হকার উচ্ছেদে ইউপি চেয়ারম্যাকে মারধর পুলিশের এসআই প্রত্যাহার
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল হক ভূঁইয়াকে প্রকাশ্যে পুলিশের চর-থাপ্পর ও লাঠিপেটার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের দাবি, সড়ক দখল করে ব্যবসা করা হকারদের সরাতে গেলে ভুলতা ফাঁড়ির পুলিশ হকারদের পক্ষ নিয়ে তাকে লাঠিপেটা করেছে। তার অভিযোগ, হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলে পুলিশ সদস্যরা। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার বিকেলে ভুলতা ফ্ল্যাইওভারের নিচে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। ঘটনাস্থল থেকে ভুলতা ফাঁড়ি মাত্র ২০০ গজ দূরে অবস্থিত। ভিডিওতে দেখা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল হক ভূঁইয়াকে লাঠি ও বাঁশ হাতে ঘিরে ধরে রেখেছেন স্থানীয় হকাররা। সেখানে লাঠি হাতে পোশাক পরা কয়েকজন পুলিশ সদস্যও উপস্থিত রয়েছেন। এক পর্যায়ে কয়েকজন হকার চেয়ারম্যানকে পেটাতে থাকেন। পুলিশও সেখানে চেয়ারম্যানকে ধাক্কা দিয়ে কিল-ঘুষি মারেন এবং হাতে থাকা লাঠি দিয়ে বেশ কয়েকবার আঘাত করেন। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভুলতা মোড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি হকারদের দখলে থাকে। এতে মহাসড়কে প্রায় সময় যানজট দেখা দেয়, ভোগান্তিতে পড়েন জনসাধারণ। মাসখানেকও হয়নি স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সম্মিলিত উদ্যোগে মহাসড়ক থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। এতে হকাররা ছিল উত্তেজিত। মারধরের শিকার আরিফুল হক ভূঁইয়া বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ১৫-২০ দিন আগে মহাসড়ক হকারমুক্ত করা হয়। কিন্তু কয়েকদিন ধরে আবারও হকাররা সড়ক দখল করে বসতে শুরু করে। গত শুক্রবার আমি মহাসড়ক দিয়ে হেঁটে যাবার সময় হকারদের দেখতে পাই। তখন এক আখের রস বিক্রেতাকে সড়ক ছেড়ে তার ভ্যানগাড়িটি অন্যপাশে নিয়ে যেতে বলি। এতেই অন্যান্য হকাররাও ক্ষেপে যায়। ভুলতা ফাঁড়ির এসআই বারেক ও উত্তমসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য সেখানে উপস্থিত হয়ে হকারদের পক্ষ নিয়ে আমাকে মারধর করতে থাকে। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি তারা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। ভুলতা ইউপির তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আরিফুল হক রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগেরও কার্যকরী সদস্য। তিনি বলেন, “ভুুুলতা এলাকায় হকারদের কাছ থেকে প্রতিমাসে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা ওঠে। এর বড় একটি অংশ পায় পুলিশও। এই কারণে পুলিশ হকারদের পক্ষ নিয়ে এমনটা করলো। আমি তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করি। শুধু পুলিশ কেন, সবাই আমাকে চেনে। জনসাধারণের সুবিধার্থে কথা বলতে গিয়ে পুলিশ আমাকে প্রকাশ্যে যেভাবে পেটালো তাতে তো মনে হচ্ছে, এ যেন পুলিশি রাষ্ট্র।” এই বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন আরিফুল। তিনি লিখিতভাবেও অভিযোগ করবেন বলে জানান। এ বিষয়ে ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “চেয়ারম্যান ও তার লোকজন এক আখের রস বিক্রেতাকে মারধর করলে হকারদের সাথে তাদের হাতাহাতি হয়। পুলিশ সেখানে গেলে চেয়ারম্যানের লোকজনও চড়াও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে দুইপক্ষকেই লাঠিচার্জ করে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।” তবে, হকারদের কাছে থেকে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। এদিকে, এই ঘটনার পর এসআই বারেককে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা। তিনি বলেন, “এক আখের রস বিক্রেতাকে মারধরের জেরে চেয়ারম্যানের লোকজন ও হকারের মধ্যে হট্টগোল হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে উভয়পক্ষকে সরিয়ে দেয়। এসআই বারেক সপ্তাহখানেক হয়েছে সেখানে যোগদান করেছে। সে চেয়ারম্যানকে চিনতো না। এ ঘটনায় তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।” এই ঘটনায় অধিকতর তদন্তের পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান জেলা পুলিশের এ কর্মকর্তা।