চিহ্নিত চাঁদাবাজদের দখলেই মীর জুমলা সড়ক
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের আলোচিত ইস্যু বঙ্গবন্ধু সড়ক হকারমুক্ত হলেও আরেক আলোচিত সড়ক মীর জুমলা সড়ক দখলমুক্ত হয়নি। কারণ সেখানকার চিহ্নিত চাঁদাবাজদের পেছনে প্রভাবশালীদের শেল্টার। নগরীর অন্যতম কাঁচাবাজার দিগুবাবু বাজারের প্রধান এই সড়কটিতে দোকান বসিয়ে দিব্বি চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে চাঁদাবাজরা। এই চাঁদাবাজদের কারণে সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে শহরবাসীর ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময় এই সড়ক দিয়ে বাস চলাচল করতো এবং দিগু বাজারের ব্যবসায়ীরা এই সড়কে নিত্যপণ্য মালামাল লোড আনলোড করতো। কিন্তু গত ২০ বছর যাবৎ এখানে সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত অবৈধ বাজার বসিয়ে সড়কটি দখল করে রাখা হয়। একইসাথে রাস্তার সর্বত্রই ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে এই ব্যবসায়ীরা। ফলে এই সড়কটি দিয়ে চলাচল করা নগরবাসীর জন্য অত্যন্ত দুরুহ ব্যাপার হয়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, চাঁদাবাজদের যোগসাজসে সড়কে ময়লা আবর্জনার স্তুপ করে রাখা হয়। সিটি করপোরেশনও নাকে তেল দিয়ে ঘুমায়। যাকে বলে ‘সাক্ষী গোপাল’। তারা ইচ্ছেকৃতভাবে সড়ক থেকে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করে না। এতে ভোগান্তি বাড়ে ক্রেতাদের। গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, আগের মতোই পুরো মীর জুমলা সড়ক দখল করে দোকানপাট বসিয়ে দেদাচ্ছে ব্যবসা করছে হকাররা। মাছ, শাক-শবজি, আলু-পিয়াজ, মুরগীর দোকান বসিয়ে দখল করে রাখা হয়েছে সড়কটি। সেই সাথে দিগু বাবুর বাজারের ব্যবসায়ীরাও তাদের দোকানের মালামাল রেখেছে এই সড়কটিতে। এছাড়া সড়কটির ঠিক মাঝ অংশে ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তুপ। বাজারের বৈধ-অবৈধ সকল ব্যবসায়ীরা তাদের ময়লা-আবর্জনা ফেলে এই স্থানটিকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করে রেখেছে। দুর্গন্ধের কারণে নাক চেপে চলাচল করছে বাজার করতে আসা ক্রেতারা। বাজার করতে আসা শহরের আমলাপাড়া এলাকার আকবর হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়কসহ নগরীরর প্রধান সড়কগুলো থেকে ৯০ শতাংশ হকার উঠে গেছে। ফলে এবার রমজানে নগরবাসীকে যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে না। আবার নির্বিঘেœ ফুটপাত দিয়ে হাটতেও পারছে। কিন্তু মীর জুমলা সড়কের হকার মনে হয় অনেক বেশী শক্তিশালী। যার কারণে তাদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই সড়ক জবর দখল করে বছরের পর বছর একটি চিহ্নিত চাঁদাবাজ চক্র চাঁদাবাজি করে আসছে। তারা ২৪ ঘন্টায় তিনবার চটি (৫ হাত বাই ৫ হাত জায়গা) ভাড়া দেয়। একবার চটি ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। ফলে মোটা অংকের চাঁদাবাজির বাটোয়ার লোভে সংশ্লিষ্টদের সবাই চুপ। কয়েকজন ব্যবসায়ি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধু চটি ভাড়ার নামে চাঁদাবাজির কারণে সবজির দাম অনেক বেশি এই বাজারে। যদি চাঁদাবাজি বন্ধ হতো তাহলে মানুষ ৭০ টাকা, ৮০ টাকার সবজি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে কিনতে পারতো। চাষাড়া বালুর মাঠ এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, দিগুবাবুর বাজারে আসলে বিড়ম্বনার শেষ নেই। দোকানের মালামাল ক্রয় করে সেই মাল নিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। সড়কটি দখল করে রাখার কারণে রিকশা, ভ্যান ঢুকতে বেশ কষ্ট হয়। ফলে প্রথমে লেবার দিয়ে মাল বাজারের বাইরে নিতে হয়, তারপর রিকশা বা ভ্যানে করে মালামাল নিতে হয়, এতে খরচ পড়ে বেশী। সড়কটির হকারদের উচ্ছেদ করে জনগনের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে এই ভোগান্তি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি। আরেক ব্যক্তি বলেন, দুদিন আগে যখন বৃষ্টি হলো, তারপর বাজারে এসেছিলাম। ময়লায় জামা-কাপড় সব নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে পুরো সড়কে ময়লা ছড়িয়ে পড়ে। নাক চেপে ধরেও বাজারের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিলো না, দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। হকার উচ্ছেদ করা হবে বললেও এই সড়কের বেহাল দশার দিকে নজর দেয়ার যেন নেই কেউ। নারায়ণগঞ্জের রথি-মহারথীর চেয়ে বাজারের এই অবৈধ দোকানীরা বেশী শক্তিশালী কিনা এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি। নারায়ণগঞ্জবাসী বলছে, দুই এমপি ও সিটি মেয়রের সিদ্ধান্তে শহরের অন্য সড়কগুলো থেকে হকার উচ্ছেদ করা সম্ভব হলেও এই সড়ক থেকে কেন সম্ভব হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। অবিলম্বে মীর জুমলা সড়ক থেকে হকার উচ্ছেদ করে নগরবাসীকে এই বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দিতে আবারও দুই এমপি ও মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা।