ভূমিদস্যুদের দখলে ডিএনডি লেক
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খালের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার অংশের সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশ রক্ষায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) লেক তৈরির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এরই মধ্যে নাসিক ৭নং ওয়ার্ডে লেকের পাড়ের অনেক জায়গা দখল করে কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খান রিপনের নেতৃত্বে দোকান বসিয়েছে অসাধু চক্র ও প্রভাবশালীরা। এসব দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে তারা। এমনকি ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রিপনের অস্থায়ী কার্যালয় বর্তমানে স্থায়ী করে পিলার গেঁথে দালান করে গড়ে উঠেছে লেকের জায়গায়। লেক দখল করে এ স্থানে খাবারের হোটেল, ভাসমান কাঁচাবাজার, ফলের দোকান, বেকারি, সেলুন, কসাইখানাসহ অন্যান্য স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে রিপন অনুসারীরা। এছাড়া সন্ধ্যায় বসানো হয় আরও হরেক রকমের দোকান।এতে চলাচলের রাস্তা ছোট হয়ে গেলে তখন জ্যাম লেগে যায় এ সড়কটিতে। জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিকের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গলাকাটা সেতু থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঙ্গারপুল পর্যন্ত ডিএনডি খালের সৌন্দর্যবর্ধনে ও পরিবেশ রক্ষায় লেক তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য ৬৩ কোটি ৪৮ লাখ ও লেকের ওপর ছয়টি সেতু নির্মাণে ৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। জাইকার অর্থায়নে প্রকল্প কাজের তত্ত্বাবধান করছে নাসিক। এর ঠিকাদারি পেয়েছে মেসার্স উদয়ন বিল্ডার্স।সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্বোধন না হলেও একটু বাতাস ও প্রাকৃতিক পরিবেশের টানে লেকের পাড়ে বিপুল লোকসমাগম ঘটে। সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুল এলাকায় বিকেল থেকে কিছু অস্থায়ী খাবারের দোকানসহ খেলনার দোকান বসে। একটু এগুলেই কদমতলি পুল এলাকায় ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অস্থায়ী কার্যালয়সহ বেশ কিছু দোকানপাট অবস্থিত। তাছাড়া লেকের পাশে সড়কটি সন্ধ্যার পর হকারের দখলে চলে যায়। এতে সড়কে জ্যাম সৃষ্টি হয়।এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, এভাবে দখল বাণিজ্যের ফলে স্কুল কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের যেমনি চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ পথচারী অফিসগামি লোকজনকেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ফজল হাওলাদার, রাশেদ হাওলাদার ওরফে কলকি রাশেদ, আশরাফ, চান্দু, বিএনপির দুধর্ষ ক্যাডার সোহেল, মিঠাই মজিদের ছেলে মাহবুব, ইয়াবা সম্রাট জহির ও তার বিশাল গ্যাং লেকের পাড়ে দোকান বসিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অবৈধভাবে দখল করে ফুটপাতে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি করে গড়ে তুলেছে বিশাল বাহিনী। ইপিজেডের পশ্চিম পাড়ের সিটি কর্পোরেশনের ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে প্রতিদিন ৪/৫ হাজার টাকা, কদমতলীর পুলের ফুটপাত দখল করে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা এবং দোকান থেকে মাসে ২ লাখ টাকা, পানি উন্নয়ন বোর্ড এর সাথে নীট কর্নসান গ্রুপের মামলাধীন জায়গা দখল করে মাসে ১ লাখ টাকা সহ এমনকি রাস্তার পাশে একটি ভ্যান গাড়ি দাড়ালেও ২০, ৩০, ৫০ টাকা পর্যন্ত হুমকি-ধমকি, ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছে। এছাড়া অটো থেকে মাসে ২লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে করছে রিপন বাহিনীর লোকজন। অভিযোগ রয়েছে নাসিক ৭নং ওয়ার্ড এলাকায় কারো জমি-বাড়ি বিক্রি করলে আবার কিনলেও এ চক্রটিকে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। এসব চাঁদাবাজরা সারাদিন এদিক-সেদিক ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যা হলে ফুটপাতের দোকানদারদের কাছ থেকে অভিনব কৌশলে দোকানের কাস্টমার/ক্রেতা সেজে টাকা উঠায়। প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলে। একেক দোকানের জায়গার ভারা একেক রকম। ব্যবসায়ী ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, আমাদের এখানে ব্যবসা করতে হয়, সংসার চালাই, ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখা করাই। তাই চাঁদাবাজদের ভয়ে কিছু বলতে পারিনা, বললে এখান থেকে উঠিয়ে দেবে আমরা কি করমু। আমাদের বাধ্য হয়ে তাদের টাকা দিতে হয়। এখানেই আমাদের থাকতে হবে, আমাদের ছেলে-মেয়ে আছে, আমরা কার কাছে যাবো, প্রতিবাদ করতে গেলে, কোন ধরনের বড় সমস্যা হলে কে বা আমাদের দেখে রাখবে।কদমতলী এলাকার বাসিন্দা নাহিদ জানান, লেকের কাজ শেষে হলে সিদ্ধিরগঞ্জের চিত্রই বদলে যাবে। কিন্তু দিন দিন লেকটি বেদখল করে ফেলছে হকারেরা। উদ্বোধনের আগেই এই অবস্থা, কিছুদিন পর তো বসার জায়গা পাব না। কাউন্সিলর সাহেব স্থায়ীভাবে দালাল করে কার্যালয় বানাচ্ছেন। তার লোকজন দোকান নির্মাণ করছেন। এভাবে চলতে থাকলে এটা তো আর হাতিরঝিল লেকের মতো সৌন্দর্যের লেক থাকবে না। আমাদের দাবি থাকবে তার কাউন্সিলর কার্যালয় সহ সকল অবৈধ স্থাপনা যেন উচ্ছেদ করা হয়।এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, লেকের সৌন্দর্য বিনষ্ট করে কাউকে কোনো কিছু করতে দেয়া হবে না।কাউন্সিলরের কার্যালয়টি কোথায় নির্মাণ করা হচ্ছে সরেজমিনে গিয়ে দেখবো। আর যারা লেকের ওপর দোকান নির্মাণ করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এদিকে ব্যবসায়ী, স্থানীয় ও সাধারণ মানুষ দ্রুত এসব লেক দখলকারী চাঁদাবাজ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে র্যাব-পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।