয়ে ছিচকে কিছু মাদকসেবি ও মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও মূলহোতারা অধরাই থেকে যায়। তথ্য বলছে, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রন করার জন্য গত ১৯ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশে সদর ও ফতুল্লা থানার ৩২ মাদক ব্যবসায়ীর ছবি দিয়ে পোস্টার প্রকাশ করে জেলা পুলিশ। পাশাপাশি ব্যক্তিগত র্সোস ছাড়াও কেউ যদি ধরিয়ে দিতে সক্ষম হয় তাকে আর্থিক পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা করা হয়। কিন্তু গত ৪ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও প্রকাশিত তালিকায় আর কারো নাম যোগ অথবা বাদ পরেনি। এছাড়া তালিকার ৯৫ ভাগ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়নি। এমনকি, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জকে মাদকমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছেন প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান। প্রত্যাশা নামক একটি সংগঠনের ব্যানারে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেন তিনি। এমনকি কাবা শরীফ ছুয়ে নাকি শপথ করেছেন তিনি নারায়ণগঞ্জকে মাদকমুক্ত করতে। অথচ সমাবেশের দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও মাদকমুক্ত সমাজ উপহার দেওয়ার জন্য দৃশত কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন এমন কিছুই লক্ষ্য করা যায়নি। উল্টো জন সমর্থন পেতে সাংসদ শামীম ওসমান মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের নামে তার পদক্ষেপ শুধুমাত্র ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই না বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জবাসী। অভিযোগ রয়েছে, রহস্যজনক কারণে পুলিশের ৩২ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় চিহ্নিত ও বড় মাপের অনেক মাদক ব্যবসায়ীর নাম আসেনি। যেমন ফতুল্লার আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী রুমী, খাদেম ও তার ভাই ফজর আলী, কথিত ছাত্রলীগ নেত ইমরান ও লিমন নামের দুই সহোদর। শহরের চিহ্নিত মাদকের গডফাদার শাহীন ওরফে ডন শাহীন, রনি ওরফে এডভান্স রনিসহ বেশ কয়েকজন চিহ্নিত গডফাদার। জেলা পুলিশের ৩২ তালিকাভূক্তরা হচ্ছেন, শহরের ২নং বাবুরাইলের বাদশা, পাইকপাড়ার শহীদুল ইসলাম ওরফে রুমান, রাজু আহমেদ, মহিউদ্দিন, বেপারীপাড়ার রানা, দেওভোগ পাক্কা রোডের বাদল ওরফে বাদলা ওরফে মকবুল হোসেন, সৈয়দপুর পশ্চিম ফকিরবাড়ির কালা মিয়া ওরফে হামিদ ওরফে কালাই, দক্ষিণ রেলি বাগানের শেখ ফরিদ ও বাদল, থানা পুকুর পাড় রয়েল ট্যাংক রোড রেলি বাগানের কার্তিক চন্দ্র পাল, দেওভোগ আখড়া মসজিদের দিপু, ২নং রেল গেইটে সোয়াদ হোসেন বান্টি, দেওভোগ পানির ট্যাংকির আওলাদ, সৈয়দপুর আলামিন নগরের জাবেদ বেপারী, রেলী বাগানের সালাউদ্দিন, কুমুদিনী বাগানের মাসুদ ওরফে সিআইডি মাসুদ। ফতুল্লার দাপা মসজিদের রিপন কাজী, সেন্টু কাজী, উজ্জ্বল ও লিটন, মাসদাইর গুদারাঘাটের নাদিম ও পারুল ওরফে পারুলী, দাপা ইদ্রাকপুরের মন্টু মিয়া, পারভীন ওরফে নাইট পারভীন, লিটন ওরফে সাইকেল লিটন, মানিক রতন ও লিপু ওরফে ডাকাত লিপু, খোচপাড়ার টিকি মরা লিটন, রাম নগরের রহিম বাদশা, মাসদাইরে হিটলার, মাসদাইরে হান্ড্রেড নাসির, ফাজিলপুরে সানি। তবে এদের মধ্যে লিপু ওরফে ডাকাত লিপু পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে মারা গেছে। এছাড়াও কয়েকজন জেল হাজতে রয়েছে। আর তালিকা ভূক্ত বাকিরা অনেকটা আড়ালে চলে গিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গা-ঢাকা দেয়া কারবারিদের মাদক ব্যবসার নেটওয়ার্ক নষ্ট হয়নি। তারা নানা কৌশলে ওই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মাদক বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশের তালিকা ভূক্ত ছাড়াও ৬০ থেকে ৭০ জন বড়-ছোট মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, শহরের টানবাজার পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার সাখাওয়াত ইসলাম রানা, নুলয়া রোডের মাদক ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন বিটু, টিটু চৌধুরী, রাসেল, মধ্য নলুয়া রোডের রনি চৌধুরী, মিলন চৌধুরী ও হিমেল, নলুয়া রোডের অমি, ভাগিনা শুভ, আলামিননগরের সামাদ, দেওভোগ ভুঁইয়া বাড়ি এলাকার পাপ্পু ও সুজন, দেওভোগ আখড়ার মোমিন, জামতলা এলাকার হারুন, মিরাজ, আরাফাত, মাসদাইর তালা ফ্যাক্টরীর কসাই নাসির, মাসদাইর পাকাপুল এলাকার সুমন, ছোট হীরা, বড় হীরা, পশ্চিম মাসদাইর বড় দিদার, উৎসব, তানজিল, মাসদাইর কবরস্থান এলাকায়, মাসুদ ওরফে ডুবায়ের মাসুদ, সোর্স মাসুদ, জন্টু, ডিএন রোডের বোকরা শাহীন, কিশোর, পোড়া মামুন, খানপুর রেললাইন এলাকার আলম, শাহাআলম, সেলিম, নাছির, কাউছার, ছোট শাকিল, বড় শাকিল, গলাচিপা রূপার বাড়ির মুরগি নাসির, উত্তর মাসদাইর গাবতলীর রনি-১ ও রনি-২, সাদ্দাম, হুদয়, গাবতলীর চিকনা রাসেল, মনির ও বিল্লাল, কাপুইরাপট্টির রকি, রাসেল, উৎস মাসদাইর শেরেবাংলা রোডের আফতাব, মাসদাইর বাজারের মামুন, মাহাবুব, গোটা মামুন, শাসনগাঁও এলাকার মামুন, পশ্চিম মাসদাইরের ফরহাদ খান ও রুহুল আমিন কাকন, পিলকুনীর শেখ সালাউদ্দিন জনি, ভোলাইলের আল আমিন ওরফে রনি, স্বপন, ফাজিলপুরে মামুন ও তোফাজ্জল হোসেন, ফতুল্লা রেলস্টেশন, ব্যাংক কলোনি, এলাকার তুফান, হালিম, সোহেল, বিল্লাল, পিচ্ছি সোহেল, সবুজ, মিন্টু, আজিজ, ডাকাত মোহন, ইয়াবা শাহিন, কালাম, সাগর, চোরা সুমন, আলআমিন, শুভ, টোকাই হানিফ, হান্ড্রেড বাবু ও জাবেদ ছাড়াও কয়েকজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। সূত্র বলছে, জেলার ৭টি থানার প্রতিটি থানায়ই অন্যসব অপরাধ সংক্রান্ত মামলার তুলোনায় মাদক মামলা সংখ্যা দ্বীগুন। আর তার সার্দৃশ্য প্রমান পাওয়া যায় বর্তমানে জেল হাজতে থাকা ১৭শ’ আসামির মধ্যে প্রায় ৭শ’র বেশি হাজতী ও সাঁজা প্রাপ্ত বন্দিই মাদক মামলায় কারাবাসে থাকার বাস্তব চিত্র দেখে। অনুসন্ধান বলছে, মিয়ানমার ও ভারতীয় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রবেশ করা এসব মাদকদ্রব্য বিভিন্ন কৌশলে ট্রাক অথবা বাসে পৌঁছে যাচ্ছে সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগস্থল কাঁচপুর হয়ে মহাসড়কের ৩৬টি রুটে দিয়ে জেলার বিভিন্ন মাদকের মূল হোতাদের কাছে। সূত্র বলছে, এসব মাদক বিভিন্ন পরিবহনের পার্সেল সার্ভিসের নামে মহিলাদের প্রশাধনী পণ্যের ভেতর করে আসছে হাজার হাজার ইয়াবা। এছাড়াও কয়েকটি সার্ভিস বাস যেমন, শ্যামলী পরিবহনের (এসি ও এসি ছাড়া), এনা (এসি ও এসি ছাড়া), সৌদিয়া বিভিন্ন পরিবহনে, সোহাগ, গ্রীন লাইন, বলভ সহ বিভিন্ন ভিআইপি গাড়ি গুলোর চালক ও স্টাফদের হাত করে টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা পরিবহনে কৌশলে মাদক আসে খুব সহজে। তাছাড়া দিন দিন আর কৌশলি হয়ে উঠছে মাদক কারবারিরা। অভিনব কায়দায় পেটের ভেতরে করে ইয়াবা নিয়ে তা গন্তব্যে গিয়ে বায়ু পথে বের করে বিক্রির উদ্যেশে তুলে দিচ্ছেন মাদকের পাইকারদের কাছে। অনুসন্ধান বলছে, পেটে অথবা বিভিন্ন পার্সেলে আসা চালান গুলো ২ হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে তবে লবনের গাড়ি ও বিভিন্ন সার্ভিস বাসে আসা চালান গুলো ২০ হাজার থেকে কয়েক লক্ষ হয়ে থাকে। আর অনেক সময় আইণ-সৃঙ্খলা বাহিনী কৌশলে ছোট এসব চালান আটক করতে পারলেও বড় চালান গুলো প্রশাসনের চোঁখ ফাকি দিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে শহর ও শহরতলিতে। অন্যদিকে, জেলার খুব কাছাঁকাছি বর্ডার কুমিল্লা হওয়াতে খুব সহজেই ফেনসিডিল, গাজাসহ বিভিন্ন বিদেশী মদের ছোট-বড় চালান গুলো জেলায় প্রবেশ করছে। বেশির ভাগ পন্য পরিবহন গুলোতে পণ্যের আড়াঁলে লুকিয়ে আনা হচ্ছে এসব মাদক।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা